advertisment

advertisment
বিজ্ঞাপন দিন

ব্রেকিং নিউজ

গত ১বছরে সড়ক কেড়ে নিল ৭হাজার ২২১ প্রান

অনলাইন ডেস্ক: গত বছর ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৬৬ জন।

গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, সাংবাদিক ইশতিয়াক রেজা, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ প্রমুখ। 

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, পরিবহন খাতে জবাবদিহি নিশ্চিত না করতে পারায় সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাচ্ছে না। মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে জানান, জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদের আলোকে সমিতির প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে যানবাহনের সংখ্যানুপাতে দুর্ঘটনার সংখ্যা ‘অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে’ রাখা সম্ভব হয়েছে। সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটিয়ে সড়ক নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ নিলে আগামীতে সড়ক দুর্ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। সমিতির বার্ষিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। তাদের আগের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে চার হাজার ৯৭৯টি সড় দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৩৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকার তাড়াহুড়ো করে সড়ক পরিবহন আইন পাস করলেও তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিচ্ছে না। পরিবহন খাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার লোকজন, পুলিশ, পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের নিয়ে দুর্নীতির দুষ্ট চক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্র চায় না পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। এই প্রেক্ষাপটে সড়কে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিদায়ী ২০১৮ সালে ৫,৫১৪ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭,২২১ জন নিহত ও ১৫,৪৬৬ জন আহত হয়েছে। 

এসময় রেল পথে ৩৭০টি দুর্ঘটনায় ৩৯৪ জন নিহত এবং ২৪৮ জন আহত হয় , নৌ পথে ১৫৯টি দুর্ঘটনায় ১২৬ জন নিহত ও ২৩৪ জন আহত এবং ৩৮৭ জন নিখোঁজ হয়েছে, আকাশ পথে ৫টি দুর্ঘটনায় ৫৫ জন নিহত এবং ৩২ আহত হয়েছে। সড়ক, রেল, নৌ এবং আকাশ পথে সম্মিলিতভাবে ৬,০৪৮টি দুর্ঘটনায় ৭,৭৯৬ জন নিহত এবং ১৫,৯৮০ জন আহত হয়েছে। এসময়ে সংঘটিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৭,৩৫০টি যানবাহনে পরিচয় মিলেছে। যার মধ্যে ১৮.৯২ শতাংশ বাস, ২৮.৬৮ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৭.৯৩ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৯.৬১ শতাংশ অটোরিক্সা, ২৫.৩০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৩.৭২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা, ৫.৮০ শতাংশ নছিমন করিমন ও হিউম্যান হলার সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

সংঘটিত দুর্ঘটনার ৪১.৫৩ শতাংশ গাড়ি চাপা, ২৯.৭২ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬.১৮ শতাংশ খাদে পড়ে, ০.৫৫ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণসমূহ হচ্ছে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা, বিপদজনক অভারটেকিং, রাস্তা-ঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ওভারলোড, ছোট যানবাহন বৃদ্ধি ইত্যাদি।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ মালার মধ্যে রয়েছে ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধিবিধান সম্পর্কে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য, মসজিদ, মন্দির, গির্জায় জনসাধারণের জন্য ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা। টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র সমূহে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাত বেদখল মুক্ত করা। রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রাক্রসিং অংকন করা। গণপরিবহন চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। যাত্রী ও পথচারী বান্ধব সড়ক পরিবহন বিধি প্রণয়ন। গাড়ির ফিটনেস ও চালদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে আধুনিকায়ন করা।

জাতীয় মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেন এর ব্যবস্থা করা। অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করা। সড়ক নিরাপত্তা তহবিল গঠনপূর্বক সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসা ও পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করা। লাইসেন্স ইসুও নবায়নকালে চালকের ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করা। পর্যাপ্ত মানসম্মত গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেয়া। সূত্র-দৈনিক পূর্বকোণ

কোন মন্তব্য নেই