বাঁশখালী জনপদ সত্যপ্রকাশে আপোষহীন

বিজ্ঞাপন দিয়ে সাথে থাকুন

test

শিশুর মেধা বিকাশে ধর্মীয়-নৈতিক শিক্ষার আদি প্রতিষ্ঠান পরিবারের বিকল্প নাই

শিশুর মেধা বিকাশে ধর্মীয়-নৈতিক শিক্ষার আদি প্রতিষ্ঠান পরিবারের বিকল্প নাই

মুনির উদ্দিন চৌধুরী
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। জাতীর মানদন্ড টিকে থাকে শিক্ষার উপর ভিত্তি করে। শিক্ষা মানুষের আচরণের ব্যাপক পরিবর্তন করে। বর্তমানে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও আমরা প্রকৃত শিক্ষার অর্জন থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। শুধু শিক্ষায় শিক্ষিত হলে হবে না, আমাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। আর এজন্য শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। নৈতিক শিক্ষা মানব জীবনকে সুশৃঙ্খল করে গড়ে তুলে। নৈতিক শিক্ষা ছাড়া অপরাপর শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রীয় জিবনে সফলতা বয়ে আনতে সক্ষম হবেনা। এটা সত্যি যে, আজকের কোমলমতি শিশুরাই হচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী। তাই ছোট থেকে শিশুদের যে শিক্ষা দেওয়া হয় তারা সেটাই মনের মধ্যে লালন করতে থাকে এবং সেটা তারা সর্বক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়। আর এজন্যই প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা দানের গুরুত্বটা অনেকটা বেড়ে গেছে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবারের যথেষ্ট ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। পরিবার হলো পৃথিবীর আদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখান থেকেই শিশু নৈতিক শিক্ষার হাতে কড়ি লাভ করে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই পড়ানোর সাথে সাথে জীবনকে কিভাবে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করা যায় সেই শিক্ষা দিতে হবে, আর এটাই হচ্ছে নৈতিক শিক্ষা। ছাত্ররা শিক্ষকের কথাকে বাবা মার চেয়ে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকে কারণ এ ক্ষেত্রে মা-বাবা আমাদের দেহ গঠনের যাবতীয় উপকরণ যোগার করলেও মানসিকতার পরিবর্তনে, মানুষের মতো মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে যাদের ভুমিকা অনস্বীকার্য তারাই আমাদের শিক্ষক। শিক্ষকের সে ধারাবাহিকতা শুরুেহয়েছিল হযরত মুহাম্মদ (সা:) থেকে। তাই ছাত্রদের চারিত্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ কিভাবে জাগ্রত করা যায়, শিক্ষকদের উচিত সেই দিক গুলো নির্দেশনা দেওয়া জরুরী। কোন্ কোন্ ভাল বিষয়গুলো ছাত্রদের জীবনকে আলোকিত করবে এবং কোন্ কোন্ খারাপ বিষয়গুলো তাদেরকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে সেই পথ তাদেরকে দেখাবে শিক্ষকেরা। এখানেই শিক্ষক একজন নীতি নির্ধারকের ভুমিকা পালন করবে সর্বাগ্রে।

একটা প্রবাদ বাক্য আছে " অকালে না নোয়ালে বাঁশ, বাঁশ করে ঠাস ঠাস"। ছোট থেকে ছেলেমেয়েদের চারিত্রিক গঠন শুরু হয়, তাই চরিত্র গঠনের বিষয়গুলো পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আলোচনা করতে হবে। সব সময় সত্য কথা বলার অভ্যাস তাদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ সেই পার্থক্য নির্ণয়ের ক্ষমতা তাদের মধ্যে ছোট থেকে জাগ্রত করাতে হবে, তা না হলে তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকবে না। ফলে তারা বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হবে। যেটা আমরা ইদানিং গভীরভাবে লক্ষ্য করছি। মানবিক মূল্যবোধ এর শিক্ষা ছোট বেলা থেকে দিতে হবে, যেমন সবসময় মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতে হবে, গরিবদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে, অন্যয়ের প্রতিবাদ করতে হবে, মানুষকে ভালবাসতে হবে। সবার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে, ছোট ও বড়দের সাথে স্নেহ-মমতা ও শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে হবে। ছোট থেকে তাদেরকে নীতিবাক্য শেখাতে হবে এবং সেভাবে তাদের অনুকরণীয় শিক্ষক হিসেবে আমাদের শিক্ষককেও সচেতন থাকতে হবে । মানব জীবনে প্রভাব ফেলবে এমন শিক্ষণীয় বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে রাখতে হবে। পাঠ্য বই গুলোতে মানবীয় বিষয় গুলো সংযোজন ও বর্ধন করতে হবে। নতুবা নৈতিক শিক্ষা সমূলে বিনষ্ট হবে।

অামাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় মুল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। কেননা ধর্মই মানব জিবনকে প্রভাবিত করে। নৈতিক হতে ভুমিকা রাখে। ধর্ম শিক্ষাকে তাই শিক্ষার প্রথমে রাখতে হবে। যেই ধর্মই হোক। প্রতিটি ধর্মই নীতি নৈতিকতার উপর প্রতিষ্টিত। প্রত্যেক ধর্মে সুন্দর সুন্দর কথা থাকে যা জীবনকে আলোকিত করে তুলে তাই স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষা প্রয়োজন। ছোটবেলা থকে ধর্মীয় শিক্ষা পেলে মানবজীবন মানবিক গুণাবলিতে পরিপূর্ণ হবে। প্রত্যেক ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে সবার।

"প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের কোমলমতিদেরকে পারিবারিক শিক্ষার আদলে গড়ে তুলতে হবে নৈতিকতায়। ছোট থেকে বাবা-মা'য়েরাই ছেলে মেয়েদের কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ, কোন কাজটা করা যাবে না এগুলো শিখাতে হবে। ছেলেমেয়েদের উচ্ছৃঙ্খল জীবনের জন্য অনেকে তাদের বাবা মাকে দায়ী করে। তাই আপনার সন্তানটি কোথায় কি করছে চোখ কান খোলা রাখুন। সন্তানকে বেশি বেশি সময় দেন। তাদের সাথে বেশি করে গল্প করুন। তাদেরকে মাঝে মাঝে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান। এতে করে তাদের বাস্তব জ্ঞান লব্দ হবে। একটা বিষয় পড়ার চেয়ে তারা দেখে দ্রুত শিখে। আমরা জানি শিশুরা মাত্রই অনুকরণপ্রিয়। তারা দেখে শিখতে পারে, যা ভবিষ্যৎ জীবনে সহজে পারতিফলন ঘটাতে সক্ষম হবে। ঘরের মধ্যে থাকতে থাকতে তাদের মধ্যে এক ধরনের জেদ তৈরী হয়। আর এই জেদের কারনে তারা নষ্ট জীবনের প্রতি পা বাড়ায়। ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাবা মা দের রাগ ক্ষোভগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাবা মা-দের মন-মানসিকতার পরিবর্তন না আসলে ছেলে মেয়েদের মনমানসিকতার উন্নয়ন হবে না। আমেরিকান একটা জার্নাল জরিপে সেটাই উঠে আসে -"যে পরিবারের মা বাবা তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হবেনা তাদের সন্তানেরাও সেভাবে প্রভাবিত হবে।" সন্তানের সামনে কারো দুর্নাম করা যাবে না। তা না হলে এটা তাদের বাক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলবে।"

বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ। ইন্টারনেটের ভিবিন্ন সাইটে আমাদের প্রজন্মরা নৈতিকতার চেয়ে অনৈতিক সাইটে নিমর্জ্জিত হচ্ছে। এখনকার ছেলে মেয়েরা ঘরে বসে থাকতে থাকতে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে অবাধে যে কোন খারাপ সাইটে ঘুরাফেরা করতে পারে, তাই তাদের কথা চিন্তা করে কিছু কিছু সাইট অফ রাখতে হবে, যাতে তাদের বিকৃতি মনমানসিকতা তৈরী না হতে পারে, বা আপনার সন্তানকে বলুন তোমার সামনে অনেক কিছু ঘটতে পারে, জীবনে চলার পথে ভাল-মন্দ অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে পার, তবে মানুষ হিসেবে তোমার যা কিছু ভাল তা গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যৎ তোমার, জিবনকে সাজাতে হবে তোমাকে একাই। অনেক বাবা মা চাকুরি করেন, সন্তানদের বেশি সময় দিতে পারেন না তাই তাদের সাথে সব সময় ফোনে যোগাযোগ রাখতে হবে, ঠিকমত স্কুল থেকে বাসায় ফিরল কিনা, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করল কিনা, ঘুমালো কিনা, হোম ওয়ার্কগুলো করে ফেলতে বলা। এতে দেখবেন যে আপনার সাথে আপনার সন্তানটির সম্পর্ক সুন্দর থাকছে। অফিস থেকে আসার পর সবটুকু সময় তাদেরকে দিন। তাদেরকে বুঝান তোমাদের ভবিষ্যতকে আরও নিশ্চিত ও সুন্দর করার জন্য আপনি চাকুরীটা করছেন। সন্তানকে বেশি করে ভালবাসুন দরকার হলে মৃদু শাসনও করুন। মনে করুন তার বিনোদনই আপনি, শিক্ষকই আপনি।

শিশুরাই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ অভাবনীয় সম্পদ। এদের হাতে আগামীর সফলতা নির্ভর করবে। এরাই পারবে দেশের উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন আনতে। এরাই দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে একদিন নেতৃত্ব দিবে। তাই তাদেরকে ছোট থেকে ভাল মানুষ হিসেবে তৈরি করার দায়িত্বটি স্কুল, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সর্বোপরি আমাদের সকলের। শিক্ষার পাশাপাশি যার মধ্যে নৈতিকতা আছে তার দ্বারা অসামাজিক কার্যক্রম করা কঠিন। তাই সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আগে বলুন একজন ভাল মানুষ হও। তাই বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে সুশিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার গুরুত্বটা খুবই প্রয়োজনীয়।

        __________________________________
লেখক-
মুনির উদ্দিন চৌধুরী [MSS(PS)MBA(HRM) LLB]
(পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক)
কাথরিয়া, বাঁশখালী,  চট্টগ্রাম
ই-মেইল: chymoniruddindr@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.