বাঁশখালী জনপদ সত্যপ্রকাশে আপোষহীন

বিজ্ঞাপন দিয়ে সাথে থাকুন

test

বীর মুক্তিযোদ্ধা বাঁশখালীর গর্ব ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী চমেক'র সূর্য সন্তান

কজন আলোকিত মানুষ ডাঃ আবু ইউসুফ চৌধুরী, ১৯৭১ সালে তিনি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ১০ তম এমবিবিএস ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। আজ আমরা তাঁর গল্প শুনব। নয়মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তিনি নিজমুখে বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ 

আমি আর মাহফুজ ই মূল ছিলাম। আমার স্কুল ছিল কাজেম আলী স্কুল। চিটাগং কলেজের পাশে। চিটাগং কলেজ হয়ে স্কুলে যেতাম। কলেজের ভাইয়ারা খুব স্নেহ করত। বাংলাদেশে তখন সাড়া জাগানো স্লোগানগুলো বলে বলে আসতাম।  That was the beginning.  ওখান থেকে এসএসসি পাশ করে চিটাগং কলেজে আসলাম। তখন চিটাগং কলেজ হট প্লেস ছিল এবং স্পেশালি আওয়ামীলীগের মুভমেন্টগুলো ছাত্রলীগের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছিল। ছাত্রলীগ ই ওখানে মেইনলি ভূমিকা পালন করছে। 

ওখানে আমি আর মাহফুজ দুজন ই সার্বক্ষনিক কর্মী হয়ে গেছিলাম।  আমার ওয়াইফ, এরা পাঁচ বোন ও এক ভাই। ভাইটি তখন পলিটিকাল সাইন্সে এম.এ। উনি বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা লিখতেন এবং চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগের মনির ভাইয়ের রুমমেট ছিলেন। চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগের দুইজন নেতা ছিলেন যাদের একজন মারা গেছে। তিনি হলেন আতাউর রহমান খান কায়সার, তিনি সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য ছিলেন। আরেকজন হল, মীর মশাররফ। 

ছাত্রলীগের ব্রাঞ্চগুলো করার পরে এবং আওয়ামীলীগের ইলেকশনের পরে আমরা আগেই বুঝতে পারছিলাম যে, এই পাকিস্তান এভাবে টিকতে পারে না।  আমাদের মেডিকেলের খেলার মাঠের পূর্বদিকের পাহাড়ে আমরা পড়ালেখা করতাম, ট্রেনিং এর ব্যবস্থা ও করতাম। তখন আমরা অনেকে ড্রাইভিং শিখছি। তখন ছাত্রলীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক ছিল সাবের আহমেদ আসগরী। ও গাড়ি চালানো শিখেছে তখন। আমিও তখন গাড়ি চালানো শিখছি। It was a part of training. 

ঐ যে, যারা আমরা একসাথে গেছিলাম, সবাই আমরা higher training নিয়ে ওখান থেকে আমরা সবাই একটা গ্রুপ নিয়ে ঢুকছি এবং প্রত্যেকেই যার যার জায়গায় যেমন আমি, বাঁশখালী ও কুতুবদিয়া, ২ টার ই চার্জে ছিলাম। আমার ওয়ার্ড ফিল্ড ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ছিল। ‌অফিসিয়াল পোস্টিং ছিল বাঁশখালী ও কুতুবদিয়া। ওখানে ওটাকে ফ্রি করানো সহ আরও কাজ করেছি। 
We enjoyed our life. 

তখন ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ছিল স্বপন কুমার চৌধুরী। স্বপন আর আমি একসাথে ওয়ার টাইমে ঢুকছি। কিন্তু প্রথম দিনে ই পাকিস্তানি আর্মি অ্যাটাকে পরে যাই। গ্রুপ টা scatter হয়ে যায়। এরপর রাঙ্গুনিয়া এসে আমরা এভাবে মিললাম যে রাঙ্গুনিয়ায় এক বাড়িতে আমরা গেলাম। আমি আর স্বপন একরুমে একসাথে থাকতাম। আমাদের পাশের রুমে কয়েকটা ছেলে ছিল। ওরা আমাদের ওয়ারলেস অপারেট করতো। 

আমি বাঁশখালীতে কমান্ডার ছিলাম। আবু সুলায়মান সজিব সে ঢাকার ডিসি ছিল, পরে কেবিনেট সেক্রেটারি হয় পরবর্তিতে তিনি প্রতিমন্ত্রীও হন। অসুস্থ ছিল সে আনকনশাস ছিল দেখতে গেলাম ইউনাইটেড হাসপাতালে,১৯৭৩ এর পুরো  বিসিএস ব্যাচ ফ্রিডম ফাইটার। আমি একদিন একটা বই পড়ছিলাম নাম "লবঙ্গ বনে ঝড়" এরই মধ্যে স্বপন একটি লেখা দেখাল"when you go home you please  us;for their tomorrow we have given our today" এবং জানতে চাইল বলতো লেখাটা কোথায় আছে? আমি বললাম জানি না তো। তখন সে বলল এটা  ফরাসি বিপ্লব এর পর শহীদদের স্মরনে বানানো স্মৃতিসৌধে লেখাটা আছে। তখন আমি স্বপনকে বললাম, স্বপন ভাই আমি যদি যুদ্ধে মারা যাই যদি ফিরতে না পারি আপনি নতুন প্রজন্মকে এই কথা বলবেন আর আপনি ফিরতে না পারলে আমি বলব। বিলিভ মি এর ৪ ঘন্টা পরই আমাদের ৫ জনের মধ্যে ৪ জনই মারা গেল শুধু আমি একা ফিরে আসি, এটাই মুক্তিযুদ্ধ। আর এটাকে এখন একেক জন একেক ভাবে ব্যবহার করছে। আমার জন্ম চিটাগাং এর বাঁশখালিতে ১৯৪৯ সালে। ডুংরা ফ্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করি। এরপর ১৯৬৫ তে এসএস সি পাস করি কাজেম আলী হাই স্কুল থেকে, এরপর ভর্তি  হই চট্টগ্রাম কলেজে। তখন থেকেই ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলি।এরপর ভর্তি হই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। থাকতাম বয়েজ হোস্টেলের ৩ তলায় ১৯-বি তে। মেডিকেলে তখন দুটো রাজনৈতিক দল ছিল একটা অগ্রগামী আর একটা ডিএসএফ। অল্প দিনের ভিতরেই আমরা মেডিকেলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করি মাত্র ২০ জন কর্মী নিয়ে। আমাদেরই এক সিনিয়র ডাঃ সফি ভাই যার সাথে আমরা রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা করতাম। মেডিকেলের ফাইনাল ইয়ারে থাকা কালীন সময়ে যুদ্ধে যাই।। বর্তমানের সন্ধানীর অফিস ছিল আমাদের যুদ্ধের কন্ট্রোল রুম। মূলত ছাত্রলীগই এর কন্ট্রোল করত।  হঠাত একদিন কন্ট্রোল রুমের বেতার চলে গেল সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম কালুরঘাট যাব। আমি, মাহফুজ, বেলায়েত আর হারুন গেলাম। হারুন গাড়ি চালাচ্ছিল। গিয়ে দেখলাম বেতার অফিসে কেও নেই, দারোয়ান আছে তাকে ধরে নিয়ে আসলাম। সে নিয়ে গেল ইঞ্জিনিয়ার এর বাসায় তাকেও ধরে নিয়ে আসলাম। আমাদের কারো কাছেই রেডিমেড টেপ ছিল না। টেপ দিলেন তখনকার বোয়ালখালির এমপি ডাঃ মান্নান। ওটা প্রথমে চালালাম তারপর প্রথম কথা বলল বেলায়েত সে ইংলিশে কথা বলল তারপর মাহফুজ তারপর আমি। আমরা দুজন বাংলায় কথা বললাম। যুদ্ধের পর এই কথার একটা টেপ বের করা হয় যেটা অনেক বছর বিজয় মেলায় বিক্রি হয়।

চারদিক থেকে লোকজন পালিয়ে আসতে লাগল। আর্মি থেকেও লোকজন আসতে লাগল তারা আমদের গোপন খবর দিত আমরা তা গেরিলাদের দিতাম।সাবের আজগরি (তখনকার ছাত্রলীগ এর সাধারণ সম্পাদক) সহ আমরা কয়েক জন কিছু আর্মস  লুট করেছিলাম পাহাড়তলি থেকে। সেগুলো সিডিএ এর এক পরিচিতর বাসায় রাখি। তারপর যুদ্ধে গেলাম। পিছু হটলাম কালুরঘাট হয়ে বোয়ালখালী হয়ে আসার সময়ে এক স্কুলে দেখা হয়ে গেল জিয়াউর রহমানের সাথে। এরপর আমরা পটিয়ার রাহাত আলী স্কুলে চলে গেলাম। একদিন দু রাত থাকলাম। এরপর প্লান করলাম সবাই ভারত চলে যাব। যেই কথা সেই কাজ পটিয়া দিয়ে বর্ডার পার করে ভারতের সাবলং চলে গেলাম। অইখানে ওরা আমাদের স্কুল কলেজে জায়গা দিল। এরপর অইখানে গিয়ে পরিচয় হল মুক্তার আহমেদের (তখনকার জেলা ছাত্রলীগ এর সভাপতি) সাথে। উনার সাথে কথা বলে বললাম ভাই বসে না থেকে নিজেরা কিছু করি। সবাই একমত হলাম আবার দেশে ফিরে এলাম। আশ্রয় নিলাম এমইএস কলেজে।

মোক্তার আহমেদ,উনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ছিলেন। এগুলা উনাকে বললাম যে,"মোক্তার ভাই,এখানে আমরা বসে থেকে আমরা কি করবো? এখানে তো কিছু শুরু হয় নি। চলুন,আমরা নিজেদের সামর্থ্য দিয়ে পাকিস্তানি ঠেকাই। আমাদের ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা হলে আমরা আবার চলে আসবো,থাকা -খাওয়া তো আমাদের কোনো চিন্তা নাই। আমাদের ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা হলেই চলে তবে আমরা চলে আসবো।" উনি এগ্রি করলেন।

কয়েকজন মিলে চিটাগাং ব্যাক করলাম। ব্যাক করে চিটাগাং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পর্যন্ত আসছি। দেখি এদিক দিয়ে কিছু লোক যাচ্ছে। উনারা আমাদের পথে বাধা দিয়ে বললেন,"এদিক দিয়ে যাবেন না।" কারণ তখন ওই সময় আব্দুর রব ছিলো চিটাগাং কলেজের জিএস। আমাদের ছোটো ভাইয়ের মতো,খুবই ভালো একটা ছেলে। He was a very good politician. ওকে মেরে ফেলেছিলো আর্মিরা। আর্মি ওখানে এম্বুস বসাইছিলো। তখন আমার সাথে মোক্তার ভাই ছিলেন। এ কথা শুনে,উনি আমাদের নিয়ে বোয়ালখালি এমন একটা জায়গা দিয়ে পাড় করাইছেন,যেখানে পাকিস্তানি আর্মি কখনোই যেতে পারে নি(এমনকি লিবারেশন এর পরেও না)। পরে উনার বাড়িতে গেলাম।বাড়িতে ভাবি ছিলো। তারপর আমরা ঠিক করলাম,নিজের স্বার্থে একটা গ্রুপ দাঁড় করাবো। দাঁড় করাতে করাতে ওখানে সাতকানিয়ার সালেহ ভাই ছিলেন,উনি চলে আসলেন। উনি আমার বাড়িতে উঠলেন। তারপর আমরা কাজ শুরু করলাম বানিরগাঁও নামক হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাকে কেন্দ্র করে। প্রথম হতে যখন ইলেকশন এর ক্ষমতা দিচ্ছিলো না,তখন আমরা ভয় পাচ্ছিলাম। তখন বাংলাদেশের ১০০ভাগ সবাই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। তখন নেতা বলেন,অমুক বলেন,সবাই মুক্তিযুদ্ধের ট্রেইনিং নেয়া শুরু করছে। কিন্তু ঠিক সেই মুহুর্তে পাকিস্তানি আর্মিরা একটা পর্যায়ে বিভিন্ন এলাকা কন্ট্রোল স্টাবলিশ করতে শুরু করে দিসে। আমরা যখন দেশের বাইরে চলে আসছি,তখন আস্তে আস্তে নতুন যেগুলা ছিলো,তখন সবাই সবার স্বরুপে বের হয়ে আসছে।মুসলিম লীগ,জামায়াত,ছাত্রসংঘ সবাই নিজের পরিচয় নিয়ে বেরিয়ে আসছে।তখন আমরা মনে করছিলাম,এরা দাঙ্গা লাগায় দিতে পারে। এইজন্য আমরা এগুলা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আমাদের মেইন কাজ ছিলো গ্রুপ ফর্ম করা। কয়েকদিন পর মোক্তার ভাই বললেন,"ভাই আমি চলে যাবো"। পরে উনি দেমাগিরি দিয়ে ভারতে চলে গেলেন।পরে আমি আমার লোকজন যা হইছিলো(১৫-২০জনের মতো),একটা গ্রুপ করে ফেললাম।একটা,দুইটা,তিনটা,চারটা অপারেশন করি। তারপর সাহস বেড়ে গিয়েছিলো আস্তে আস্তে।

ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরীর অপারেশনের স্টোরি:
ঘটনা-১: ফটিকছড়ির জুগগেছল নামে একটা জায়গা আছে। আমরা ওখানে গেলাম।আমরা তখন সারারাত হাটতাম। দিনে বের হইতাম না। কারণ প্রয়োজনীয় বহনী যেমন:আমার উইপন, গোলাগুলি যা দরকার হবে এবং আমার গ্রেনেডস,আমার কাপড়-চোপড় সব আমাকে বইতে হতো। আমাদেরকে চাকমারা অনেক হেল্প করছে।ওরা আমাদের জিনিসপত্র গুলা বইতো এবং ওদের ঘরে আমাদের জায়গা দিতো। পুরা ৯মাসে যেখানে গেছি,ওদের বাড়ির সবচেয়ে ভালো খাবারটা খাইছি আমরা। it' a wonderful একটা জিনিস যে,আমরা একটা বাসায় গেছি,ওদের বড়ো মুরগিটা আমাদের জন্য জবাই করে দিসে। এমনও হইছে কোনো বাড়িতে খাওয়া নাই,যা আছে তা খাইতে হবে। চাল-ডাল যা পাইছি তা সিদ্ধ করে খাইছি। এখন মনে হয় ওইগুলাই মজার খাবার ছিলো।

আমরা তো রাতে হাটতাম,দিনে আমরা শেল্টার নিতাম। শেল্টার নেয়ার আগেই,ওখানে যেহেতু সবাই ট্রেইনড(আমাদের ট্রেইনিংটা খুব সফিস্টিকেটেড ট্রেনিং ছিলো,তান্দুরা ট্রেনিং)। আমরা কোথাও গেলে,প্রথমেই আমরা আত্মরক্ষার ব্যাপারটা ভেবে নিতাম, how to keep ourself safe. কোনো এটাক হলে আমরা কি করবো?আমরা পুরো জায়গাটা দেখে নিতাম। কোন পজিশনটা সুবিধার -এই প্ল্যানিংটা প্রথমেই করে নিতাম। দেন আমরা চিন্তা করতাম অ্যাটাকের কথা,থাকা-খাওয়া পরের চিন্তা। I still remembered-ছোটো একটা পাহাড়ী ঝড়নার পাশে,ওখানে একটা মক্তব বা মাদরাসা (ভাঙা-চোড়া জীর্ণশীর্ন ধরনের)ছিলো যেখানে কয়েকটা ভাঙা টেবিল ছিলো,শন আর বাশের বেড়া-টেরা কি দেয়া, তো ওখানে আমরা বসে আছি। আমরা যার যা ছিলো তা নিয়ে রেস্ট করছিলাম।হঠাৎ একপাশ থেকে এক মহিলা এসে বললো,"এই তোমরা চিটাগাং এর ভাষা বুঝো?"এই মহিলা ওখানকার লোকাল, বললেন,"বাবারা তোমরা আসো,আমার নতুন বাড়ি,একটু ঘুমাও,ওখানে গিয়ে থাকতে পারবা। আমার বাড়িতে তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না"। তো আমরা বললাম,"না,মা।আমরা তো ঠিক আছি,আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না"। বুড়ি তো নাছোড়বান্দা, পরে আমরা গেলাম এবং দেখলাম,হ্যা বাড়িতে নতুন বেড়া,উপরেও শন-তন যা আছে(কেনা না,জঙ্গল থেকে কেনা না,কাইটে লাগাইছে)।তখন স্থানীয় দুইটা কি তিনটা লোক আসলো,বললো যে,"স্যার,আমাদের এখানে বাজার আছে,প্রত্যেক বাজারবারে পাকিস্তানি আর্মিরা এসে লুট করে সব নিয়ে যায়। আপনারা আজকাল একটা এম্বুস বসান(আসলে এতোদিনে ওরাও মুক্তিযুদ্ধের ভাষাটা শিখে গেছে)তাইলে আর পাকিস্তানি আসবে না। আপনাদের কাছে সফিস্টিকেটেড উইপন-টুইপন আছে দেখতেছি"। তো আমি তাদের বসাইয়া বললাম,"দেখেন ভাই,আমরা আপনার এই কাজটা করতে পারবো না,কারণ আমার ডিউটি আছে এক জায়গায়। আমাদের অনেকগুলো কাজ ভাগ করে দেয়া আছে।এখানে লোক চলে আসবে এই কাজ করার জন্য"। তাকে আরোও বললাম যে,"আমাদের কুইক লিবারেশন এর ডিসিশন হয়েই গেছে। আমরা ঢুকে যাচ্ছি আস্তে আস্তে গ্রুপ গ্রুপ করে। প্রত্যেক থানায় ১০জন করে একটা গ্রুপ। I was leading one group"। লোকটা আসলে আমার কথা কিছুই বুঝে নাই।লোকটা মন খারাপ করেই চলে গেলো। লোকটা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই শুনি বাজারে গোলাগুলির আওয়াজ শুরু হয়ে গেছে। আমরা তখন সবাই রেডি হয়ে গেলাম। কারণ এটাই আমাদের প্রশিক্ষণের প্রথম কাজ। সাথে সাথে পজিশন নিয়ে নিলাম। পাকিস্তানি আর্মির সাথে ২-৩ঘন্টা গোলাগুলি হলো আমাদের।ওখানে ওই সময় শুধু অটোমেটিক ফায়ারিং,গ্রেনেড এগুলো ছাড়া কোনো আওয়াজই ছিলো না। ২-৩ ঘন্টার পর দেখি যে,ওরা সাইলেন্ট হয়ে গেছে।আমরা ২০জনের উপর ছিলাম। পরে আমরা দেখি,আমরা সবাই ঠিক আছি। ওরা আসলে পজিশনটা নিয়েছিলো পাহাড়ের উপরে। আমরা ওখানে গিয়ে দেখি রক্ত পড়ে আছে,কোনো ডেড বডি নেই,নিয়ে গেছে ওরা। এরপর ২-৩ঘন্টা পর যখন আমরা আসলাম,সবাই বুড়ির উঠানেই শুয়ে পড়লাম। শোয়ার মানে হলো উঠার শক্তি নেই। পরে কতক্ষণপর দেখি বুড়ি বলতেছে,"বাবা তোমরা খেতে উঠো"।আমি চমকে উঠে মনে মনে বললাম,আরে বুড়ি কয় কি?এই ৩ঘন্টার যুদ্ধের পর এখানে কাকপক্ষীরও কোনো আওয়াজ নেই,পুরো নীরবতা,এর মধ্যে বুড়ি কয় কি!পরে বুড়ি বললো,"খাবার খাবি নাহ্?"পরে গিয়ে দেখি,বুড়ি সবার জন্য পাক করছে কচুর বাকল। উঠান থেকে বাড়িটার কিছু উপরে বিরাট একটা স্তুপ করেছে কচুর বাকলের।ঘরে ঢুকলাম,পরে সবাই খেলাম। পরে as a group leader আমার চোখে পানি চলে আসছিলো। বুড়িটা একদম অশিক্ষিত, একদম গরীব,ঘরে কিছুই নাই। কিন্তু she prepared food for us.পাকিস্তানিরা তখন নিত্য-নৈমিত্মিক ঘটনা হিসেবে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছিলো,কিন্তু বুড়িটা ওর বাড়ি ছেড়ে যায় নি। উনি আমাদেরকে নিয়ে ভাবলেন যে,আমার ছেলেরা যুদ্ধে গেছে,এসে না খেয়ে থাকবে।

ঘটনা-২: আমরা রানিরহাটে ছিলাম। আমাদের মধ্যে একটা বড় গ্রুপ ছিলো(a lot of weapons), আমাদেরকে ওখান থেকে মুভ করতে হবে। কারণ আমরা তো এক জায়গায় বেশি দিন থাকতে পারি না। আমাদের যে গাইড ছিলো,ও আসতেছিলো না। ২দিন হয়ে,৩য় দিনেও যখন আসতেছিলো না,তখন আমরা বড় বড় উইপনগগুলা আন্ডারগ্রাউন্ডে লুকিয়ে ফেললাম। উইজের জিনিস ছাড়া বাকি সব লুকিয়ে ফেলেছি। আমরা যে তিনদিন মুভ করতে পারি নাই,এই খবরটা পাকিস্তানিদের কাছে চলে গিয়েছিলো। তখন আমি আর স্বপন(আমার খুব কাছের মানুষ) একরুমে থাকতাম। তখন চিটাগাং কলেজের জিএস ছিলো ফজলুল করিম,ছোটোভাইয়ের মতো। ও স্বাধীনতার পরে লিবিয়ার এয়ার ফোর্সে  পাইলট ছিলো। ও একদিন এসে বললো,"ইউসুফ ভাই আজকে আমার কটেজে চলেন"। আমি বললাম যে,"আমি ব্যাথা পাইছি,আজকে যেতে পারবো না"। ও স্বপনকেও বলতে বললো,আমি যাতে যাই। তারপর আমি ওর কটেজে গিয়ে থাকলাম। ওইদিন আমি যাওয়ার ৪-৫ ঘন্টা পর আমাদের আস্তানা আর্মিরা ঘিরে ফেলেছিলো। ওইদিন ওখানে আমাদের ৪জন মারা গিয়েছিলো(স্বপন সহ)।আসলে ওইটাই নিয়ম,গেরিলা নিয়মে ৩ দিন থাকার নিয়ম নাই। এই ভুলের কারণেই মরতে হয়েছে ওদের।

আমি তান্দুয়াতে ট্রেইনিং এ ছিলাম(উত্তর প্রদেশে)।আমি সেক্টর ১ এ ছিলাম।প্রত্যেক থানাতে ১০জন ওয়েল ট্রেইনড,ওয়েল এডুকেটেড,লোক দেয়া হয়েছিলো,যাতে ওরা শুধু যুদ্ধ না যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে এডমিনিস্ট্রেশন সামলানোর মতো কাজ করতে পারে।

শেষ পর্যায়ে শত্রুমুক্ত হলেও খুব ইঞ্জয় করতে পারি নাই।আমাদের সবচেয়ে বড় ভয় ছিলো সেভেন ফ্লিট অফ ইউএস আর্মি। পাকিস্তানিদের  স্যারেন্ডার করানোর মূল ভুমিকা ছিলো ইন্ডিয়ান আর্মিদের। ওদেরকে ভয় দেখিয়ে,ডিপলোমেটিক্যালি থ্রেড দিয়ে ওদের স্যারেন্ডার করানো হয়েছিলো। জেনারেল মানেসসো একটা আর্টিকেলে লিখেছিলেন,ওদের যে স্ট্র‍্যান্থ ছিলো,ঢাকায় ওরা আরোও ৬-১২মাস থেকে যেতে পারতো। ওদের স্যারেন্ডার করতে যদি আরোও দুই সপ্তাহ দেরী হতো তবে জাতিসংঘ ও ইন্টারনেশনাল পুলিশ এতে ইন্টারভেন করতো। in that case,আমরা কাশ্মিরি,ফিলিস্তিনিদের মতো অবস্থা হতো। আমরা খবর পাচ্ছি যে সেভেন ফ্লিট আসতেছে। কিন্তু এদিকে আমরা সবাইকে শেষ করে ফেলেছি,থানা মুক্ত করে ফেলেছি,পতাকা উড়াইয়া দিসি,কিন্তু সেভেন ফ্লিট আসলে কি হবে!কারণ হুট করে আক্রমণ করে বসলে,আমাদের মোকাবিলা করার সামর্থ্য ছিলো না। তাই ওদের স্যারেন্ডারটা সবদিক থেকে আমাদের কাভার করেছে। আসল কথা হচ্ছে, বাঙালিদের সাহসী ও দেশপ্রেমের তুলনা হয় না। আমাদের তো কিছুই ছিলো না, আমরা শুধু জীবনটা হাতে নিয়ে দৌড়াইছি, just to give our country, দেওয়ার জন্য লড়ে গেছি in the name of শেখ মুজিবর রহমান।

ডাঃ আবু ইউসুফ চৌধুরী, বাংলাদেশ কে তার আপন ভূখন্ড উপহার দিয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এই অকুতোভয় যোদ্ধাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। 

[তথ্য সংগ্রহ ও সংকলনেঃ  সাদ বিন মেহের, ইফরান চৌধুরী, শামীম, বোখারী, আহমেদ ফয়সাল। সূত্র: বাংলা পিডিয়া।]



[বাঁশখালী জনপদ২৪.কম'র অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।]


কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.