advertisment

advertisment
বিজ্ঞাপন দিন

ব্রেকিং নিউজ

বাঁশখালী শিশুনিকতনের ৩শতাধিক শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন: আমরা যাবো কোথায়?

"৩ শতাধিক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত! অথচ কয়দিনপর তাদের বার্ষিক পরিক্ষা"

শিব্বির আহমদ রানাঃ বাঁশখালী শিশু নিকেতন আধুনিক শিক্ষাধারার একটি শিশুবান্ধব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষতার সাথে ৩৬ বছর গড়িয়ে গেল শিক্ষাদান ব্যবস্থা। প্রানচাঞ্চল্যকর পরিবেশে শিশুদের পদচারণায় মুখরিত ছিল শিশু নিকেতন। এখন ধ্বংসস্তুপের পথে শিশু নিকেতন! ছাত্রদের ভীড় নেই, চলছে ভবণ ভাঙ্গনের কাজ। শিশুশিক্ষার্থীদের চোখের সামনে তাদের বিদ্যালয়টি ভেঙ্গে দিচ্ছে দেখে হতম্ব হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বছড় গড়াতে না গড়াতেই তাদের উপর এমন অবিচার শিশুমনে কুঠারাঘাতই বটে!বাঁশখালী শিশুনিকতনের ৩শতাধিক শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, আমরা যাবো কোথায়?  


চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রথম নিবার্হী কর্মকর্তা এ.জে.এম সালাহউদ্দীন চৌধুরী ১৯৮৩ সালে বাঁশখালী শিশু নিকেতন বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বাঁশখালী উপজেলা ভূমি অফিসের পরিত্যক্ত জায়গায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে বিগত ৩৬ বছরে অধ্যয়ন করে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্টিত রয়েছেন। কিন্তু ভূমি অফিস সম্প্রসারণের অজুহাতে ৩৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলটি বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) থেকে পাকা স্কুল ভবনটির অংশ বিশেষ ভাঙতে শুরু করেছে ঠিকাদারের লোকজন। এ সময় বিদ্যালয়ে পাঠদানে আসা শিক্ষার্থীদের কান্নাসহ হতবিহ্বল হয়ে পড়তে দেখা গেছে।

জানা যায়, বাঁশখালী উপজেলা ভূমি অফিসের পরিত্যক্ত জায়গায় বাঁশখালীর প্রথম উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা এ.জে.এম সালাহ উদ্দীন চৌধুরী বাঁশখালী শিশু নিকেতন বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পযার্য়ক্রমে বিগত দিনে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা সার্বিক তত্বাবধানে প্রায় ১১ জন শিক্ষক ও অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৯৮৩ সালে আটচালা বিশিষ্ট ঘরে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতায় প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে একতলা ৬ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ভবন নিমার্ণ করে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়। তারই প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ ১৯৯৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ৬৪৫ নং স্মারক মূলে চট্টগ্রামের অতিঃ জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবরে লিজ প্রদানের জন্য আবেদন করেন। তিনি এ ব্যাপারে প্রদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপজেলা ভূমিকে নির্দেশনা প্রদান করলেও উপজেলা ভূমি অফিস তা কার্যকর করেনি। এই বিদ্যালয়টি বিগত ১৫ বছর যাবৎ থেকে সরকারি সকল নিয়ম কানুন মেনে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি কোড নং প্রাপ্ত হয়ে সরকারি বৃত্তি ও অন্যান্য পরীক্ষা অংশগ্রহণ করে সুনাম কুঁড়িয়েছে এবং এই বিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থীর বর্তমানে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছে।

চলতি বছরে এই বিদ্যালয় ভবনটি সরানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌখিক ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়। তারই প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে বিদ্যালয়টি স্থায়ী জায়গা বরাদ্দ না দেওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয় ভবনটি না ভাঙার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর ২৮ এপ্রিল একটি আবেদন করেন। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে কোন ধরনের সুরাহা না আসার পরেও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বারবার উপজেলা ভূমি অফিস নিমার্ণের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এই স্কুল ভবনটি ভাঙার জন্য স্কুলের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের বারবার চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে স্কুল কতৃপক্ষ গত ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বরাবরে বিদ্যালয়টি একটি নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর প্রক্রিয়া করার জন্য সময়সহ জায়গা বরাদ্দ প্রদানের আবেদন করলে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা তা গ্রহণ করেনি। অপরদিকে ভূমি অফিস নিমার্ণের কার্যক্রমের সকল ধরনের মালামাল স্কুল মাঠে রেখে ছাত্র-ছাত্রীদের আসা যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা চরম ভাবে বেকায়দায় পড়ে এবং অনেকে আহত হয়। 

এই বিদ্যালয়ের মাঠে বাঁশখালীর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও শহীদ হওয়া সকল মুক্তিযোদ্ধার নাম সম্বলিত একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে। যা চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবদুচ ছালাম ও বাঁশখালীর সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর তত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টি ভাঙলে এই স্মৃতিসৌধটিও ভাঙতে হবে বলে স্কুল কতৃপক্ষ জানান। অথচ ভূমি অফিসের যে বিশাল পরিত্যাক্ত জায়গা রয়েছে তাতে যদি দক্ষিণ অংশ থেকে ভবন করা হয় তাহলে বর্তমান যে নকশা অনুসারে ভবন করা হচ্ছে তার ২/৩টি ভবন করতে পারবে। প্রশাসন দক্ষিণ অংশ থেকে ভবন না করে যেখানে বিদ্যালয় রয়েছে অজ্ঞাত কারণে সেই বিদ্যালয়টি অন্য কোথাও সুষ্ঠভাবে স্থানান্তরিত না করে পরিকল্পিত ভাবে ভেঙে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছে। যার ফলে বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার পরিবারের ৪টি সন্তান এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছে। যারা বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে চাকুরী পেশায় নিয়োজিত। সুনামের সহিত এই বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলে আসছে। একটি চক্র এই বিদ্যালয়কে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে।’ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাবাচ্ছুম বলেন, ‘কয়দিন পরে আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। এই সময়ে বিদ্যালয়টি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এখন আমরা কোথায় গিয়ে পরীক্ষা দেব? স্কুলটি কেন ভাঙছে আপনারা জানেন? বাঁশখালী শিশু নিকেতনের একাডেমিক প্রধান শিক্ষক মো. ইউসুফ বলেন, ‘দীর্ঘ সময় যাবৎ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছি। প্রশাসন আমাদেরকে বার বার সহযোগিতা করলেও সম্প্রতি সময়ে কার ইন্ধনে আমাদের বিদ্যালয়টি সরিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের উপর প্রতিনিয়ত চাপ সৃষ্টি করছে এবং আমরা সরিয়ে না নিলে গুটিয়ে দেবে হুমকি দিচ্ছে। বেশ কয়েক স্থানে বিদ্যালয়ের জন্য ভাড়া বাসা ও ভবন চাইতে এই বিদ্যালয় বিরোধী একটি চক্র না না ভাবে বাঁধা দিচ্ছে। তারাই এই বিদ্যালয়টি উচ্ছেদের জন্য প্রশাসনকে প্ররোচিত করছে।’ 
এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘বাঁশখালী ভূমি অফিস নিমার্ণ করার জন্য বর্তমানে সরকারি ভাবে টেন্ডার হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে এই বিদ্যালয়টি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। বিদ্যালয়টি স্থায়ী ভাবে স্থানান্তরিত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে জায়গা খোঁজা হয়েছিল কিন্তু পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বর্তমানে ভূমি অফিসের নিমার্ণ কার্যক্রম শুরু হওযায় বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত করতে হচ্ছে।’



বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'র অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।

বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।
                  আপনার মেইল পাঠাতে:
                 banshkhalijanaphad24@gmail.com




কোন মন্তব্য নেই