বাঁশখালী জনপদ সত্যপ্রকাশে আপোষহীন

বিজ্ঞাপন দিয়ে সাথে থাকুন

test

আধ্যাত্মিক সাধনায় সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন বাঁশখালীর মোস্তফিজ হুজুর

হান আল্লাহ তাঁহার নিজ অনুগ্রহে মানব জাতির মধ্যে এমন কিছু ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব প্রেরণ করেন, যারা সমগ্র জীবন মানবতার কল্যাণে অসীম শ্রম ও মেধা বিলিয়ে দিয়ে জাতির নিকট চিরদিন শ্রদ্ধার পাত্র হিসাবে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকেন। এসকল মনীষীদের অনেকে আবার প্রচার বিমুখ থাকার কারণে সমাজের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী তাদের কর্মতৎপরতা ও পরিধি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল থাকেন না। গুনিজনেরা সমাজে তাদের কর্মে বেঁচে থাকে। সমাজ বিনির্মানে ও অনুকরণীয় আদর্শে তাঁরা হলেন বাতিঘর। তাদেরই একজন মৌলানা মোস্তফিজুর রহমান চৌধুরী প্রকাশ মোস্তফিজ হুজুর। ক্ষণজন্মা এই সিদ্ধ পুরুষ বাশঁখালী উপজেলার ডোংরা গ্রামে ডোমন চৌধুরী বাড়ীতে ১৯৩৬ সালে জন্ম গ্রহন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক। একাধারে ৪৮ বৎসর একই স্কুলে শিক্ষকতা করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে ছিলেন। এই দীর্ঘ ৪৮ বৎসরের শিক্ষকতায় মাত্র ১ (এক) দিন অনুপস্থিত ছিলেন। শ্রেণী কক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষায় কখনো তর্জন বা চোখ রাঙাতে দেখা যায়নি। শ্রেণী কক্ষ সর্বদায় শান্ত ও নীরব থাকতো।  মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে যা বেতন পেতেন তা’দিয়ে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করতেন। এ পেশায় তিনি আমরণ ছিলেন। মানুষকে হেদায়াত এবং শিক্ষকতার মাধ্যমে এলাকাকে তিনি ধর্মীয় র্শিক্ষার আলোকে আলোকিত করেন। তিনি সবসময় ক্লাসে বলতেন ‘‘জ্ঞানান্বেষণ, মিতব্যয়িতা এবং পাপ থেকে সংযম এই তিনটি গুন যদি মানুষের মধ্যে বিদ্যমান না থাকে, তবে কোন ইবাদতই কাজে আসবে না’’

তাঁর পারিবারিক জীবন ছিল অত্যন্ত সাদাসিদে। তিনি সহজ সরল সৎ জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন। দ্বীন ইসলামের খেদমত ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন এর এখতিয়ার করার মাধ্যমে তিনি আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য হাসিলে সক্ষম হয়েছিলেন। 

"কেনা কাটায় কখনো দরদাম করিতেন না। তিনি খুব কমই দাওয়াতে যেতেন। হালাল হারামের ব্যাপারে খুব বেশি সজাগ থাকতেন। বলতেন হারাম খাবার কলবকে অন্ধকার করে ফেলে। তাঁহার থাকার গৃহের অবস্থা ছিল আরো শোচনীয়। মাটির তৈরী একটি ছোট্ট গৃহে পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। বলতেন দুনিয়া এক মুসাফের খানা। তাহার শশুরবাড়ী ছিল একই ইউনিয়নের খানখানাবাদে। খ্যাতিমান আশরাফ আলী চৌধুরীর নাতনি, মৌলানা ছিদ্দিক আহম্মদ চৌধুরীর প্রথম কন্যা মরহুমা বিবি মরিয়ম কে জীবন সাথী হিসাবে নিয়েছিলেন। বৈবাহিক জীবনে তিনি ১ছেলে এবং ২ মেয়ের জনক ছিলেন।"

মওলানা মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী যতদিন পৃথিবীতে ছিলেন ইমামতি ও শিক্ষকতার মত মহান পেশা ও দ্বীনের খেদমতে রত ছিলেন। এই মহান সাধক পুরুষ অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী, ভক্তকুলকে চোখের জলে ভাসিয়ে ২০০০ সালের ৯ই মার্চ ইহকাল ত্যাগ করে আল্লাহ্ ও তার রসূলের সানিধ্যে চলে যান, জনশ্রুতি আছে তাঁহার বিশাল জানাজায় তৎকালিন সময়ে স্মরন কালের সর্বাধিক মানুষের উপস্থিতি তার কামেলিয়তকে স্পষ্ট করে তোলে।

ইন্তিকালের পর পারিবারিক কবরস্থান সামনের পুকুর দক্ষিণ পাড়ে তাঁকে সমাহিত করা হয়। প্রতি বছর তাঁর বার্ষিক ফাতেহা শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর বার্ষিক ফাতেহা উপলক্ষে পবিত্র খতমে কুরআন, বোখারী শরীফের খতম ও নানা কর্মসূচী আয়োজন করা হয়। যাতে দেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও মোহাদ্দিছীনে কেরাম উপস্থিত হন।

লিখেছেনঃ
মনজুরুল হক চৌধুরী
(হুজুরের প্রাক্তন ছাত্র ও একজন প্রাক্তন মেরিনার)
ই-মেইল-
monzoor77@gmail.com





বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'র অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।

বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।

আপনার মেইল পাঠাতে:

banshkhalijanaphad24@gmail.com



কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.