জনপদ সংবাদদাতাঃ চট্টগ্রামে বাঁশখালীতে সুপেয় পানির একমাত্র ভরসা পল্লী বিদ্যুৎ। উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ায় মোটরচালিত যন্ত্রের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করা হয়। এই জনপদের হাজার হাজার পরিবারকে বিদ্যুৎ না থাকলে খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়তে হয়। এমনিতেই গ্রীষ্মের প্রখরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাঁশখালীতে লোডশেডিং বেড়ে যায় চরম আকারে।
এখন সারা বছর জুড়ে পল্লী বিদ্যুতের ভেলকিবাজি যেন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। পবিত্র রমজান মাসেও তারাবির সময়, ইফতার ও সাহরির সময় পল্লী বিদ্যুতের ঘনঘন যাতায়াত কিছুতেই বন্ধ হয়নি। যার দরুণ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ নির্ভর জনসাধারণ অপেক্ষায় থাকে কখন বিদ্যুৎ আসবে।
আবাসিক-অনাবাসিকসহ প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার গ্রাহকদের সেবা দিতে চট্টগ্রাম পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ জোনাল অফিসসহ উপজেলার নাপোড়া, জলদী, বৈলছড়ি, গুনাগরি ৪ টি সাব স্টেশন রয়েছে। দীর্ঘ ৫৭ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে দোহাজারী গ্রিড হয়ে বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ আসে। এতে কোন স্থানে বিদ্যুৎ লাইনের সমস্যা হলে সাময়িক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।
লোকবল কম থাকায় অনেক সময় বিচ্ছিন্ন সংযোগ চালু করতে সময় লাগে। সড়কে গাছপালা থাকার কারণে অব্যবস্থাপনার ফলে বৃষ্টি-বাদলের সময় সাময়িক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। সামনে কালবৈশাখীর প্রভাবে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে যাতে অনাখাংকিত ঘটনার সৃষ্টি না হয় তাই গাছপালা কেটে দেওয়াতে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে।
সম্প্রতি বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ জনসাধারণ। ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে কবে মুক্তি পাবে বাঁশখালীর গ্রাহক তা জানতে চাইলে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস জানায়, দোহাজারী গ্রিডে সমস্যা সৃষ্টি হলে আমরা প্রায় ৬০ কিঃমিঃ দূুর শিকলবাহা-কর্ণফুলী-আনোয়ারা-গুরাগরি এবং মাতারবাড়ী-পেকুয়া-নাপোড়া হয়ে বিকল্পভাবে কিছুটা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়। তবে লাইনের কোন সমস্যা হলে এক বিন্দুও কেউ বসে থাকে না।
বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকায় এত বিস্তৃত লাইন এবং সোর্স গ্রিড দোহাজারী হতে প্রায় ৫৭ কিঃমিঃ দীর্ঘ লাইনে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা কষ্ট সাধ্য। চেষ্টা করা হচ্ছে গন্ডামারা এলাকায় একটি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ করতে, যাতে প্রায় ৬০ কিঃমিঃ এর স্থলে ১৫ কিঃমিঃ দুরত্বে অনেকটা নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহে সক্ষম হয়। গ্রিড নির্মাণ সরকারের একটি বড় ইস্যু। সেজন্য গ্রাহকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যার যার আঙ্গিকে একটু লেখালেখি বা রাজনৈতিকভাবে সুপারিশে অনেকটা এগিয়ে যাবে।
সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বিরতিহীন সেবা দিতে গিয়ে লোডশেডিংয়ের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ নির্ভর বাসস্থানগুলোর আলো-বাতাস-পানি বন্ধ থাকার মত অনাকাংখিত ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন বিদ্যুতের গ্রাহক ও ভুক্তভোগীরা। ঘনঘন লোডশেডিং যখন নিত্য রুটিনে পরিণত হয়েছে। সুপেয় পানির জন্য বিদ্যুৎচালিত মোটরের উপর নির্ভর করে হাজার হাজার লোকজন। এতে লোডশেডিং থাকায় ভোগান্তির অন্তঃ থাকে না গৃহকর্ত্রী থেকে শুরু করে সবার।
গত শনিবার (১৬ এপ্রিল) সারাদিন বিদ্যুৎবিহীন ছিল পুরো বাঁশখালী। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসলে সুপেয় পানীর জন্য হাহাকার হয়ে পড়ে বাঁশখালী। উপকূলের মোটরচালিত পানির উপর নির্ভর করা হাজার হাজার পরিবার। রাত ১১ টার পর বিদ্যুৎ আসে। এ দীর্ঘ বিরতীতে চরম দূর্বিসহ যন্ত্রণায় পড়তে হয়েছে জনগণকে।
বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) ঋষি কুমার ঘোষ দৈনিক অধিকারকে বলেন, দোহাজারী গ্রিডে বিদ্যুৎ লাইনের সমস্যা হলে গত শনিবার বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও আমিলাইশের লাইনক্রুগণের যৌথভাবে এক অন্যরকম প্রচেষ্টায় প্রায় ৩০/৪০ গভীর পানির ভিতরে সাঁতার কেটে মালামাল নিয়ে নয়াখাল, সাতকানিয়া ব্রিক ফিল্ডে ভিতরে বাঁশখালী ফিডারের তার জোড়া দেওয়ার কাজ রাতের প্রায় ১১ পর্যন্ত করেছেন আমাদের অদম্য লাইনক্রুগণ। যার দরুণ বাঁশখালীর গ্রাহকগণের ব্যাপক সমস্যা পোহাতে হয়েছে।
দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া হয়ে বিদ্যুৎ বাঁশখালীতে আসাতে ওখানেও কোন সমস্যা হলে তার প্রভাবও বাঁশখালীতে পড়ে তাই লোডশেডিং হয়ে থাকে। আশা করছি আহুত সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান সম্পন্ন হবে। তবে বাঁশখালীতে ৩৫ মেঘাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। সে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে আমরা সক্ষম। মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা সৃষ্টি হলেই সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট সৃষ্টি হয়।
বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'রঅনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন