বাঁশখালী জনপদ সত্যপ্রকাশে আপোষহীন

বিজ্ঞাপন দিয়ে সাথে থাকুন

test

ইনসাফ কোম্পানির প্রফিট রেট

রাফি ছোটকাল থেকে ধার্মিক। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে সে নামাজ রোজা কখনো ইচ্ছে করে কাযা করেনি। স্কুলে পড়ালেখা করলেও সে মাদ্রাসা শিক্ষিত মৌলভীর মত চলাফেরা করে। বড়দের সম্মান, ছোটদের স্নেহ করা সে তার ফ্যামিলি থেকেই শিখেছে। রাফির বাবা-মাও ধার্মিক  মানুষ।কারো সাথেপাঁচে নেই। হকে হালালে জীবনযাপনে অভ্যস্ত। অনাহারে থাকলেও বিধাতার প্রতি তাদের কোনো আক্ষেপ নেই। যখন যা পায় তা নিয়ে শুকর গুজারান করে। শত কষ্টেও তারা ধর্মচ‌্যুত হয়নি। এরকম ধার্মিক ফ্যামিলির ছেলে ধার্মিক হবে এটাই স্বাভাবিক। সম্প্রতি রাফি মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। এখন হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছে। বিভিন্ন কোম্পানিতে কিংবা সরকারি চাকরিতে রিটেন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ভাইভাতে তার আসার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। ভাইভাতে পারে না তা নয়। যে ছেলে প্রতিটি রিটেন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সে ছেলে ভাইভাতে পারবে না তা কি করে হয়? ভাইভার কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। এতদিন পরীক্ষা দিতে দিতে সেটা তার রপ্ত হয়ে গেছে। তবুও কমন উত্তরটি সে দিতে পারে না। রাফি জ্ঞান ভান্ডারে পরিপূর্ণ হলেও অদৃশ্য উত্তরটি সে দিতে অক্ষম। ধারদেনা করে হয়তো গোপন লেনদেনটি করা যেতো । ঘুষের লেনদেন করে চাকরি করবে না এটাই তার সিদ্ধান্ত। কোরআন হাদিস পড়ে সে জেনেছে যারা সুদ -ঘুষ খায় এবং দেয় তারা সমান অপরাধী। সুদ ঘুষের গুনাহের ব্যাপারে সে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। পরীক্ষা দিতে দিতে যখন সে হতাশ হয়ে গেলো তখন ইনসাফ কোম্পানি চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেয়। এ কোম্পানি সম্পর্কে সে আগেই জানতো। তারা শরিয়া মোতাবেক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ কোম্পানির ব্যাপারে তার যথেষ্ট ভালো ধারণা রয়েছে। বলা যায় ছোটকাল থেকে তার স্বপ্ন ছিলো ইনসাফ কোম্পানিতে চাকরি করা। আজ রাফির ভাইভা পরীক্ষা। ভাইভা বোর্ডের লোকদের তার খুব পছন্দ হলো। সবাই ইসলামিক বেশভূষার লোক।ব্যাবসা হালাল সুদ হারাম সম্পর্কে একটি কোরআনের আয়াত জিজ্ঞেস করা হলো তাকে । রাফি সহজেই উত্তর দিয়ে দিলো। ইসলামী শরীয়তের অনেকগুলো প্রশ্ন করা হলো। সে সব প্রশ্নের উত্তর দিলো। ইনসাফ কোম্পানিতে তার চাকরি হয়ে গেলো। স্বপ্নের চাকরি পাওয়ার পর মহানন্দে দিনকাল কাটতে লাগলো তার। ইনসাফ কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারীরা সবাই সততার সহিত কাজ করে। কোম্পানিও এগিয়ে যেতে লাগলো সুনামের সাথে। শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত বলে ইনসাফ কোম্পানি অন্যান্য কোম্পানির মত ডেপোজিটরদেরকে বেশি প্রফিট দিতে পারে না। এটা তাদের পলিসি।

"নিরলস কর্মঠ রাফি কাজ করতে করতে তেল মালিশ করার সময় পায়না। যারা কাম চোর তাদের প্রমোশন ঠিকই হয় কিন্তু রাফির আর হয় না । ইনসাফ কোম্পানির বেইনসাফিতে রাফি আজ প্রতিবাদী হয়ে উঠে। মনের অজান্তে বেরিয়ে আসে, তোরার মারে বাপ, চুদানির পোয়াঅল, হানকির পোয়াঅল, মাগির পোয়াঅল, ইনসাফ কোম্পানির চৌদ্দগুষ্টিরে.... ।"

কিসমত আলীর ২০ লক্ষ টাকা জমা হয়েছিলো। সে টাকাগুলো ব্যাংকে রাখতে চায়। সে শুনেছে ইনসাফ কোম্পানিতে টাকা রাখলে নাকি অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। শরিয়াও মেনটেন করা হয়। কিসমত কোম্পানি অফিসে আসে। রাফির ডেকসে গিয়ে ডেপোজিটের প্রফিট সম্পর্কে জানতে চায়। রাফিও তাদের কোম্পানির শিখিয়ে দেওয়া বুলিতে কিসমতকে উত্তর দিতে থাকে। সে  নির্দিষ্ট করে প্রফিট রেট বলতে পারেনা। নির্দিষ্ট করে বললে নাকি সুদ হয়ে যায় । যেহেতু ইনসাফ কোম্পানি সুদের ব্যবসা করে না তাই প্রফিট রেটও নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। কিসমত ইনসাফ কোম্পানিতে আসার আগে আরও দুই একটা ব্যাংকে প্রফিট যাচাই করে এসেছে। ওই ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট হারে প্রফিটের রেট বলে দিয়েছিলো। তখন কিসমত লোনের প্রফিট রেটের কথা জিজ্ঞেস করে। রাফি লোনের নির্দিষ্ট রেট গুলো কিসমতকে বলে। কিসমতের খটকা লাগে যারা ডেপোজিটের প্রফিট রেট নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনা তারা আবার লোনের প্রফিট রেট নির্দিষ্ট করে কিভাবে বলে ‌? এটা কি সত্যিই শরীয়া। নাকি শরীয়ার নামে ভন্ডামি। কিসমতের মাথায় দ্বন্দ্ব ঘুরপাক খেতে থাকে। সে কোনভাবেই হিসেব মিলাতে পারে না। যেখানে লোনের প্রফিট  রেট বলা যায় কিন্তু ডেপোজিটের প্রফিট রেট বলা যায় না, এটা কোন ধরনের শরিয়া। রাফির মনেও প্রশ্ন জাগে? এতদিন সে ইনসাফ কোম্পানিতে চাকরি করে গর্ববোধ করতো। সে রাফির মনেও দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করতে শুরু করে।

ইনসাফ কম্পানি দেশের প্রসিদ্ধ কোম্পানিতে রূপ নিলো। শত শত কোটি টাকা আয় করতে লাগলো। আয়ের পাল্লা যত ভারী হচ্ছে ততই ইনসাফ কোম্পানির সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিবছর কর্মচারীদের প্রমোশন দেওয়া হয়। প্রমোশন প্রাপ্তরা মহা আনন্দে ভোজন করিয়ে থাকেন। যারা নিরলস ভাবে কাজ করে তৈল মালিশ করে না তাদের প্রমোশন হয় না। পরিচয় ছাড়া ইনসাফ কোম্পানিতে প্রমোশনের তেমন একটা সুযোগ নেই। কাজির গরু কেতাবে কলমের মত শরীয়ার নীতিমালায় লিপিবদ্ধ থাকে। এসব দেখতে দেখতে রাফি আজ ক্লান্ত। রাফি দীর্ঘ চাকুরী জীবনে ইনসাফ কোম্পানির অনেক সুনাম ছড়িয়ে দিলেও যে চেয়ারে সে বসেছিলো সেই চেয়ারের পরিবর্তন হয় না। তার সম ক্যাটাগরির অফিসাররা কেউ কেউ এমডি, ডিএমডি কিংবা ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার হয়ে গেছে। নিরলস কর্মঠ রাফি কাজ করতে করতে তেল মালিশ করার সময় পায়না। যারা কাম চোর তাদের প্রমোশন ঠিকই হয় কিন্তু রাফির আর হয় না । ইনসাফ কোম্পানির বেইনসাফিতে রাফি আজ প্রতিবাদী হয়ে উঠে। মনের অজান্তে বেরিয়ে আসে, তোরার মারে বাপ, চুদানির পোয়াঅল, হানকির পোয়াঅল, মাগির পোয়াঅল, ইনসাফ কোম্পানির চৌদ্দগুষ্টিরে.... ।

লেখক- জসিম মনছুরি

(কবি ও কথাসাহিত্যিক)



বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র,  রেখাচিত্র,  ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।

বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।

আপনার মেইল পাঠাতে:

banshkhalijanaphad24@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.