চৌম্বক তথ্য: উপন্যাস 'সংসার দুঃখ'
★পরিবারের দায়িত্ব বহন করতে গিয়ে চার চার বার এস.এস.সি ব্যর্থ হওয়া। অবশেষে ৫ম বারে সফল। ★১৫ বছরের সংসারে ৮ বার পাগল হওয়া। ★সংসার জীবনে নানান সময়ে অত্যাচারিত নির্যাতিত হওয়া ★জখমের দাগগুলো দিয়ে পঁচে যাওয়া মাংস। রক্ত ঝরে ক্ষতের সৃষ্টি ★ সুখের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছিল অারব-আমিরাতে । ★আরব-আমিরাত শহরে সন্তান জন্ম দেওয়া সেই শিশু কিভাবে অন্য বিদেশি মায়ের বুকের দুধ পান করে? ★ ৩ দিনের শিশুকে আইসিউ'তে রেখে আবার পাগল হয়ে যাওয়া সেই নারী। ★সেই পাগল নারীকে নিয়ে বিমান বন্দরে দৌঁড়ে ছুটে চলা ওই দুঃখনী নারীর স্বামী। ★আসছে শীঘ্রই.. এখন গল্পের রিভিউ হৃদয়স্পর্শী ঘটনাগুলো গল্পকারে পড়া যাক...
সকাল বেলায় শুনলাম অরিনা-আপুর নাকি বিয়ে! অরিনা-আপু আমার বড় বোন। সবেমাত্র কলেজে পা দিয়েছে। তখন আমার বয়স সাত বছরের কাছাকাছি। আপুকে সেই ছোট্ট বেলা থেকে ভীষণভাবে ভালবাসি। আপু যখন পড়তো, তখন তাঁর কাঁধে উঠে দু'পা দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে মাথায় উঁকুন মারতাম।
সাঁঝ-সকালে এমন একটি খবর শুনে খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু বিয়ে মানে যে, আপুকে অন্যের ঘরে চলে যেতে হবে বয়সটা তখনো বুঝার মতো হয়নি। দুপুরে বরের প্রাইভেট কার এসেছে বাড়ির সামনে। কেউ একজন আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল, উনি তোমার দুলাভাই। দুলাভাই আমাকে জোর করে কোলে নিতে চাইছে আমি ভয়ে কান্না শুরু করে দিলাম। তাকে চিনিনা অতচ আমাকে কেন কোলে নিবে?
বিকেল বেলা, আপু চলে যাচ্ছে আমি একটু দূর থেকে লক্ষ্য করছি সব। আপু সবাইকে জড়িয়ে ধরে অজোরে কান্না করছে। আমি খালা'কে বললাম আপু কান্না করে কেন? তখন তিনি বললেন, তোর আপু চলে যাচ্ছে এই বাড়ি ছেড়ে, দেখিস না বিয়ে হই গেছে! মনে হলো আকাশ থেকে মাটিতে পড়লাম।
এক দৌঁড়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আপুকে। কোন মতেই ছাড়ছি না। কেউ ছাড়িয়ে আনলে আবার গিয়ে জড়িয়ে ধরছি। শেষ-মেষ আপুর কোলে গিয়ে বসে পৌঁছালাম আপুর নতুন শুশুর বাড়িতে।
মন খারাপ; খুবই খারাপ। কিছুই বিশ্বাস করতে পারছি না। বিয়ে-টিয়ে এগুলো বিশ্বাস হচ্ছে না কিছুই না। কি হচ্ছে এসব আমার সাথে! অরিনা-আপুকে বললাম তুমি আর যাবে না বাড়িতে? আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, যাবো ছোট ভাই যাবো, এই তো ক'দিন পরেই তো যাচ্ছি।
প্রায় দু'এক বছর পর। আম্মাকে কল দিল অরিনা-আপুর শুশুর বাড়ি থেকে। জানাল, অরিনা আপু মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। হ-য-ব-র-ল কথা বার্তা বলছে। আসবাবপত্র ভাংচুর করছে, কাউকে কাছে যেতে দিচ্ছে না। উপায়ন্তর না দেখে আম্মু গিয়ে অরিনা-আপুকে নিয়ে আসলো বাড়িতে। ক'দিন আগেই সুস্থ মানুষটি আজ আস্ত পাগল-ভারসাম্যহীন দেখছি! কিচ্ছু বুঝছি না। জানিনা কি হয়েছে আপুর সাথে। অরিনা-আপুর গায়ে প্রচন্ড ক্ষত চিহ্ন, যত্রতত্র আঘাতের চিহ্ন, আপু ব্যাথ্যায় দাঁড়াতে পারছে না, শরীর ভেঙ্গে গেছে একেবারে।
একমাস পর!
একটু শারীরিক ভাবে সুস্থ অরিনা-আপু। বাড়ির আসবাবপত্র ভাংচুর করছে এরই মধ্যে। বাধ্য হয়ে একটি রুমে আটকে রাখা হলো অরিনা-আপুকে। আপুকে আটকে রাখা ওই রুমের পেছনে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আপু বলল, ভাইয়্যু, "ওরা আমাকে খুব মেরেছে এই দেখ হাতে দাগ, ওরা নাকে আমাকে কোমর-বেল্ট দিয়ে সজোরে আঘাত করেছে নাকের ক্ষত এখনো কালো হয়ে আছে দেখ দেখ... কপালে-পিঠে জখম হয়ে আছে দেখ... আমাকে আর ওখানে পাঠিয়ে দিস না ভাই, আমি আর যাবো না ওরা আবার মারবে আমাকে''....
দূরে কোথাও তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস তুলে কান্না করছে অরিনা-আপু। ডাক্তার বলেছে, আপুর নাকের ব্যাথ্যা যেকোন সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
ছয়মাস পরে! অরিনা-আপু পুরোপুরি সুস্থ। দুলাভাই সিদ্ধান্ত নিলেন, আপুকে দেশে রাখবে না। বলে রাখছি আপুর স্বামী প্রবাসী। বিয়ের কিছুদিন পরে তিনি বাইরে চলে যান। সেই কারণে আজ আপুর এমন করুণ অবস্থা। দুলাভাই অারব-আমিরাতে নিয়ে যাবেন আপুকে। কিছুদিন পরে আপুকে নিয়ে যাওয়া হল আরব-আমিরাতে। সেখানে অরিনা-আপুর ফুট-ফুটে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই, নাকের ইনফেকশনের কারণে আপু আবার মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। ওদিকে সবেমাত্র আগত শিশুটি এখনো মায়ের বুকের দুধ পর্যন্ত পান করতে পারেনি। শিশুটিকে আই.সি.উ'তে ভর্তি করানো হয়েছে। একদিকে অাপু ভারসাম্যহীন-পাগল; অন্যদিকে সন্তান আই.সি.ইউ'তে। অরিনা-আপুর স্বামী পাগলের মতো একবার আপুর বেডে আরেকবার সন্তানের বেড়ে ভবঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
তিনদিন পরে! আরব-আমিরাতের হাসপাতালের মহিলা ডাক্তারের করুণায় অরিনা-আপুর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াছেন ছোট্ট নল দিয়ে আজ তিন দিন ধরে। এমন উপকারের জন্য অরিনা-আপুর স্বামী উনার কাছে চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকবেন। আপু কিছুটা সুস্থ। ওদিকে টানা তিনদিন না ঘুমিয়ে অরিনা আপুর স্বামীর শরীর ভেঙ্গে পড়েছে একেবারে। তাকে একায় সব সামাল দিতে হয়েছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, এরকম পরিস্থিতিতে কাউকে বাঁচানো যাবে না। তাই দেশে ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত তিনি।
সাতদিন পর! যথারীতি দুলাভাই টিকিট কেটেছেন দেশে ফেরার জন্য। বিমান বন্দরে বাচ্চাটিকে স্টিয়ারে বসালেন। অরিনা-আপু এতোটা অসুস্থ যে হাঁটার শক্তিটুকু হারিয়ে গেছে। দুলাভাই আপুকে কোলে নিয়ে বিমানের পিছে ছুঁটে চলেছেন। প্রচন্ড কষ্টের মধ্য তিনি বিমানে আপুকে এবং বাচ্চাসহ সিট ধরে বসলেন। আপুকে বললেন দুলাভাই, ''আজ সপ্তাহ ধরে শরীরের আয়ু মনে হচ্ছে অনেকটা বছর কমে গেছে; পারিনি তোমায় সুখের নীড়ে আগলে রাখতে। সরি...! আপুকে জড়িয়ে ধরে তিনি বিমানের বাইরে তাকিয়ে আছেন....
চলবে......
উপন্যাস রিভিউ: সংসার দুঃখ
লেখক: শাহাদাত কবির আবতাহী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন