বাঁশখালী জনপদ সত্যপ্রকাশে আপোষহীন

বিজ্ঞাপন দিয়ে সাথে থাকুন

test

"গণঅভ্যুত্থান ও রাষ্ট্রপতি প্রসঙ্গ" ||জসিম উদ্দিন মনছুরি||

রকার যখন সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা, খুন ,গুম, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। পৃথিবীর অনেক দেশে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হয়েছে। সরকার জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে একসময় জনগণও সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। যার প্রমাণ জুলাই বিপ্লব ২০২৪। বিগত সরকার জনগণের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে সব রকমের প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে। প্রতিবাদ করার জন্য কাউকে প্রতিপক্ষ রাখেনি। সমালোচনা দূরে থাক পান থেকে চুন খসলে নিরীহ জনগণকে কারাবরণ করতে হয়েছে। হত্যা, গুম, দুর্নীতিতে বিগত সরকার নজির স্থাপন করে গেছে। স্বাধীনভাবে কেউ চলাফেরা করতে পারেনি। পুলিশকে নিজেদের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন। নিরপরাধ মানুষকে বছরের পর বছর জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে থাকতে হয়েছে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে দেশের জনগণ চরমভাবে অসন্তুষ্ট হয়েছে। ১৮০০ কোটি টাকার প্রকল্পকে দুর্নীতি করে ১৮ হাজার কোটি টাকায় পরিণত করা হয়েছে। ভাগ বাটোয়ারা করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। প্রবাসীরা বিশ্বাস হারা হয়ে প্রপার চ্যানেলে টাকা না পাঠালে বৈদেশিক মুদ্রায় নামে ধ্বস। অর্থ পাচারের ফলে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে চলে গেছে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। লোন জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে  ডেপোজিট শূন্য করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আত্মীয় করণের মাধ্যমে নিজেদের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি, ক্ষমতার সীমাহীন দাপট, দলীয়করণ, বাক স্বাধীনতা হরণ, জুলুম-নির্যাতন, হত্যা,ধর্ষণ ও লুটপাটে যখন বিগত সরকার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে ওঠে‌। ছাত্র জনতার সমন্বয়ে জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়। কঠোর আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে পালাতে বাধ্য হয়। গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশের অধিকাংশ জনগণ সাধুবাদ জানায়। গণঅভ্যুত্থানের সরকার মানে জনগণের সরকার। এর আগেও দেশে বেশ কয়েকটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান, সর্বশেষ দুই হাজার চব্বিশ সালের পাঁচ  আগস্ট গণঅভ্যুত্থান। জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে গেলে তারা মৃত্যুকে পরোয়া করে না । অস্ত্রের মুখে দুঃসাহসী হয়ে এগিয়ে যায়। ফলে অস্ত্রধারী সৈনিকেরা পরাভূত হয়ে নিরস্ত্র জনগণ বিজয়ী হয়। ২৪ বিপ্লবে হাসিনা সরকার সব রকমের প্রচেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ছাত্র জনতা বিজয় লাভ করে। ৫ আগস্ট ২০২৪ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পলায়ন করতে বাধ্য হয়। ঐদিন রাতে রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। তিনি তা গ্রহণ করেছেন। ফলে পদত্যাগ একটি মীমাংসিত বিষয়। গণঅভ্যুত্থান সংবিধান মেনে হয় না। সরকার সংবিধান পরিপন্থী কাজ করে বলে জনগণ সংবিধান রক্ষার্থে গণঅভ্যুত্থান রচনা করে ।

২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানও সংবিধান মেনে হয়নি । গণঅভ্যুত্থানে দেশের আপামর জনসাধারণের সমর্থন ছিলো বলে গণঅভুত্থান সফল হয়েছে এবং স্বৈরাচারী সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়েছে। বিগত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করুক আর নাইবা করুক তাকে পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। সুতরাং পদত্যাগের বিষয়টি হাস্যকর একটি ব্যাপার। আওয়ামী সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রায় তিন মাস সময় রাষ্ট্র শাসন করার প্রাক্কালে একটি সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিয়ে আগুনে ঘি ঢ়েলে দিলেন। যা রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য কাম্য ছিলো না। একটি মীমাংসিত বিষয়কে তিনি কঠিন করে ফেললেন। পদত্যাগের বিষয়টি আসায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্ববিরোধিতা পরিলক্ষিত হয়। রাষ্ট্রপতি থাকবেন সকল দোষ ত্রুটির ঊর্ধ্বে। এজন্য তাকে বলা হয় মহামান্য রাষ্ট্রপতি।
আইনজ্ঞরা মনে করছেন রাষ্ট্রপতি স্ববিরোধী বক্তব্য দেয়ায় তার শপথ ভঙ্গ হয়েছে। ফলে তিনি রাষ্ট্রপতি থাকার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। ছাত্র-জনতা দেশের আপামর জনগণ পুনরায় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলনে ডাক দেন। ফলে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এরকম পরিবেশের উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রপতির উচিত স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে নিজের সম্মান সমুন্নত রাখা। নিজেকে প্রশ্নের উর্ধ্বে রাখা। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তা না করে নিজের পদ ছাড়তে এখনো রাজি হননি। ফলশ্রুতিতে আন্দোলনের মাত্রা দুর্বার হয়ে উঠেছে। গতকাল তার বাসভবন বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হয়। যা রাষ্ট্রপতির জন্য লজ্জাজনক। সুশীল সমাজ মনে করে রাষ্ট্রপতির  শুভবুদ্ধির উদয় হলে  তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে নিজেকে দোষত্রুটির উর্ধ্বে রাখবেন। যতদূর জানা গেছে সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন রাষ্ট্রপতি স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। মিডিয়া সূত্রে জানা যায় আইন উপদেষ্টার বক্তব্যই সরকারের বক্তব্য। তাহলে সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রায়াস হচ্ছে রাষ্ট্রপতিকে হটানো। টেনে হিছড়ে নামানোর ছেয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা অনেকটা সম্মানের ব্যাপার। রাষ্ট্রে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্রপতি হয়তো শুভ বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে পদত্যাগ করবেন বলে দেশের জনগণের প্রত্যাশা। কলঙ্কিত হয়ে ক্ষমতা অধিষ্ঠিত থাকার চেয়ে সসম্মানে পদত্যাগ করাই উত্তম নয় কি? দেশের জনগণের প্রত্যাশা খুব দ্রুত সময়ে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করে দেশের কল্যাণের পথকে ত্বরান্বিত করবেন।


লেখক:::কবি ও কথাসাহিত্যিক
-জসিম উদ্দিন মনছুরি 




বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র,  রেখাচিত্র,  ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।

বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।

আপনার মেইল পাঠাতে:

banshkhalijanaphad24@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.