"রক্তদান পেশা নয়, নেশা-যে নেশায় মানুষ বাঁচে"। রক্তদান একটি মহৎ কাজ। রক্তদান সামাজিক প্রীতিবন্ধন মজবুত করে, সামাজিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করে, এমনকি মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার রক্তই একই রকম- লাল রঙের। এর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। তাই রক্তদান ঘুচিয়ে দেয় সাদা-কালোর পার্থক্য, ঘুচিয়ে দেয় ধর্মীয় ব্যবধান।
এই কাজটি করার ফলে, অনেক মানুষের উপকার হয়েছে, হাসি ফুটেছে নাম না জানা অনেক মায়ের মুখে, আশা দেখিয়েছে কোন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবাকে। যখন একজন ডেলিভারী মহিলার নরমালে বাচ্চা প্রসব করা মোটেও সম্ভব হয়ে উঠে না, তখন তাকে অনেক ঝুঁকি নিয়ে সিজার নামে মহা বিপদে ডেলিভারি করাতে হয়। যখন প্রয়োজন পড়ে রক্তের আর ঠিক তখনই হাজির থাকে এই রক্তযোদ্ধারা। এরা সহযোগী হতে পারে, তবে বড় পরিচয় এদের, এরাও মানুষ।
এদের দেয়া রক্তে বেঁচে আছে হাজারো অবুঝ শিশু, হাজারো ডেলিভারি আর মুমূর্ষু রোগী। ক্যান্সার বা অন্যান্য জটিল রোগে, এনিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার ইত্যাদি রোগের কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে, তখন এরাই ছুটে আসে। রাস্তায় যখন সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি আহত হয় আর পড়ে থাকে নিথর দেহ যেখান থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে বয়ে যায় শরীর থেকে রক্তের স্রোত ঠিক তখনই তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে এই রক্তযোদ্ধারা।
এরা নিজের জীবনকে নিয়ে যতটুকু না ভাবে, তার চেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখে অন্যের স্বপ্ন পূরণে অংশীদারীত্ব করতে। এদের কাছে পৃথিবীর সবাই সমান মানুষ। তারা কাউকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ত করেই না, বরং রক্তের সন্ধানে এগিয়ে আসতে মোটেও দেরি করেনা। এদের কাছে অন্যের হাসিই সবচে দামী। কারো মুখে হাসি ফুটলেই পরে তারা নিজেদের মুখে হাসি অনুভব করে। এরা এতেই সন্তুষ্ট, এতেই খুশি।
কিন্তু আমি বা আমরা তাদের কতটুকুই না সম্মান কিংবা শ্রদ্ধার চোখে দেখি। অবশ্যই তাদের প্রতি আমাদের সদয় হতে হবে। তাদের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে এরাও মানুষ। একজন রক্তযোদ্ধা হাজারো প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে ছুটে আসে আমাদের বিপদে। এতে করে সময়ের কিছু একটা হেরফের হতেই পারে, তা আমাদের মেনে নিতে হবে। কিন্তু তা বলে তাদের সাথে অসৎ আচরণ কিংবা বাজে ব্যবহার কোনোমতেই কাম্য নয়।
[বাঁশখালী ব্লাড ব্যাংকের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমার লেখাটি বাঁশখালী ব্লাড ব্যাংকের জন্য উৎসর্গ করলাম।]
লিখেছেনঃ তৌহিদ-উল বারী
শিক্ষার্থী; বাকলিয়া সরকারী কলেজ, চট্টগ্রাম।
বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'রঅনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।
banshkhalijanaphad24@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন