বিজ্ঞাপন দিন, সাথে থাকুন

বিজ্ঞাপন দিন, সাথে থাকুন
Advertaizements

ব্রেকিং নিউজ

সর্বনাশা শঙ্খের গর্ভে ২২ বসতঘর, অর্ধশত বসতঘর বিলীন হওয়ার পথে

বাঁশখালী জনপদের খবর: নদীর এপাড় ভাঙ্গে ওপাড় গড়ে খেলায় বিলীন হতে চলেছে সাগর পাড়ে গড়ে উঠা মানুষের মাথা গুজে থাকার অাশ্রয়স্থল গুলো। দিন দিন অব্যবস্থাপনা ও নদীর গতিপথ পরিবর্তনসহ নানা প্রাকৃতিক সৃষ্ট বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে হাজার বছরের গড়ে উঠা বসতি গুলো ঢুকে যাচ্ছে নদী গর্ভে। এদিকে ভাঙ্গাগড়ার খেলায় মেতে উঠেছে বাঁশখালী-আনোয়ারা সীমান্ত দিয়ে বহমান শঙ্খ নদী। সর্বনাশা শঙ্খ নদীর ভাঙ্গন যেন কোন কিছুতেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। একদিকে ভাঙ্গন বন্ধ করলে অন্যদিকে শুরু হয় ভাঙ্গন। ভাঙ্গনের তালিকায় যোগ হয় নতুন নতুন নাম। বাশঁখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড়ের রাতাখোর্দ্দ জলদাশ পাড়া ও কৈর্তব পাড়ার অর্ধ শতাধিক বাড়ি-ঘরসহ, মাদ্রাসা, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, মৎস্য পুকুর, মসজিদ, গরু ও হাঁস-মুরগীর খামার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে টানা বর্ষণে শঙ্খ নদীর পানির স্রোতে অর্ধশতাধিক পাকা দালান, বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে পরিবারের সদস্য গুলো। আশ্রয়হীন পরিবারগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে অনিশ্চয়তায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকেই অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে শঙ্খ নদীর বাঁধের উপর, রাস্তার ধারে, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে আরো সহস্রাধিক পরিবার। যে কোন সময় নদীগর্ভে বিলীনহতে পারে ভাঙ্গনের মুখে থাকা বাড়ি-ঘর গুলো। এখানে বসবাসরত মানুষ গুলোর একমাত্র পেশা সাগরে মাছ ধরা। জেলে সম্প্রদায় হওয়াতে তাদের প্রতি নেই কারো নজরদারি কিংবা নদী ভাঙ্গনরোধে সঠিক ব্যবস্থাপনা। ফলে এ অঞ্চলের কয়েকশ পরিবার শঙ্খ নদীর ভাঙ্গন এর কবলে পড়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শঙ্খ নদীর স্রোতের ধারায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর, খানখানাবাদ ও পুকুরিয়া  ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নদীভাঙ্গনের সৃষ্টি হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গন প্রতিরোধে পরিকল্পিত কোন উদ্যোগ না নেয়ায় ভাঙ্গন দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করছে। ওই অঞ্চলের জেলেপাড়া সংলগ্ন এক সময়ের নামকরা বাজার ঈশ্বরবাবুর হাট।যেখানে একসময় কয়েকশ দোকানপাট থাকলে ও বর্তমানে হাতেগুনা কয়েকটা দোকান রয়েছে মাত্র। জেলেপাড়ার কোলঘেষে বয়ে যাওয়া জলকদর খালটি একসময় ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়ার অন্যতম যাতায়াত মাধ্যম ছিল। খালের পশ্চিম পার্শ্বে খানখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া রায়ছটা, পূর্বপার্শ্বে সাধনপুর ইউনিয়নের জেলেপাড়া, কৈবত্য পাড়া, রাতাখোর্দ্দ সহ অপরাপর বসতগুলো অবস্থিত ।বর্তমানে প্রতিদিন জেলেপাড়া, কৈর্বত্য পাড়ার বাড়িঘর গুলো শঙ্খের ভাঙ্গনের শিকার হয়ে একে একে বিলীন হতে বসেছে তাদের বসতঘর গুলো।

ইতিপূর্বে রার্তারকূল সার্বজনীন রক্ষা কালীমন্দিরটি ৪ বার এই সাঙ্গুর মরণছোবলে ভেঙ্গে যায়। একই সাথে খানখানাবাদ ইউপির রায়ছটা পোষ্ট অফিস কার্যালয়টি সাঙ্গুর গর্ভে বিলীন হয়ে পড়েছে। গেল মঙ্গলবার (১৯ জুন) গভীর রাত থেকে পানির তীব্র আক্রমনে ২৫ টিরও অধিক ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে যায়। তাদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন ওই অঞ্চলের স্থানীয় মৃত পুষ্প পদ দাশের পুত্র বাহাদুর দাশ (৪৮) এর পরিবার, মৃত অনিল দাশের পুত্র শরজীদ দাশ (৩২), গোপালী দাশের পুত্র সাধু দাশ(২৮), মৃত সত্যরঞ্জন দাশের পুত্র বাবুল দাশ(৫০), মৃত পেটান চন্দ্র দাশের পুত্র মতি লাল দাশ(৫০), মৃত হাসী রাম দাশের পুত্র সর্ত্য দাশ (৩৪), জয়রাম দাশের পুত্র সুজন দাশ (৩৫), মৃত বিজয় দাশের পুত্র শমীর দাশ (৩৬), সচীন্দ্র দাশের পুত্র জয় লাল দাশ(৪০), মৃত উফেন্দ্র  দাশের পুত্র  শ্রীরাম দাশ (৪২), মৃত রায় চন্দ্র দাশের পুত্র জয়রাম দাশ (৫৫), মৃত রাম প্রসাদ পুত্র বিমল দাশ (৩০), মৃত বরনী দাশের পুত্র শ্রীদাশ (৬০), ইন্দ্র সেনের পুত্র সুর্য সেন (৬০), গোপালের পুত্র মধু(৩৪), শ্রীদাশের পুত্র শুভ দাশ (২৮), মৃত দক্ষিনা রঞ্জন দাশের পুত্র  মনদোলা দাশ (৩২), হিমাংশু জলদাশের পুত্র উদ্ভাব জলদাশ (৩৬), মৃত কাশিরাম দাশের পুত্র অরি রঞ্জন দাশ (২৪), দূর্গা চরন দাশের পুত্র সুনীল দাশ (৫৫), শমর শর্মার পুত্র সুভ্রত শর্মা (২৪), মৃত অহি রঞ্জন দাশের পুত্র খোকন দাশ (৩৫) এরা বসতবাড়ি হারিয়ে বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে জিবন যাপন করছেন। পাশাপাশি আরো অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হওয়ার পথে। জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন জানে না কোথায় গেলে তাদের বাড়ি ঘর রক্ষা করার মত উপায় খুঁজে পাবে। তাই নিরুপায় হয়ে সাগর পানে চেয়ে চেয়ে দিন পার করছে তারা কবে সাগর শীতল হবে। একসময় জেলেপাড়ার কৈবত্য পাড়াসহ রাতাখোর্দ্দ এলাকা ঘিরে ছিল ৪শতাধিক পরিবারের একটি পাড়া।১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্কাররী ঘুর্ণিঝড় এর পর থেকে ভাঙ্গন শুরু হলে সে ভাঙ্গনের তোড়ে গৃহহীন হয়ে নিঃস্ব হয়েছে কয়েকশত পরিবার।

স্থানীয় ইন্দ্র সেনের পুত্র সূর্য সেন জানান, শঙ্খের ভাঙ্গনের নিঃস্ব হয়ে ২শতাধিক পরিবার চলে গেছে বাধ্য হয়ে অন্যত্র। তাদের মধ্যে অনেকে সুদূর ভারতে, কাপ্তাই, চট্টগ্রাম শহরে পাড়িয়ে জমিয়েছেন। আমরা যারা অসহায় সম্বলহীন তারা এখনো মৃত্যুর দুয়ারে বসে আছি। আমাদের পরিবার এ পর্যন্ত ৫ বার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে গৃহহীন হয়েছে। বর্তমানে কোন রকমে বেঁচে আছি সাগরকে আকঁড়ে ধরে, কারন আমরা জেলেরা সাগর ছাড়া চলতে পারিনা। সাগরে জাল ফেলে যা পাই তা নিয়ে কোন রকমে সংসার চালাই। আমাদের দেখার জন্য কেউ আসেনা। আমরা প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের কবলে পড়ে আছি অথচ কেউ আমাদের খোঁজ নেয়না। শঙ্খের ভাঙ্গন রোধে দুপাশে কাজ চলমান থাকলেও অদৃশ্য কারনে জেলে পাড়া ও কৈর্বত্য পাড়া এলাকায় কোন ধরনের কাজ হয়নি। ফলে প্রতিদিন ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে এ এলাকার জনগনের বাড়িঘর। এভাবে অনেকের আহজারীতে ওই অঞ্চলের পুরো পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।
সাধনপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা বলেন, এ এলাকার ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীকে দরখাস্তের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। আশা রাখি অল্প কিছু দিনের মধ্যে একটা সুরাহা হবে। তবে তিনি এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্থদের পরিষদের মাধ্যমে সহযোগিতার কথা জানান। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী ধীমান চৌধুরী জানান, শঙ্খ নদীর ভাঙ্গন রোধে বর্তমান চলমান কাজে জেলে পাড়ার লোকজন খুব শিগ্রই সুফল পাবে। 

-শিব্বির আহমদ রানা

কোন মন্তব্য নেই