![]() |
ছবি- মোক্তার শাহ বাইতুল ইজ্জত জামে মসজিদ |
শিব্বির আহমদ রানা:
আমরা অনেকেই হয়তো শুনেছি বউ বাজার ও জামাই বাজার নামের বিকিকিনির হাঁট-বাজারের নাম। বউ বাজারে ক্রেতা বিক্রেতা স্থানীয় বউ-ঝি (মেয়ে) ও জামাই বাজারে পুরুষেরাই বিকিকিনি করতে শুনেছি। কিন্তু প্রেম বাজার নামটি শুনলেই অনেকে গানের, নাটকের, সিনেমার প্রেমকেই বুঝে থাকে। এখানে প্রেম বাজার বলতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের ঐতিহাসিক একটি স্থানের নামই বেশ পরিচিত। নতুন যে কেউ প্রেম বাজার নামটি প্রথমে শুনেছেন যে, তারা ভাববেন প্রেম বাজার মানে কি? প্রেম বাজারের মানে টা কি কথিত সিনেমার ব্যাঙ্গাত্মক নাম? অনেকে মজা করে থাকেন এই নাম নিয়েও! অনেকের মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন জাগে, কথায় কথায় কেউ কেউ বলে উঠেন ওখানে প্রেম-টেম হয় নাকি? প্রেম বাজার কেমনে নাম হয়? এমনটি প্রশ্ন জাগে সবার মনে।
প্রেম বাজার নামকরণ করেন পুইছড়ি ইউনিয়নের মরহুম হাফেজ মোক্তার শাহ্ (রহ.)। বাজারটি প্রতিষ্টা করার পর, যখন বাজারের নাম দেওয়া হয় 'প্রেম বাজার' তখন এটিকে নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন জেগেছিল। সে সময়ে হাফেজ মোক্তার শাহ (রহ.) কে যখন প্রশ্ন করা হয়ছিল প্রেম বাজার কেন নামকরণ করলেন? তখন ওনার ভাষ্যমতে 'খোদাকী প্রেম' মানে আল্লাহর প্রেমে মুগ্ধ হয়ে নিজের প্রতিষ্টা করা বাজারের নামকরণ করলেন প্রেম বাজার। যা মহান আল্লাহর প্রতি ভালবাসাকে ইঙ্গিত করে। যা আজ 'প্রেম বাজার' নামেই সুপরিচিত। বর্তমানে দক্ষিণ বাঁশখালীর প্রেম বাজার চট্টগ্রাম জুড়েই বিখ্যাত ঐতিহাসিক একটি বাজার। বাজারটি এখন পান বাজারেই রুপ নিতে শুরু করেছে। বাঁশখালীর বিশাল পানের বাজারটি এখন প্রেমবাজারেই বসে।
![]() |
প্রেম বাজার মোক্তার শাহ্ জামে মসজিদে প্রতিবেদক শিব্বির আহমদ রানা। |
প্রেমবাজারে বর্তমানে নিয়মিত হাঁট বসে। ক্রেতা বিক্রেতার সমাগমে কাঁচামাল সহ মুদির দোকানে চলে বিকিকিনির আসর। তরতাজা শাকসবজির জন্য সমধিক পরিচিত বাজারটি। মৌসুমি ফলের বড়সড় একটি স্থানের নাম পুঁইছড়ির প্রেমবাজার। ইতিহাস সূত্রে জানাযায়, প্রেমবাজার প্রতিষ্ঠালগ্নের দিকে তেমন কোন দোকানপাট ছিল না, হাতেগুনা মাত্র দু-একটা দোকান ছাড়া। পাশ্ববর্তী লোকালয়ের অদূরে বাজার থাকায় প্রেম বাজার প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে তেমন কোন বাজার গড়ে উঠেনি এই স্থানে। কারণ পাশেই ছিল বহদ্দারহাট বাজার ও ছলিম বাজার। তৎকালে কাছের বহদ্দার হাট বাজারের কোলাহল অন্তত দুই মাইল দুর থেকেও দেখা যেত, যার ফলে প্রেম বাজারের অবস্থাটা শুরুর দিকে তেমন জমে উঠেনি। একটি বাজারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে ঐ অঞ্চলের পুঁইছড়ির জনৈক মরহুম হাফেজ মোক্তার শাহ (রহ.) সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে এখানে হাঁট (ডাকা) বসানোর দরকার। তাই প্রতিদিনই তিনি হাঁট ডাকতেন। দেখা যেত কি! মানুষের আনাগোনা বেশি না থাকায় হাঁটে ক্রয়-বিক্রয় হতো না, যার ফলে হাটে বিক্রি না হওয়া মালামাল তিনি নিজেই কিনে নিতেন। এভাবে তিনি ধীরে ধীরে প্রেম বাজারটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাজারে বর্তমানে ৭শতাধিক দোকান-পাটে সমৃদ্ধ। বর্তমানে সপ্তাহে সাত দিনে সাত দিনই বাজার বসে। বাঁশখালীর বহুল পরিচিত প্রেম বাজারটি পুঁইছড়ি ইউনিয়নের প্রাণ কেন্দ্রতে রুপ নেয়। একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ। এলাকার সমস্ত কর্মকান্ড এখান থেকেই পরিচালিত হয়। বাঁশখালীর সীমান্ত বাস স্টেশনটিও প্রেমবাজারে অবস্থিত।
বাজারটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে একটি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। মসজিদটির কারুকাজ বেশ মনোমুগ্ধকর ও ঐতিহাসিক। ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি প্রতিষ্টা করেন বাজারের প্রতিষ্টাতা মরহুম হাফেজ মোক্তার শাহ্ (রহ.)। ১৯৭০ সালে মসজিদটি স্থাপিত হয়। বর্তমানে এর সংস্করণ করা হচ্ছে।
![]() |
ছবি- মোক্তার শাহ বাইতুল ইজ্জত জামে মসজিদ |
তিনি স্বপ্ন দেখতেন একটি গম্বুজওয়ালা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করার। লালিত স্বপ্ন তিনি জীবদ্দশায় পূরণের লক্ষ্যে গম্বুজওয়ালা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। যার অসাধারণ কাঠামো ঐতিহাসিক একটি প্রতিকী ছবির রুপ বহন করে। 'মোক্তার শাহ বাইতুল ইজ্জত জামে মসজিদ' নামে মসজিদটির নাম করণ করেন তিনি। এটির চারপাশে সাঁজোয়া মিনার রয়েছে। তারই মাঝখানে বিশালাকার গম্বুজটিই মসজিদকে করেছে আকর্ষণীয়। বর্তমানে মসজিদের খতিবের দায়িত্বরত আছেন পুঁইছড়ি ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোশাররফ হোছাইন এবং ইমামের দায়িত্বে আছেন মসজিদ প্রতিষ্ঠার সুযোগ্য পুত্র মো. হামিদুল আজম।
পারিবারিক সূত্রে তাঁরই কনিষ্ট ছেলে শাহাদত কবির আবতাহী জানান, ১৯৩৪ সালে মরহুম হাফেজ মোক্তার শাহ্ (রহ.) বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি পটিয়া মাদরাসা থেকে কুরআনে হাফেজ শিক্ষা লাভ করেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তিনি (আমার বাবা) ছিলেন না কোন জমিদারের সন্তান, জন্মগ্রহন করেননি কোন বিত্তশালী পরিবারে। বাঁশখালীর ইতিহাসে তিনিই একজন ব্যক্তিত্ব যিনি তাঁর জীবনে চাঁদা তুলে তুলে সর্বমোট ১১ টি মসজিদ ও ৭ টি মাদরাসা প্রতিষ্টা করেন। বলতে গেলে তিনি তাঁর জীবদ্দশায় ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। এই মহান মানুষটি ২০১৪ সালের ১৮ই ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি...... রাজেওন)। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮০ বছর।
বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'র অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।
বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন