advertisment

advertisment
বিজ্ঞাপন দিন

ব্রেকিং নিউজ

বাঁশখালীর বরেণ্য ব্যক্তি সাহেব মিঞা চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবন

"সাহেব মিঞা (১৯০১-১৯৮২) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও চেয়ারম্যান কালীপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর বর্ণ্যাঢ্য জীবনী"

সাহেব মিঞা চৌধুরী নামে সমধিক পরিচিত হলেও তিনার আসল নাম (মকবুল আহমেদ চৌধুরী) তৎ পিতা- আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী, তৎ পিতা- আমীর আলী চৌধুরী, তৎ পিতা- নেয়ামত আলী খাঁন চৌধুরী, তৎ পিতা মুহাম্মদ রেজা খাঁন চৌধুরী  প্রকাশ রাজা আব্বাস, যিনার নামেই "রাজার পাড়া" নাম করণ করা হয়। ঐতিহাসিকদের মতে রাজা আব্বাস মোগল সেনাপতি বা সামন্ত ছিলেন। সাহেব মিঞা চৌধুরী একাধারে সমাজ সেবক ,সুশিক্ষিত, জমিদার, ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, পরবর্তীতে ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম জর্জ কোর্টের জুড়ি বোর্ডের সদস্য (জোরার), সিএন্ডবি' বর্তমান "সওজ" এর  প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার, বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ ও কোকদন্ডি উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সহ নানান সামাজিক ও ধর্মীয়  কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তিনি।

তিনি বাঁশখালী খাঁন বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরীর বড় ভাগিনা ও বড় জামাতা। খাঁন বাহাদুর সাহেবের প্রথমা কন্যা আয়েশা সিদ্দিকা চৌধুরী সাহেব মিঞা চৌধুরী সহধর্মিণী ও মামাতো বোন। তিনি প্রায় ৩০ বৎসর যাবৎ কালীপুর ইউনিয়ন পরিষদ (গুনাগরি) এর প্রেসিডেন্ট ও চেয়ারম্যান থাকাকালীন যোগাযোগ ব্যাবস্থা সহ সার্বিক উন্নয়ন সাধন করেন। বাঁশখালী হতে সাতকানিয়া হয়ে আরাকান সড়কে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা ছিল সাধনপুর সাহেবের হাট দিয়ে।  সাহেব মিঞা চৌধুরী দক্ষিণ ও পশ্চিম বাঁশখালীর মানুষের কথা চিন্তা করে নিজ তহবিলের অর্থব্যয়ে বর্তমান গুনাগড়ি পয়েন্ট হতে পাহাড় কেটে, সমতলে রাস্তা বেঁধে আজকের বাঁশখালী-সাতকানিয়া সড়কটি প্রবর্তন  করেন। সাতকানিয়া ডলু খালের উপর ডলু ব্রিজটি পাকিস্তান আমলে তিনারই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্মিত। কালীপুর ইউনিয়ন বোর্ডের তিনার পূর্বেকার প্রেসিডেন্ট কালীপুর সুপারিন্টেন্ডেন্ট এর কার্যালয়ে অফিস করতেন। সাহেব মিঞা চৌধুরী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি কালীপুর না বসে গুনাগড়িতেই নিজ অর্থ ব্যয়ে ভবন নির্মাণ করে পরিষদ পরিচালনা করতেন। সেই হতে অদ্যাবধি  কালীপুর ইউনিয়ন পরিষদ গুনাগড়িতেই স্হায়ী রূপ লাভ করে। তিনার বহু জনহিতকর কাজের জন্য তিনি এখনো স্মরণীয় বরণীয়। সাতকানিয়া কোর্ট, আরাকান সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম -কক্সবাজার হতে বাঁশখালীর পথচারীদের  চলাফেরার জন্যে শুধু রাস্তা নির্মাণ করেছেন তা নয়, মানুষের বিশ্রাম ও এবাদের জন্যে পয়েন্টে পয়েন্টে পাঁকা এবাদতখানা, পানির জন্যে টিউবওয়েল ও মটকা ভর্তি করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা শৌচাগারের ব্যবস্থা করে রাখতেন। সেই এবাদত খানা গুলো এখনো দৃশ্যমান। মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্যে মাসব্যাপি বৈশাখী মেলার আয়োজন করে তথায় ঘোড়দৌড়, ভেড়ার লড়াই, মোরগ লড়াই, কুস্তি খেলার আয়োজনও ছিল অন্যতম। বাঁশখালীতে হাতেগুনা যে ২/১ একজন জীপগাড়ি ব্যবহার করতেন তৎমধ্যে সাহেব মিঞা চৌধুরী অন্যতম প্রথমজন।

তিনার ভাইদের মধ্যে হাজ্বী আব্দুল গণি চৌধুরী ও সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন । তিনি ৫ পুত্র ও ৭ কন্যা প্রত্যেক কেই সুশিক্ষিত করে বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও আনোয়ারার সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে হতে বিবাহ্ করান ও মেয়েদের বিবাহ্ দেন। তিনার পৌত্ররা অনেকেই উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। তিনার সেজ ছেলে  অা.ন.ম কমরুর রশীদ চৌধুরী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছাড়াও তিনার বেয়াই অ্যাডভোকেট নূর আহমদ চৌধুরী ও তৎছেলে সাহেব মিঞা চৌধুরীর জামাতা মফজল আহমদ চৌধুরী  দীর্ঘদিন কালীপুর ইউনিয়ন বোর্ডের যথাক্রমে প্রেসিডেন্ট ও চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি কালীপুর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন নিজ প্যাডে ৬/৩/১৯৫০ খ্রীঃ তৎকালীন K T Shatkania Shaheb (বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) কে নিজ হস্তে লেখা ভাবগম্ভীর ভাষায় একটি চিটি এখানে সংযোজন করা হইল। চিঠির খামে লেখা ছিলঃ

[6/3/1950Shaheb Meah Chowdhury
President- Union Board. 
Bench & Court No- 5 Kalipur
P.S  Banskhali
Dist. Chittagong, 
GUNAGARI]

অবশেষে, মহান রবের দরবারে এটুকুই প্রার্থনা মরহুমের সমস্ত সামাজিক কর্মযজ্ঞ  তিনার রূহে সদকায়ে জারিয়াহ্ স্বরূপ পৌঁছে দিন। আমিন||

________
লিখেছেনঃ
সোলতানুল আজিম চৌধুরী
(দক্ষিন পুইছড়ি জমিদার বাড়ি) 
সাহেব মিঞা চৌধুরীর দৌহিত্র

কোন মন্তব্য নেই