বাঁশখালী জনপদ সত্যপ্রকাশে আপোষহীন

বিজ্ঞাপন দিয়ে সাথে থাকুন

test

রিকশা আছে তবে সেকেলের অতীত নেই!

রিকশা আছে তবে সেকেলের অতীত নেই!

অতীত হারিয়ে গেলে হয় স্মৃতি। নতুবা ইতিহাস। অতীত আবার কখনো কখনো হাস্যকর ড্রামা। কিন্তু অতীত অতীতই। ফিরছি আমার দাদির যুগে....। তখন মেয়েরা বাপের বাড়িতে নাইওর যেতে কিংবা শ্বাশুড় বাড়ীতে চলে আসতে, বাইরে আসা-যাওয়া করতে, জরুরী বের হতে নারীদের জন্য প্রধান যানবাহন ছিলো রিকশা। বিয়ের দিন তো পাল্কি বাধ্যতামুলকই ছিলো। কোণঠাসা করে নতুন বউ সাথে তার শ্বাশুড়ী কিংবা তার দাদী পাল্কিতে চড়তো। দেখলেই মনে হতো বদ্ধ কাচের ঘর তবে কার্বনডাইঅক্সাইড বিহীন একটি পরিবেশ। বেহারাদের কাঁধে চড়ে নতুন বউ দেখতো স্বামীর বাড়ী। দেখা হতোনা পথের কোন দৃশ্য, হতোনা কোন উঁকিঝুকি!

চলেছি রিকশা সমাচারে: রিকশা প্রথম অাবিস্কার করেছিল জাপান। এই জন্য রিকশা জাপানী শব্দ। তাদের কাছে প্রাথমিক দিক থেকে রিকশা ছিলো উন্নত যানবাহন। সভ্যতার চরম উৎকর্ষতায় নতুন নতুন যানবাহন অাবিস্কারের সাথে সাথে পুরো জাপানে রিকশা আছে মাত্র একটি! অবাক হওয়ার কিছু নাই। রিকশাটা তাদের পুরোনো যানবাহন হিসেবে স্মৃতি করে রাখার জন্য যাদুঘরে রাখা হয়েছে। আমাদের গ্রামীন সংস্কৃতির ইতিহাসে অন্যতম যাবাহন ছিল রিকশা। গ্রামিন যাতায়তের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিলো এই যানবাহন। তখনকার রিকশায় ছড়ানোর সংস্কৃতিই ছিলো আজব। নতুন বউ কিংবা পুরাতন, যুবতি কিংবা বৃদ্ধা সকলেই রিকশায় চড়তো যখন, তখন তারা কাপড় পেঁচিয়ে রাখতো পুরো রিকশা জুড়ে। বলতে গেলে বদ্ধঘর। পর্দার সাতকাহন পালিত হতো তখন। নিচ্ছিদ্র বেষ্টনীতে নির্ভীগ্নে যাতায়ত করতো সেকালের নারীরা। গন্তব্যে যাচ্ছে কিনা, গন্তব্য অতিক্রম করে যাচ্ছে তা যাত্রী আঁচ করতে পারতোনা। রিকশাচালক যদি বলতো গন্তব্যে এসেছি তখনই তারা রিকশা ছাড়তো।

তারা বাহিরে যেমন কঠোর পর্দা করতো, তেমনি বাড়িতেও করতো। অনেক শ্বাশুড় বিয়ের প্রথমদিন দেখেছিল নিজের পুত্রবধুকে। এর পর থেকে অদৃশ্যে সেবা ছিল আপন আলয়ে। তারা এখনো পর্দা করে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছে, চুল পেঁকেছে, দাঁত পড়ে গেছে, শারীরিকগঠনে জীর্ণতার আবরণ অতচ নিভু নিভু ঝাপসা চোখে কোন পুরুষ দেখলেই মাথার কাপড়টা টেনে নিয়ে ঘোমটা করে নেয়। পর্দার সাতকাহন তারা আজোও মেনে চলে ৭০-১০০ বছর বয়সের নারীরাও। বর্তমান নারীরা তার বিপরীত। পুরুষ দেখলেই নিজেকে প্রদর্শন করতে ব্যতিব্যস্ত। মাথায় কাপড়টা থাকলে কোন সুপুরুষের দর্শনে তাও ঢলে পড়ে রুপদর্শনে। পর্দা এখন তাদের কাছে চিরতার রস! বড়ই তেঁতো। তৎকালে নারীরা ছিলো স্বর্ণের দোকানের স্বর্ণের চেয়েও মুল্যবান। কতো নিরাপত্তায় তারা ছিলো, তা বুঝতো যারা অতীত দেখেছে, অতীত জেনেছে। তখন নারীরা পথে ঘাটে ধর্ষিতা হতোনা, নির্যাতীত হতোনা, এসিডে দগ্ধ হতে হতোনা, খুন-গুম হয়নি নারীরা। আজকাল নারীরা চায়ের দোকানের খোলা মিষ্টির মতো! যত্রতত্র তাদের বিচরণ। মশা মাছি ওই মিষ্টির উপর তো বসবেই। আজকাল মশা-মাছিদের দৌড়ঝাপ বেড়েছে। আজকাল নারীরা খোলাবাজারে মিষ্টির দোকানের মতোই। তাই আজ নারী ধর্ষিত, লাঞ্চিত, নির্যাতীত, নিপীড়িত। সেকালের নারী আর বর্তমানের নারীদের এ টুকুই পার্থক্য পরিলক্ষিত।

আবার ইচ্ছে করছে পুরনোর হাতছানিতে হাত বাড়াতে। ইচ্ছে করছে অতীতে ফিরে যেতে। এখানে নির্মল বাতাস পেতাম, শান্তির বাতাস! খুঁজে পেতাম স্বস্তির নিঃশ্বাস। মুক্ত হতাম নানা অশংকা থেকে। পর্দার সাতকাহনে কবর রচিত হতো বর্তমান সময়ের ধর্ষণ নামের নারী নির্যাতন। আমার দাদীর বর্তমান বয়ষ ১০৮ বছর! শোকরিয়া আল্লাহর কাছে, তিনি এখনো চশমা ছাড়া কোর-আন পড়ে। এখনো স্পষ্ট চোখে দেখে। তিনি এখনো আমাদের (নাতির) কাছে পর্দা করে। ঘরের বউ ঝি'দের চালচলন দেখলে তার ধম বন্ধ হয়ে যায়। দাদি চলে যাবে ত দাদি'দের পুরনো সংস্কৃতি চলে যাবে। হ্যাঁ রিকশাটা আছে মাত্র ধরণটা পাল্টে গেছে। পাল্কিটা নেই তো দাদি'দের যেহেতু বিয়ে হয়েগেছে। নতুন যুগের দাদিরা আর পাল্কিতে চড়েনা, পাল্কিও আজ বিলুপ্ত। রিকশাটা আছে তবে পিছনের অংশ খালী, সামনের পর্দা তো সদরঘাট।

সম্পাদকীয়-
শিব্বির আহমদ রানা, লেখক-সাংবাদিক

ই-মেইল: shibbirahmed90@gmail.com


কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.