advertisment

advertisment
বিজ্ঞাপন দিন

ব্রেকিং নিউজ

ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে ছবি তোলার অঘোষিত প্রথা ও চিকিৎসা বাণিজ্য বন্ধ হোক

"প্রেসক্রিপশনে ছবি তোলার প্রতিযোগীতা মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দ্বারা রোগীদের ভোগান্তির শেষ কোথায়?"

র্তমান সরকার জনগনের দৌড়গোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌছে দিতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইউনিয়ন ভিত্তিক স্বাস্থ্য ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রতিদিন রোগীরা পাচ্ছে সাধারণ চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ। কিন্তু সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছার পারতিফলন কতটুকু হচ্ছে তা সরকারী ক্লিনিকে গেলেই বুঝা যায়। ডাক্তারগণ থাকেনা নিয়মিত চেম্বারে। জরুরী বিভাগে অনেকসময় খালী চেয়ার পড়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা! ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ক্লিনিকের দৃশ্যটা আরো অমসৃন। এদের বেশীরভাগ অফিস করেনা। সপ্তাহে অন্তত দু-তিন দিন করেই অফিস বুঝিয়ে দেয় কতৃপক্ষকে। বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভিত্তিক স্বাস্থ্য ক্লিনিকে এসব দৃশ্য দেখা যায়। যেন রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই কোথাও। হয়রানীর শেষ নেই সাধারণ রোগীদের। চিকিৎসা সেবায় সরকার একটু নজর দিলেই পরিবর্তন আসতো মানব উন্নয়নে ও চিকিৎসা সেবায়।

মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে সুচিকিৎসা অন্যতম একটি মৌলিক অধিকার। মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে মানব জিবন বিপন্ন হয়। সুচিকিৎসা পাওয়া একজন নাগরিকের অধিকার। বর্তমান সরকার চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও আমরা স্বার্থান্ধ কিছু মহল সেবাখাতকে দূষিত করে ফেলেছি। অতচ বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবনীয় সাফল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা পেয়েছে নতুন এক গতি। এদিকে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। কিন্তু কিছু কিছু চিকিৎসক ও ঔষধ কোম্পানী নীতিনৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সেবাখাতকে দূর্বিসহ করে তুলেছে। এতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ রোগীরা। ইদানিং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীর মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের রোগীদের দেয়া চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার এক অ-ঘোষিত প্রথা চালু করেছে। যা অনেকের কাছে এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগীরা ডাক্তার চেম্বার, ঔষধের ফার্মেসি হতে প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে বের হতে না হতেই ঔষধ কোম্পানীর লোকদের কাছে হেনেঁস্তার শিকার হয় প্রতিনিয়ত। কে কার আগে প্রেসক্রিপশনে ক্যামরা বসাবে তার জন্য প্রস্তুত করে রাখে মুঠোফোনের ক্যামরাটা। তাদের এধরণের হামাগুড়িতে অতিষ্ট সাধারণ রোগীরা। ডাক্তার এবং রোগীর একান্ত ব্যক্তিগত প্রেসক্রিপশনে ক্যামরায় ছবি তুলা অনেকটা অনৈতিক ও বিব্রতকর। যা চোখে না দেখলে বুঝা কঠিন হয়ে যায়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে প্রসূতি  ও মারাত্মকভাবে অসুস্থ রোগীরাও বাদ যায়না  তাদের হেনেঁস্তার কবল থেকে। প্রেসক্রিপশনে ছবি উঠানো যেন তাদের একধরণের বাধ্যগত প্রতিযোগীতা। এ নিয়ে প্রায় সময় এম.আর.'দের সাথে রোগীদের বাকবিতন্ডা করতে দেখা যায় প্রায়ই সময়। এছাড়া একেবারে অজপাড়া গাঁ থেকে আসা মহিলা রোগীরা বেশী বিব্রত বোধ করেন এসব দৃশ্যে। সংশ্লিষ্ট রোগীর অনেক গোপন রোগের তথ্য থাকে প্রেসক্রিপশনে যা অন্যের জানার অধিকার নেই। রোগীরা এতটা ইতস্থবোধ করেন দেখলেই যেনো মনে হয় তারা নিরুপায়। বিষয়টি নিয়ে অনেকবার কিছু সংখ্যক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমআরদের বক্তব্য, কোম্পানীর নির্দেশেই তারা ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলে কার্যালয়ে পাঠান। এমনকি কোম্পানীর নানা প্রেসারের কারণে এম.আর'দের এই পথ অবলম্বণ করতে হয় বলে জানাযায়।

একটি সূত্র জানায়, দেশে ঔষধ কোম্পানী ব্যাপকহারে বাড়ছে। কোম্পানীর মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা ডাক্তারদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন। ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসক ঔষধ কোম্পানীর কোন কোন প্রোডাক্টস লিখেছে তা তাদের প্রতিনিধিরা ছবি তুলে কোম্পানীর কাছে প্রদর্শন করে। কোম্পানীর সাথে সংশ্লিষ্ট এম.আর'দের এতে করে তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি ও প্রমোশন হয়। এম.আর'দের কে ডাক্তারখানায় দেখলে রোগীদের অনেকের ধারণা হয়, ডাক্তার হয়তো প্রেসক্রিপশনে নিম্নমানের ঔষধ লিখছে। আবার বেশকিছু ডাক্তার চেম্বারে এম আর'দের প্রবেশকে নিষিদ্ধ করা হয়। বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে অহেতুকভাবে এম আর'দের প্রবেশকে নিষেধ করেও কাজ হয়না। চক্ষু লজ্জার কারণে অনেকে বিষয়টিকে এড়িয়ে চলে।

গত কয়েকদিন যাবৎ বাঁশখালীর বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডাক্তার চেম্বারে গিয়ে রোগীর চিকিৎসাপত্রে ছবি তোলার দৃশ্যটা বিবেকে বিদ্ধ করে। রোগীদের অনেকে এ পরিস্থিতির কবলে পড়ে বিব্রত হতে দেখেছি। ডাক্তার চেম্বারে যেখানে রোগীদের ভীড় থাকার কথা সেখানে সুষ্ঠু সবল এক শ্রেনীর মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দল রোগীদের বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে তাদের কোম্পানীর পন্যের প্রচার এবং রিপ্রেজেন্ট কাজে হামাগুড়িতে ব্যতিব্যস্ত থাকে। এই যেন নিত্য নৈমত্তিক কান্ড। কেউ যেন দেখার নেই। দেশের নামকরা ঔষধ কোম্পানী সহ বেশ কিছু কোম্পানীর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলা নিয়ে নানা তর্কাতর্কি হয়। বিব্রতকর এই পরিস্থিতি থেকে অনেকে আজ মুক্তি চায়। উচ্চ ডিগ্রীধারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ এম.আর'দের ছবি উঠানো ও তাদের প্রচলিত প্রথা-পদ্বতিকে কোন কিছুতেই সমর্থন করেনা।

অনেক সময় কিছু কিছু অসাধু ডাক্তার সামান্য অর্থের বিনিময়ের ফলে নিম্নমানের প্রোকাক্ট লিখে থাকে বলে জানান সচেতন কিছু মহল। অতচ চিকিৎসা "বিজ্ঞানীরা বলেন, এই পদ্ধতি চিকিৎসা বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সমর্থন করতে পারে না। ছবি তোলার এই পদ্ধতি বন্ধ হওয়া দরকার বলে তারা মন্তব্য করেন। পক্ষান্তরে এই পদ্ধতি চিকিৎসকদের রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীন মতামতকে প্রভাবিত করতে পারে। দ্রুতই অঘোষিত মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের, ডাক্তার প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলা বন্ধ করা হোক। এমআরদের হামাগুড়ি ও রোগীদের ভোগান্তি দূরীকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। ডাক্তার রোগীর সম্পর্কের মধ্যে এমআর নামের তৃতীয় পক্ষকে নিষিদ্ধ করা হোক।


লেখক-শিব্বির আহমদ রানা
ই-মেইল: shibbirahmed90@gmail.com



বাঁশখালী জনপদ২৪.কম'র অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই