advertisment

advertisment
বিজ্ঞাপন দিন

ব্রেকিং নিউজ

আওয়ামীলীগ পারেনি তরুণদের বুকে টানতে!



আমাদের কোনো নেতা ছিলো না। অবিচারের বিরুদ্ধে, শোষণযুক্ত শাসনের বিরুদ্ধে, অচলায়তনের বিরুদ্ধে, তারুণ্য দুর্জয়, নির্বার, কাউকে করেনা ভয়। ৪৭ বছরের ঘুনেধরা রাষ্ট্রের সংস্কার চাই আমরা। আমরা ব্যাক্তি, সমাজ, গোষ্ঠী, জাতি, রাষ্ট্র, রাজনীতিক, শাসক, জনগণকে দেখিয়েছি রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানটি কার!

পরিবহন খাতের ময়লা পরিষ্কার করতে জেগে উঠেছিলো দেশের কোটি তারুণ্যের হৃদয়। ঘাতক বাসের ধাক্কায় পিষ্ট হয়ে দুই শিক্ষার্থীর অপ্রত্যাশিত মৃত্যু হলে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর কান্ডজ্ঞানহীন মুখের হাসি স্বতঃস্ফ’র্ত একটি আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। ইতিহাস স্বাক্ষী, যা কখনও দেখেনি দেশ। স্বপ্নেও হয়তো কেউ চিন্তা করেনি এমন আলোড়ন। বেপরোয়া গাড়ি চালানো, পরিবহনের ফিটনেস, ড্রাইভারদের লাইসেন্স ইত্যাদি অনিয়মের স্থায়ী সমাধান ছিলো এ আন্দোলনের প্রধানতম উদ্দেশ্য। যেখানে দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের নয় শুধু বরং দেশের বাহিরেও অনেকে ন্যায্য দাবিগুলোর প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। আমাদের আন্দোলন ছিলো দুর্ঘন্ধময় প্রশাসনকে জনবান্ধব করা। মানুষের যাপিত জীবন থেকে আবর্জনার দুর্ঘন্ধ দুর করা।

আমরা কারা? আমরা জনতা। আমরা গড়ব, নতুন বাংলা’। এরকম অসংখ্যা স্লোগান বিবেকের দরজা খোলে দিয়ে বের করেছে আসলে অপরাধী কারা?
অপরাধ কি চোরের? না এর পেছনে অসংখ্যা চাপা গল্প বিদ্যমান?। দোষী শুধু বেকার যুবক, অশিক্ষীত, দরিদ্র ড্রাইভার নয়। এর তালিকায় রয়েছে সংসদ সদস্য, সচিব, শিক্ষাবীদ, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ঘুনে ধরা সমাজের অগণিত ব্যক্তি। রাষ্ট্রের কর্ণধার এবং তাদের পরিবার জনগণের টাকায় সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। কিন্তু বিবেকের কাছে কেউ প্রশ্ন রাখেনি তার গাড়ির ফিটনেস, লাইসেন্স বা সবকিছু ত্রুটিমুক্ত আছে কিনা। আমাদের দেশের বিদ্যমান আইন দিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকলেও যতটুকু আছে তা বাস্তবায়ন হলেও কম নয়। কিন্তু সোনার দেশে সে আইন কে মানে? বাস্তবায়নও কে করবে? রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনি¤œ স্তর পর্যন্ত রাঘব বোয়ালদের কাছে জিম্মী। সবাই সুযোগ সন্ধানী। যার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত স্কুল, কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিপ্লবে উন্মোচন হওয়া রাষ্ট্রের চেহারা।

"এ আন্দোলন একদিনে শুরু হয়নি। এখানে শুধু শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ, মতামত, দাবি পরিলক্ষিত তাও অবাস্তব। দেশের সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন, বুঝেন বা বুঝতে শিখেছেন এমন শিশু থেকে সর্বোচ্চ বয়স্ক নাগরিকের অনেকদিনের অপ্রকাশিত মনের বাসনা ব্যক্ত হয়েছে। তারা চেয়েছেন এমন একটি পরিবর্তনের দাবি উঠুক। বহু পুরনো ময়লার স্তূপ পরিষ্কার হোক। সবাই বুঝেন আইনের শাসন ছাড়া, জননিরাপত্তা ছাড়া, ন্যায়বিচারহীন রাষ্ট্র চলতে পারেনা। স্থিতিশীলতা, শান্তি-শৃঙ্খলাহীন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই আন্দোলনে সবার সমর্থন ছিলো চোখে পড়ার মতো। তাই সপ্তাহ ব্যাপী কর্মসূচিতে চরম দর্ভোগ মাথা পেতে নিয়েছে জনগণ। মানুষ কষ্ট সহ্য করে হেঁটে পথ পাড়ি দিয়েছে। গাড়ির চালক-মালিকরা হেসে লাইসেন্স দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের স্যাল্যুট জানিয়েছে। কিন্তু সবাই মনের অনেকদিনের লুকায়িত জঞ্জাল এভাবে প্রকাশ করতে পারেনি। পেরেছে বর্তমান সময়ের স্মার্টফোন, ফেসবুক, ট্রিট, সেলফি খ্যাত উদিয়মান-স্বপ্নবাজ তারুণ্যের প্রতীকরা। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুকান্তের কবিতার (এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য, বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে, প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য, সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে) বাস্তব রূপ দিয়েছে।"

এটি কারো পক্ষেও নয়, সরকারের বিপক্ষেও নয়। বরং সরকারি দলের অনেকে সমর্থন দিয়েছে। কারণ তাদের জন্যও সমাধানের দাবিকৃত বিষয়গুলো উপকারি। কিন্তু দুষ্কৃতকারী কিছু মহল কোমলমতি শিশুদের আন্দোলনে হামলা করেছে। পুলিশ গুলি, টিয়ার্শেল নিক্ষেপ করেছে। সাংবাদিকদের ক্যামেরা, গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আন্দোলনের প্রতিশোধ স্বরূপ সরকারের মন্ত্রী দ্বয়ের প্রত্যক্ষ মদদে শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়েছে। অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট করেছে। যাতে মানুষের দর্ভোগ পৌঁছায় চরমে। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের পদক্ষেপ নিলেও ধীর গতি বা বিগত দিনের কোটা আন্দোলনের যৌক্তিক দাবি সরকার প্রধানের মেনে নেওয়ার ঘোষণা সত্বেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারুণ্য কারো উপর আস্থা রাখতে পারেনি। স্বাধীনতা যারা দেখেনি তারাই সৃষ্টি করেছে এ ইতিহাস। বাংলাদেশ স্মরণ রাখবে তারুণ্যের এ জয়গান। এর আগে কোটা আন্দোলন ছিলো আরেকটি মাইলফলক।

দেশে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো। সাধারণ মানুষ গণতন্ত্র না থাকলেও শান্তির জন্য আওয়ামী লীগকে স্বাধুবাদ জানাতে শুরু করেছে। কিস্তু পূর্ণ সমর্থন না পাওয়ার অন্যতম কারণ, সুশাসনের অভাব। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সরকারের গুণগান ঘরে ঘরে হবে। কোটা আন্দোলন এবং পরিবহন ইস্যুর আন্দোলনে জন সমর্থন এবং দুই কোটির অধিক তরুণদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অংশগ্রহণকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ আরো মানুষের কাছে যেতে পারতো। কিন্তু তা পারেনি। আওয়ামী লীগ পারেনি তরুণদের বুকে টানতে! কিছু ছাত্রলীগ, যুবলীগের ভ’মিকাও ছিলো মারমুখী। আইন বাস্তবায়নকারী বাহিনীর হামলাও অন্যায়। সরকার দাবি বাস্তবায়নে আরো দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারতেন। কোটা বাতিলের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে পারতেন। দেশের প্রতিটা ক্রান্তিকালে দেখেছি বিরোধী পক্ষ সবসময় উৎসাহ যোগায়। নিজ স¦ার্থ বাস্তবায়নে লিপ্ত থাকে। সেটা বিরোধী পক্ষে যে দলই থাকুক; অভিন্ন। কোটা ও নিরাপদ পরিবহন চাই আন্দোলনেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিছু মহল তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সুশৃঙ্খল ঐক্যবদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। কিন্তু তারা সফল হয়নি। সরকারের দায়িত্ব এসব বিশৃংখলাকারীদের গ্রেফতার করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো দ্রুত পূরণ করে সুশৃংখল, আস্থা ফিরে এনে নিরাপদ ও স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চিয়তা বাস্তবায়ন হোক।


 লেখক: রকিবুল হক সায়েম
 শিক্ষার্থী- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম।

কোন মন্তব্য নেই