![]() |
পৌরসভাস্থ উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়ায় অবস্থিত শ্মশানভুমি প্রজ্ঞাদর্শন মেডিটেশন সেন্টারে অগ্নিকান্ডে বৌদ্ধমূর্তি সহ প্রার্থনাঘর পুড়ে ছাই। |
জনপদ প্রতিবেদন: বাঁশখালী পৌরসভাস্থ উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়ায় অবস্থিত শ্মশানভুমি প্রজ্ঞাদর্শন মেডিটেশন সেন্টারে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এক ভয়াবহ আগ্নিকান্ডে দেশ-বিদেশ থেকে আনা শতাধিক বৌদ্ধমুর্তি সহ ৪০ লক্ষাধিক টাকার মুল্যাবান ধর্মীয় জিনিস পত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ ও আতংক বিরাজ করছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, বাঁশখালীর সর্ববৃহৎ বৌদ্ধমন্দির পৌরসভার উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়ার মন্দিরটি। বিগত ৪ বছর যাবৎ এই সর্ববৃহৎ ধর্মরত্ন বিহারকে কেন্দ্র করে তাদের নিজেদের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়। পরবর্তীতে এই ফাটলকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে একটা গ্রুপিং তৈরি হলে প্রকাশ্য এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের বিপক্ষে নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ডিসি, উপজেলা প্রসাশনের বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দায়ের করেন।
আন্তঃকোন্দলের একপর্যায়ে আধা কিলোমিটারের ব্যবধানে বড়ুয়া পাড়ার মহাশ্মশানে ২০০৯ খ্রিষ্ঠাব্দে বিদর্শন সাধক জ্ঞানেন্দ্রিয় স্থবির শ্মশানভুমি প্রজ্ঞাদর্শন মেডিটেশন সেন্টার স্থাপন করে বিদর্শন ভাবনা সহ ধর্মীয় কার্যাদি পরিচালনা করে আসছেন। বৃহস্পতিবার তিনি ধর্মীয় কাজে চন্দনাইশে অবস্থান করায় সেখানে ২জন ভিক্ষু ও ২ জন সেবক ছিল। গভীর রাতে (অনুমানিক রাত ২টার দিকে) প্রার্থনা কক্ষে ও ষ্টোররুমে আগুন দেখে তারা চিৎকার করে এবং মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সেবকদের জানালে পরবর্তীতে স্থানীয়রা এসে দ্রুত অাগুন নিয়ন্ত্রনে। এতে আগ্নিকান্ডে থাইল্যান্ড, বুদ্ধগয়া, বার্মা থেকে আনীত শ্বেতপাথর ও কষ্টিপাথরের বৌদ্ধমুর্তি সহ প্রায় ছোটবড় শতাধিক বৌদ্ধমুর্তি পুড়ে যায়।
![]() |
পৌরসভাস্থ উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়ায় অবস্থিত শ্মশানভুমি প্রজ্ঞাদর্শন মেডিটেশন সেন্টারে অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য পরিদর্শন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার |
প্রার্থনা ও বৌদ্ধের রুমের পাশে অবস্থিত ষ্টোর রুমে রক্ষিত ভিক্ষাগ্রহন পাত্র ছাবাইক ৫০টি, প্রায় একশটি কম্বল, সোলার প্যানেল, ষ্টোকচার, স্পীকার, ফ্লাক্স, গামলা ৬০টি, থালা প্রায় ১শতটি, জগ ৫০টি, দেশী বিদেশী ভিক্ষুদের ব্যবহারের রং কাপড় সহ আরো প্রয়োজনীয় কাপড় ও নানা জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
শ্মশানভুমি প্রজ্ঞাদর্শন মেডিটেশন সেন্টারের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে দেওয়া তথ্য মতে ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ৪০ লক্ষাধিক বলা হলেও পুড়ে যাওয়া বৌদ্ধমুর্তিগুলো সংগ্রহ করা অনেক দুঃসাধ্য বলে জানান শ্মশানভুমি প্রজ্ঞাদর্শন মেডিটেশন সেন্টারের পরিচালক জ্ঞানেন্দ্রিয় স্থবির ।
এ বিষয়ে পৌর কাউন্সিলর তপন বড়ুয়া জানান, আমরা যুগ যুগ ধরে জলদী বড়ুয়া পাড়া ধর্মরত্ন বিহারে বিভিন্ন সময় প্রার্থনা করতাম। কিন্তু বিগত ৪ বছর যাবৎ জলদী বড়ুয়া ধর্মরত্ন বিহারের অধ্যক্ষকে নিয়ে স্থানীয়দের সাথে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। বিরোধের একপর্যায়ে আধা কিলোমিটারের ব্যবধানে আরো একটি শ্মশানভুমি প্রজ্ঞাদর্শন মেডিটেশন সেন্টার নির্মীত করে আমরা ধর্মীয় কার্যক্রম ও প্রার্থনা করি। শ্মশানভুমি প্রজ্ঞাদর্শন সেন্টারের প্রধান ভিক্ষু জ্ঞানেন্দ্রিয় স্থবির স্থানীয়দের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠলে একটি কু-চক্রী মহল তার জনপ্রিয়তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।তার জনপ্রিয়তাকে স্তব্ধ করার জন্য ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেইসবুক) সহ প্রকাশ্য বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেয়।' তিনি আরো জানান, 'আমাদের বড়ুয়া পাড়ার সাথে কোন মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে কখন ও কোন বিরোধ বা প্রতিহিংসার লেশমাত্র ছিলনা। এটা আমাদের নিজেদের আন্তঃকোন্দলের কারনে এই অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে। আমি প্রশাসনের নিকট তদন্ত পূর্বক সুষ্টু বিচারের দাবী জানাচ্ছি।'
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: কামাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন পুর্বক জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। এ ঘটনার তদন্তের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুজন চন্দ্র রায়, থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল উদ্দিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম মিয়াজী, ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন মাষ্টার লিটব বৈঞ্চব সহ ডিজিএম নাইমুল হাসানকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুঃ কামাল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে সাধারন ডায়েরী করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষ থেকে ও ডায়েরী করা হয়েছে। এটাকে অধিক গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হচ্ছে এবং ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন পেশ করবেন বলে তিনি জানান।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত অবগত হই। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা দেওয়া হয়েছে যতটুকু সম্ভব প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে এবং যারা এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে তিনি জানান।
[বাঁশখালী জনপদ২৪.কম'র অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।]
[বাঁশখালী জনপদ২৪.কম'র অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন