বাঁশখালী জনপদ সত্যপ্রকাশে আপোষহীন

বিজ্ঞাপন দিয়ে সাথে থাকুন

test

নতুন সাজে বাঁশখালী ইকোপার্ক, ভ্রমণপিয়াসীদের বিনোদনের হাতছানি দিচ্ছে


শিব্বির আহমদ রানা: প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে পর্যটনপ্রেমীরা প্রিয় মুহূর্তগুলো একান্ত পার করছে বাঁশখালী ইকোপার্কে। তরুণ-তরুণী, আবাল বৃদ্ধা-বণিতা সকলের একমাত্র বিনোদনের স্পটে রুপ নিয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন স্পট বাঁশখালী ইকোপার্কটি। হৃদয় নিংড়ানো আঁকাবাঁকা পাহাড়ি সড়ক, চারপাশে ঘন সবুজের সমারোহ, বন্যহাতির বিচরণ, চেনা-অচেনা পাখির মন-মাতানো কিচিরমিচির শব্দ, শীতের অতিথি পাখির বিচরণ, দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু, সুউচ্চ টাওয়ার, অজস্র মন কাড়া বিনোদনের বিপুল সমাহার, মনোহারিণী বামের ও ডানের ছড়া লেকের ঝর্ণা—কী নেই এখানে! বহুমুখী আরণ্যক সৌন্দর্য ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী বাঁশখালী ইকো-পার্ক পর্যটকদের কাছে টানে। বাংলাদেশের একমাত্র দীর্ঘতম ঝুলন্ত (১২২ মিটার/৪০০ ফুট) সেতুটিই এখানে অবস্থিত। স্বচ্ছ জলরাশি, শরতের কাশফুলের দৃশ্য ও বন্যপ্রাণীর হাঁকডাক, ঝাঁকে ঝাঁকে আসা শীতের অতিথি পাখির কলরব আর প্রকৃতি সেখানে এক অন্যরকম মায়ার অনুভূতি তৈরি করে। একেক ঋতুতে একেক রকম রূপ এই ইকোপার্কের। সারি সারি পাহাড় চূড়ায় নানা প্রজাতির বৃক্ষের সমাহার গ্রাম্যবধূর মতোই শান্তরূপ নিয়ে যেন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে উঁচু-নিচু পাহাড় গুলো। সুউচ্চ পাহাড়ের শীর্ষে ওঠে অনায়াসে দুরবীন ছাড়া খালি চোখেই দেখা যায় অদূরে বঙ্গোপসাগরের অথৈই জলরাশি। বিকালে উপভোগ করা যায় সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য। মনের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে নেওয়ার এক অপূর্ব সমন্বয় বাঁশখালী ইকো-পার্ক। কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও বাঁশখালী চ্যানেল নিয়ে সংযোজিত মোহনায় সামুদ্রিক জলের নানা বর্ণিল দৃশ্য সহজেই উপভোগ করা যায় সু-উচ্চ টাওয়ারের চূড়া থেকে।
পর্যটকদের স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়ে আছে ইকোপার্কের প্রধান গেইট। ছবি: বাঁশখালীজনপদ

এখানে সবসময় বিনোদনপ্রেমীদের ভীড় লেগে থাকে দেখার মতো। দূর দেশ থেকে আগত অতিথি পাখিদের কলকাকলি এবং বিনোদনপ্রেমীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে এ ইকোপার্ক। দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা বাঁশখালী ইকোপার্কে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। একদিকে গান-বাজনা অন্যদিকে অতিথি পাখির কলতান সব মিলিয়ে বাঁশখালী ইকোপার্ক বেশ জমে উঠে বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণায়।বাঁশখালী ইকো-পার্কে রয়েছে পিকনিক সেট, দ্বিতল রেস্ট কর্নার, দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু, সাসপেনশন ব্রিজ, দোলনা, স্লিপার, দ্বিতল রেস্ট হাউস, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ব্যারাক ৪ ইউনিট, গেট, প্রধান ফটক, পাখি ও বন্যপ্রাণী অবলোকন টাওয়ার, ভাসমান প্লাটফরম, লেক, কংক্রিটে শাবের ছাতা, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, ফেনোরোমিক ভিউ টাওয়ারসহ নানা বিনোদনের ক্ষেত্র। প্রধান সড়ক থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশমুখে আগন্তুকদের স্বাগত জানায় প্রধান ফটক বা গেইটি। ইকোপার্কে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে সবুজ পাহাড়ের হ্রদের পানির সঙ্গে নীল আকাশের লুকোচুরি খেলা, পাখির কোলাহল, ডাহুকের কিচিরমিচির ডাক, হ্রদের পানিতে স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে হ্রদে ভ্রমণ অদূরে হারিয়ে যাওয়া। লেকে মাছ ধরার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পর্যটকদের পিকনিক স্পট। যেনো শ্রেষ্ট বিনোদনের একমাত্র নন্দিত আয়োজন, প্রকৃতির কোন এক রাজার রাণী।
বাঁশখালী ইকোপার্কের ঝুলন্ত সেতুতে উপচেপড়া দর্শনার্থীদের ভীড়। ছবি: বাঁশখালীজনপদ
গত শুক্রবার ছুটির দিনে পার্কে গিয়ে দেখা মেলে পর্যটকের ভীড়ে মুখরিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে আগত এক পর্যটক ইকবাল হোসেন বলেন, 'ইকো-পার্কে এসে আমরা সবাই অবশ্যই আনন্দিত। এখানে বিশাল সবুজের এক বিচিত্র সমাহার। দু'চোখ যে দিকে যায় মন কাড়া সৌরভে হারিয়ে যেতে মন চায়। বিশাল সবুজের বিচরণক্ষেত্র সত্যিই বাংলাদেশে অদ্বিতীয় একটি স্পট বাঁশখালী ইকোপার্ক। লেকের স্বচ্ছ পানিতে কোয়াক আর স্পীডবোটে ছড়ারনোর মজাই আলাদা। উপভোগ করার মতো স্বপ্নের একটি পর্যটন স্পট বাঁশখালী ইকো-পার্ক।'
বামের ছড়া লেকের স্বচ্ছ জলরাশিতে স্পীডবোটে পর্যটকের ভীড়। ছবি: বাঁশখালীজনপদ
হাবীবুল করিম নামের এক পর্যটক বলেন, 'এখানে খাবার দোকানসহ প্রসাধনীর আরো দোকান থাকলে ভাল হতো। এখানে আরো সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে এখান থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারবে। বিশাল পার্কজুড়ে পর্যটকদের ছুটাছুটি এবং অতিথি পাখির কলকাকলিতে বাঁশখালী ইকোপার্ক এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। তবে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের দোকান না থাকায় খাবার খেতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছেও বলেন তিনি।'
নয়নাভিরাম ডানের ছড়া লেকে মিনি স্পীডবোটে বিনোদন নিচ্ছে দর্শনার্থীরা। ছবি: বাঁশখালীজনপদ
পার্কের ইজারাদার মোঃ আব্দুস শুকুর বলেন, 'আমরা পর্যটকদের যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থায় সবসময় নজরদারীতে থাকি। এখানে পর্যটক নিজের মতো করে প্রকৃতির সাথে হারিয়ে যাক অানন্দে সেটাই আমাদের কাম্য। দীর্ঘ ১০ বছর পর পার্কের সংস্কার কাজ করায় বামের ছড়া লেকে জমেছে স্বচ্ছ জলরাশি। বহুগুনে বেড়েছে সৌন্দর্য। দেশীয় ও বিদেশীয় পর্যটকে মুখরিত হচ্ছে পার্কটি। বর্তমানে এ পার্কে আগত পর্যটকদের সর্বপ্রকার নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বাড়তি বিনোদনের ব্যবস্থা থাকায় পর্যটকরা নিশ্চিন্তে আনন্দ উপভোগ করছেন।'
পূর্ব ও পশ্চিমের পাহাড়ে অবস্থিত সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসমূহ। ছবি: বাঁশখালীজনপদ
বাঁশখালী ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. অানিসুজ্জামান শেখ জানান, 'বিগত ২০০৮ সালের আগষ্ট মাসে প্রলয়ংকরী বন্যায় ইকোপার্কের বামের ছড়া বাঁধ ও বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে যাওয়ায় অনেকটা পর্যটক বিমুখ হয়ে পড়ে। তারপরেই বনবিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা কর সম্প্রতি এই বাঁধ সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৪ কোটির বরাদ্দ সাপেক্ষে ইকোপার্কের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে বর্তমানে বামের ছড়ার লেকের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। ২০১৬ ও ২০১৭ অর্থ বছরে ঝুলন্ত সেতু মেরামত এবং বিভিন্ন কর্টেজে সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এছাড়া ঐরাবতী রেষ্ট হাউজসহ অন্যান্য ভবনের উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং ইকোপার্কের আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে। আশারাখি অচিরেই ইকোপার্ককে আরো সমৃদ্ধ করে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে তোলা হবে। বর্তমানে বাঁশখালী ইকোপার্ক সবুজ বনানীতে অনিন্দ্য সুন্দর রূপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্পটে রুপ নিবে অচিরেই এমনটিও বলেন ওই বনকর্মকর্তা।'
লেকের পাড়ে শৈল্পিক সৌন্দর্যে নির্মিত রিফ্রেসমেন্ট কর্ণার। ছবি: বাঁশখালীজনপদ
ঢাকা থেকে যেভাবে আসবেন: বিআরটিসি এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে। আর অন্যান্য এসি, ননএসি বাস গুলো ছাড়ে ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভরযোগ্য সার্ভিস গুলো হল- এস.আলম ও সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভৃতি। বাসে করে চট্টগ্রাম শহরে নামবেন। সবগুলো বাসই কক্সবাজার যায়। কক্সবাজার চট্টগ্রামের মাঝামাঝিতে বাঁশখালী অবস্থিত।

চট্টগ্রাম থেকে যেভাবে আসবেন: চট্টগ্রাম শহর এর বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে বাঁশখালীর বাস ছাড়ে। বাস টার্মিনালে বাঁশখালী কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে বাঁশখালী সুপার সার্ভিস বা বাঁশখালী স্পেশাল সার্ভিসে করে ৮০/৯০ টাকা ভাড়ায় বাঁশখালী উপজেলায় জলদিতে বা মনছুরিয়া বাজার নেমে রিজার্ভ সিএজি করে ১০০/১৫০ টাকা ভাড়ায় সরাসরি ইকো-পার্ক। চট্টগ্রাম শহর থেকে উপজেলায় পৌঁছতে প্রায় ২ ঘন্টা, উপজেলা থেকে সিনজি তে ২০/২৫ মিনিটে বাঁশখালী ইকো-পার্কে যাওয়া যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.