সেই দিন ছিল সোমবার। বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখের ১৫ তারিখ। আজকের এই দিনে আমি হারিয়েছি আমার প্রিয় গর্বধারনী মা, আদরের একমাত্র ছোট বোন, নানি সহ পরিবারের ৪ সদস্যকে। বেদনাবিদুর আজকের এই দিনে আমি ২৯ এপ্রিলের সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি, আল্লাহ পাক যেন তাদেরকে জান্নাতের উচু মকাম দান করেন। আজ বেদনার দীর্ঘ ৩০ বছর পরও ভুলতে পারিনি সেই দিনের কথা। কেমনে ভুলি, যে স্বজন হারিয়েছে সেই বুঝে আপন জন হারানোর বেদনা! আমার মত সেই দিন অনেকেই নিকটাত্মীয়কে হারিয়েছেন সেই দিনের শোকাহত পরিবারের সদস্য হিসেবে সমবেদনা প্রকাশ করছি।
ফিরে দেখা ভয়াল দিনঃ আজ সেই ভয়াল ২৯ শে এপ্রিল! ১৯৯১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের দক্ষিণ পুর্ব অঞ্চলে উপকূলে আছড়ে পড়ে (ম্যারি এন) নামক এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় এর ভয়ংকর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়েযায় কক্সবাজার, হাতিয়া, চরফ্যাশন, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, পতেংগা সহ চট্টগ্রামের বাঁশখালি সহ অনেক উপকূলীয় এলাকা। রাতের নিরাবতা ভেদ করে ভয়ঙ্কর ভাবে আঘাত হানে এই ঝড়। ঘন্টায় প্রায় ২৫০ কি.মি. গতিতে ও প্রায় ৬ মিটার বা ২০ ফুট উচ্চ জলস্যাসে মুহুর্তেই মৃত্যুপুরিতে পরিনত হয় ঐ সকল এলাকা। সরকারি হিসেবে প্রায় ১,৩৮,৬১৮ জনের প্রাণহানী ঘটে আহত হয় প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ, গৃহ হারা হয় প্রায় ১.৫০ কোটি মানুষ।
রাত্রি শেষ। শুরু হলো সূর্যোধিত সকাল। সকালে মানুষ প্রত্যক্ষ করলো প্রকৃতির ভয়ঙ্কর লিলাখেলা, বিশ্ববাসী অবাক হল এ ভয়ঙ্কর ধ্বংসলিলা দেখে। বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৫ লক্ষেররও বেশী। ঘুর্ণিঝড়ের এলাকায় এমন পরিবার আছে যারা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছিলো। অনেক পরিবার একের অধিক স্বজনদের হারিয়েছেন। সরকারি হিসেবে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আজ ৩০ বছর পরেও সেই দিনের কথা মনে পড়লে সেই ঝড়ে বেচেঁ যাওয়া উপকূলবাসীর গা'শিউরে ওঠে। তাদের রাতের ঘুম দূর হয়ে যায়।
মহান আল্লাহ সেইসকল মৃত মানুষের আত্মার শান্তি দিক এই কামনা করি।
বছর ঘুরে এপ্রিলের ২৯ তারিখ ঠিকই আসে, আসেনা মায়ের বাবা ডাকা মায়ের সুধামাখা সুর। বোনের চিরচেনা ভাই ডাকা সকাল আর আসেনা। এভাবে ভয়াল দিনটি বড়ই নিষ্ঠুর নীরবতায় কাঁদিয়ে যায় বছরের পর বছর। এভাবে আজ ৩০টি কালো বর্ষ গেল চোখের জ্বলে জলখেলিতে।
স্মৃতিচারণ-
মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন চৌধুরী
বাহারছড়া ইউনিয়ন
(সিনিয়র শিক্ষক: গশ্চি উচ্চ বিদ্যালয়, রাউজান)
বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'র অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।
বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।
আপনার মেইল পাঠাতে:
banshkhalijanaphad24@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন