সরকার যখন সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা, খুন ,গুম, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। পৃথিবীর অনেক দেশে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হয়েছে। সরকার জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে একসময় জনগণও সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। যার প্রমাণ জুলাই বিপ্লব ২০২৪। বিগত সরকার জনগণের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে সব রকমের প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে। প্রতিবাদ করার জন্য কাউকে প্রতিপক্ষ রাখেনি। সমালোচনা দূরে থাক পান থেকে চুন খসলে নিরীহ জনগণকে কারাবরণ করতে হয়েছে। হত্যা, গুম, দুর্নীতিতে বিগত সরকার নজির স্থাপন করে গেছে। স্বাধীনভাবে কেউ চলাফেরা করতে পারেনি। পুলিশকে নিজেদের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন। নিরপরাধ মানুষকে বছরের পর বছর জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে থাকতে হয়েছে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে দেশের জনগণ চরমভাবে অসন্তুষ্ট হয়েছে। ১৮০০ কোটি টাকার প্রকল্পকে দুর্নীতি করে ১৮ হাজার কোটি টাকায় পরিণত করা হয়েছে। ভাগ বাটোয়ারা করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। প্রবাসীরা বিশ্বাস হারা হয়ে প্রপার চ্যানেলে টাকা না পাঠালে বৈদেশিক মুদ্রায় নামে ধ্বস। অর্থ পাচারের ফলে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে চলে গেছে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। লোন জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ডেপোজিট শূন্য করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আত্মীয় করণের মাধ্যমে নিজেদের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি, ক্ষমতার সীমাহীন দাপট, দলীয়করণ, বাক স্বাধীনতা হরণ, জুলুম-নির্যাতন, হত্যা,ধর্ষণ ও লুটপাটে যখন বিগত সরকার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে ওঠে। ছাত্র জনতার সমন্বয়ে জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়। কঠোর আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে পালাতে বাধ্য হয়। গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশের অধিকাংশ জনগণ সাধুবাদ জানায়। গণঅভ্যুত্থানের সরকার মানে জনগণের সরকার। এর আগেও দেশে বেশ কয়েকটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান, সর্বশেষ দুই হাজার চব্বিশ সালের পাঁচ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান। জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে গেলে তারা মৃত্যুকে পরোয়া করে না । অস্ত্রের মুখে দুঃসাহসী হয়ে এগিয়ে যায়। ফলে অস্ত্রধারী সৈনিকেরা পরাভূত হয়ে নিরস্ত্র জনগণ বিজয়ী হয়। ২৪ বিপ্লবে হাসিনা সরকার সব রকমের প্রচেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ছাত্র জনতা বিজয় লাভ করে। ৫ আগস্ট ২০২৪ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পলায়ন করতে বাধ্য হয়। ঐদিন রাতে রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। তিনি তা গ্রহণ করেছেন। ফলে পদত্যাগ একটি মীমাংসিত বিষয়। গণঅভ্যুত্থান সংবিধান মেনে হয় না। সরকার সংবিধান পরিপন্থী কাজ করে বলে জনগণ সংবিধান রক্ষার্থে গণঅভ্যুত্থান রচনা করে ।
২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানও সংবিধান মেনে হয়নি । গণঅভ্যুত্থানে দেশের আপামর জনসাধারণের সমর্থন ছিলো বলে গণঅভুত্থান সফল হয়েছে এবং স্বৈরাচারী সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়েছে। বিগত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করুক আর নাইবা করুক তাকে পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। সুতরাং পদত্যাগের বিষয়টি হাস্যকর একটি ব্যাপার। আওয়ামী সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রায় তিন মাস সময় রাষ্ট্র শাসন করার প্রাক্কালে একটি সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিয়ে আগুনে ঘি ঢ়েলে দিলেন। যা রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য কাম্য ছিলো না। একটি মীমাংসিত বিষয়কে তিনি কঠিন করে ফেললেন। পদত্যাগের বিষয়টি আসায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্ববিরোধিতা পরিলক্ষিত হয়। রাষ্ট্রপতি থাকবেন সকল দোষ ত্রুটির ঊর্ধ্বে। এজন্য তাকে বলা হয় মহামান্য রাষ্ট্রপতি।
বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'রঅনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।
banshkhalijanaphad24@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন