![]() |
ক্যাপশনঃ খাবার পানি সংগ্রহে পশ্চিম গন্ডামারা ওয়াপদার বেঁড়ীবাধ সংলগ্ন এলাকায় ডীপকলে কলসি নিয়ে স্থানীয়দের ভীড়
|
শিব্বির আহমদ রানাঃ সবেমাত্র বাংলা চৈত্র মাসের শুরু। প্রকৃতি নিস্তেজ হতে শুরু করেছে। গ্রীষ্মের আগমনী বার্তায় হাহাকার হয়ে উঠছে মাঠ-ঘাট। শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই চট্টগ্রামের সমগ্র বাঁশখালীতে শুরু হয়েছে পানীয় জলের তীব্র সংকট। নানা কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টি, নদীর নাব্যতা হ্রাস, নদীর উৎস মুখ বাধাগ্রস্ত হওয়া ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের তুলনায় স্তরে পানি না জমা অন্যতম। এর ফলে বিভিন্ন উৎপাদক নলকূপ সমূহের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এছাড়া এর প্রভাব পড়ছে টিউবওয়েলের ওপর। এ কারণে টিউবওয়েল থেকেও মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পাচ্ছে। জমিতে সেচের জন্য মাটির গভীরে যে ডীপকল বসানো হয়েছে তার ফলে সাধারণ নলকূপ দিয়ে পানি উঠানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বৈদ্যুতিক মোটর এবং সাবমার্সিবল পাম্প চালিয়ে গভীর নলকূপের মাধ্যমে অনেক নিচ থেকে পানি তুলে নেওয়ার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে বাঁশখালীতে প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে। এ বোরো চাষে প্রচুর পানি প্রয়োজন। বাঁশখালীর অধিকাংশ এলাকায় বর্তমানে পানীয় জলের তীব্র সংকট থাকায় সাধারণ জনগণ নানাভাবে সমস্যায় দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
তাছাড়া অধিকাংশ স্কুলে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকায় প্রচণ্ড গরম ও উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্য হয়ে পিপাসা মিটাতে খাল, বিল, পুকুর এবং পথঘাট থেকে পানীয় পান করার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাঁশখালীর ৫০ শতাংশ বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপের ব্যবস্থা থাকলেও তা অনেকদিনের পুরোনো এবং দীর্ঘদিন থেকে অযত্ন অবহেলায় অধিকাংশ নলকূপ বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়ায় ওই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিভাবকদের অভিযোগ। স্কুলগামী অবুঝ শিশুরা না বুঝে বাধ্য হয়ে পান অনুপযোগী ঠাণ্ডা পানীয় পানের পাশাপাশি স্কুলের আশ-পাশের দোকান থেকে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুযুক্ত আচার ও মান অনুপযোগী খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছে। বাঁশখালী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের ছনুয়া,খুদুকখালী,গণ্ডামারা, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদ, পুকুরিয়া, কালীপুর, বৈলছড়ি, কাথরিয়া, সাধনপুর, পুঁইছড়ি, চাম্বল, শেখেরখীল ও শীলকূপ ইউনিয়নের অধিকাংশ স্কুলে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। সাগর উপকূলের ইউনিয়নগুলো শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই খাল, বিল ও পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়। প্রচণ্ড গরম পড়লে উপকূলীয় এলাকার ইউনিয়নগুলোতে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। কয়েকটি গ্রাম বা পাড়ায় নলকূপ থাকলেও তার অধিকাংশই অকেজো বা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। উপকূলীয় এলাকায় একটি নলকূপ বসালে অন্তত ৯ শত থেকে ১২ শত ফুট গভীরে যেতে হয়। গভীরে না গেলে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় না। গভীরে যেতে হলে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। স্থানীয়রা এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করেন- উপকূলীয় এলাকায় শত শত নলকূপ অকেজো হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, যার দরুণ পানীয়জলের তীব্র সংকটের মুখে পড়ছে জনজীবন।
গত রবিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম গন্ডামারা ১নং ওয়ার্ডের ওয়াপদার বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২০০শতাধিক পরিবার তীব্র পানি সংকটে পড়ে মোটর চালিত যন্ত্র থেকে পানি সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় মু. আজম পানি সংগ্রহের জন্যে আসেন বিকাল ৫টায়। তিনি বলেন, বিদ্যুৎবিহীন তেল ব্যবহার করে প্রেসার মেশিন দিয়ে স্থানীয় আবুল হাসেমের ডীপকল থেকে বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে পানি সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ায় গ্রামের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েসহ বৌ-ঝি। এতে মেশিনের তেল খরচ জোগাতে ডীপকলের মালিক মাসপ্রতি পরিবার থেকে ১শত টাকা করে নেয়। প্রেসারের মাধ্যমে পানি তোলার নির্দ্দিষ্ঠ সময় প্রতিদিন আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। এ সময়ে পানি সংগ্রহের জন্য ভীড় জমে কলসি হাতে নিয়ে। লায়লা বেগম জানান, অনেক সময় পানি সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে বাধ্য হয়ে পুকুরের পানি পান করে থাকি।
জানা গেছে তারা দূষিত পানি না ফুটিয়েই ব্যবহার করে। অপর দিকে শিলকুপের জালিয়া পাড়া ও শাপলা পাড়ায় যে কয়টি নলকুপ আছে তা অকেজো হয়ে পড়ায় বিগত ১ বছর যাবৎ পানি সংকটে ভুগছে তারা। এহেন অবস্থায় এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। মিনজির তলা কাহারঘোনা, ও চাম্বলের মুন্সিখীল এলাকায়ও মারাত্মক পানি সংকটের কবলে। ভাদালিয়ার কাননগোখীলে সন্ধ্যা হলেই স্থানীয় মোটর থেকে পানি সংগ্রহের প্রতিযোগীতায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় এলাকায় শত শত নলকূপ অকেজো হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে যার কোন সংস্কার করা হয়নি। এমনকি আদৌ কোন নতুন নলকুপ স্থাপন করা হয়নি। মাত্র কয়েকটি নলকুপেই পানীয় জলের অভাব পুরুণ করছে স্থানীয়রা। অনেকদিন ধরে বাঁশখালীবাসীর চাহিদা অনুযায়ী কোনো নলকূপ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া নলকূপে শুষ্ক মৌসুমে পানি পায় না জনগণ। বর্তমানে বাঁশখালী পৌরসভাসহ ১৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৬ লক্ষাধিক মানুষ তীব্র পানি সংকটে ভুগছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, 'একদিকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, অন্যদিকে বৈদ্যুতিক মোটর এবং সাবমার্সিবল পাম্প চালিয়ে গভীর নলকূপের মাধ্যমে অনেক নিচ থেকে পানি তুলে নেওয়ার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে বাঁশখালীতে প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে। এ বোরো চাষে প্রচুর পানি প্রয়োজন। বাঁশখালীর অধিকাংশ এলাকায় বর্তমানে পানীয় জলের তীব্র সংকট থাকায় সাধারণ জনগণ নানাভাবে সমস্যায় দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।' জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের বাঁশখালীর উপ-প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান দেওয়ানজী বলেন, দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে আগের বসানো নলকূপগুলোতে এ মৌসুমে পানি উঠছে না। অধিকাংশ নলকূপে বর্তমানে পানি উঠছে না। ভূগর্ভের গভীরে বড় বড় ডীপকল বসানোর ফলে নলকুপ গুলো পানি পাচ্ছেনা।
বাঁশখালীর সর্বস্তরের অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে নলকূপ স্থাপনে বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। উল্লেখ্য বাঁশখালীতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা যে নলকূপ স্থাপনে অবদান রাখে তারা যদি যৌথ পরিকল্পনার মাধ্যমে যেসব এলাকায় পানীয় জলের তীব্র সংকট থাকে সেসব এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে নলকূপ স্থাপন করে তাহলে পানীয় জলের সংকট অনেকটা কম হবে। তাছাড়া বর্তমানে বোরো মৌসুমে অধিকাংশ এলাকায় মোটরের মাধ্যমে পানি তুলতে থাকায় সাধারণ টিউবওয়েলগুলোতে কোন পানি উঠে না। ফলতঃ জনদূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে।
[বাঁশখালী জনপদ২৪.কম'র অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন