advertisment

advertisment
বিজ্ঞাপন দিন

ব্রেকিং নিউজ

ছো|ট|গ|ল্প "স্ত্রৈণের বৈরাগ্য"



ছালেহা গৃহস্তালীর কাজকর্ম সেরে অনেক রাতে ঘুমিয়েছিলো। বিছানায় পিঠ লাগাতেই ছালেহা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ইদানীং সামান্যতেই সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। রাতজাগা তার অনেক কষ্ঠের। তার কাজের শেষ নেই, ছেলে-মেয়ে সামলানো, স্বামীকে দিয়ে পরিকল্পণামাপিক কাজ করানো, রান্নাবান্না,  মেশিনে কাপড় সেলাই করা ত আছেই। ছোটকাল থেকে ছালেহা স্বাধীনচেতা ও একগুঁয়ে স্বভাবের। কারো সাথে তার দীর্ঘ মেয়াদী সম্পর্ক থাকেনা। একরোকা স্বভাবের কারণে মা-বাবার শায়েস্তাও কম হজম করতে হয়নি। ঝগড়াটে মেয়ে হিসেবে তার প্রসিদ্ধি এলাকাময় ছড়িয়ে পড়েছিলো। স্কুলে তাকে তার সহপাঠীরা সমীহ করে চলতো। স্যাররা তার লকব দিয়েছিলো বাঘিনী রাজকন্যা। এ নিয়ে তার গর্বের কমতি ছিলোনা। তার বাবা ছিলো পরহেজগার ব্যক্তি। মাদরাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি গঞ্জে ছোট্ট একটি কাপড়ের দোকান করে টেনে হিচড়ে সংসার চলাতো। পাশের মসজিদে ইমামতির কাজটিও উনি করতেন। নম্রভদ্র সজ্জন হিসেবে তার খ্যাতি ছিলো। পাঁচ মেয়ে দুই ছেলের মধ্যে ছালেহা ছিলো তিন নাম্বার পজিশনে। এই দুরন্তপণা মেয়েকে নিয়ে পিতা মোহসীন আলীর চিন্তার শেষ ছিলোনা। এলাকায় ছালেহাকে কেউ ডাকতো জল্লাদ মেয়ে আবার কেউবা দস্যুরাণী হিংস্র বাঘিনী আরো কত কী নামে ডাকতো সবাই। এসবে ছালেহা দামবার পাত্র নয়। সে যা ইচ্ছা হতো তাই করে বসতো। পড়া লেখায় তেমন একটা মেধাবী না থাকায় পড়া লেখায় বেশিদূর আগানো সম্ভব হয়নি। মোটামোটি নাম দস্তখত ভালোভাবেই পারে বলতে হবে। পঞ্চম শেণি পর্যন্ত পড়ার পর আর পড়াশোনা করা সম্ভব না হলেও সে নিজেকে এস এস সি পাশ বলে দাবী করে। শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করে। যদিও শুদ্ধ বলাটা আশিভাগ গ্রাম্য কথ্য ভাষা মিশ্রিত। ছালেহার স্বামীও শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করে।  নিজেকে ইসলামী পণ্ডিত হিসেবে জাহির করে পরিচয় দেয় । অনেকে বলে থাকেন মূর্খের ঘরে শিক্ষিত হলে যা হয় আর কী। ছোটকালে নাকি ছালেহার স্বামী পরের কাজে নিয়োজিত ছিলো। অনেক বড় হয়ে ফ্রি থাকা খাওয়ার লোভে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে পড়া লেখা করতে শুরু  করে। কওমি মাদ্রাসায় পড়ে সরকারিতে পরীক্ষা দিয়ে কোন মতে সনদ নিয়েছে। তাকে এলাকায় অশুদ্ধ উচ্চারণে শুদ্ধ কথা বলাতে সবাই শুদ্ধ মফিজ হিসেবে চিনে। শুদ্ধ মফিজ আগে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতোনা। ছালেহাই তার প্রেরণাদাত্রী। শুদ্ধ ভাষায় কথা না বললে ছালেহা তাকে ধমক দিয়ে বুকে কাঁপুনি সৃষ্টি করে দেয়। শুদ্ধ মফিজ পৃথিবীতে ছালেহা ছাড়া আর কাউকে তেমন একটা ভয় পায়না।শুদ্ধ মফিজ যেখানে যান না কেনো ছালেহার অনুমতি ব্যতিরেকে যায়না। ছালেহাকে সে মৃত্যুদূতের চেয়ে বেশি ভয় পায়। বেশি বয়সে বিয়ে করছে বলে শুদ্ধ মফিজ অতি আবেগ প্রবণ। তার ইহজগৎ পরজগৎ যেনো ছালেহাকে গিরেই রচিত। কাল রাতেই শুদ্ধ মফিজ কর্মস্থল থেকে এসেছে। রাতে ছালেহাকে নিয়ে অনেক গল্প করবে, বিনোদন করবে,মনের আবেগ ঢ়েলে ভালোবাসবে। এইসব পরিকল্পণা নিয়ে সে বাড়িতে এসেছিলো কিন্ত শুদ্ধ মফিজের প্রতি ছালেহা বাম। কারণ ছালেহার সাথে প্রতিবেশি তারার মার সাথে সারাদিন দ্বন্দ্ব চলেছে। দ্বন্দ্বের বিষয়ও তুচ্ছ নয়। ছালেহার কোরার ঠ্যাং ভেঙে দিয়েছে তারার মা। ছালেহা কোরার ভাঙা ঠ্যাং দেখে রাগে গর্জন দিয়ে উঠে। 

ছালেহা : হন মাগী আঁর কোরার ঠ্যাং ভাঙ্গি দিয়োছদে। তেইর উওর আল্লাহ গজব পইত্ততইতো। 

তারার মা : লাফাঅদ্ধে কিল্লাই তোর কোরায় অ মাগী আঁর মরিছ ক্ষেতি হাই ফেলাইয়েদ্ধে কিল্লাই? 

ছালেহা: অবুক অবুক তোরে নঅ' না হালিয়া দেশ্যের চইল উধার দিয়িদি। তোর চোখেত পর্দা নাই। উয়াইস্যা হইয়োছদে চইল দিয়িদি। অ চিলানের ঝি চিলান এ হথা কেনে তোর মনেত নাই। 

এভাবে সারাদিন চলে দুপক্ষের ঝগড়া। ছালেহা ঝগড়ায় পরিপক্ষ খেলোয়াড়। তাকে ডিঙিয়ে যাওয়া সহজ বিষয় নয়। একবার শুরু করলে আর থামেনা। ঝগড়া দেখতে দেখতে লোকেরাও এখন তেমন একটা আগ্রহ নিয়ে ছালেহার ঝগড়া, বিশ্রী গালাগাল শুনতে চায়না। প্রতিবেশি একজনেরনা এক জনের সাথে ছালেহার ঝগড়া গালমন্দ যেন নিত্য দিনের শুশৃঙখল রুটিন। শুদ্ধ মফিজ বউকে কিছু বলার সাহস পায়না। তার চোখে ছালেহা সৌন্দর্যের রাণী ক্লিওপেট্রা। ছালেহার চৌদ্ধ গোষ্ঠী মোল্লা। এ নিয়ে শুদ্ধ মফিজের অহংকারের শেষ নেই। 

শুদ্ধ মফিজ ছালেহার রূপ দর্শন করে চুল গোছায় হাত বুলাতে থাকে। ছালেহা বেখবর। যেন অনন্ত ঘুমে ঘুমিয়েছে। শুদ্ধ মফিজ ছালেহাকে জডিয়ে নিতে চেষ্টা করে, ছালেহার ঘুম ভাঙ্গে। ছালেহা গর্জে উঠে বলে -

গোলামের পোয়া গোলাম ঘুম কিল্লাই ভাইঙ্গোছদে? প্লেম উতরে পরেদ্দেনা। তোর নুনু হাড়ি দিওম। তুই তাঈ আর ন তাই সমান। তোরে হইলামদে আঁরে লই যা গোই তোর উয়ারে। তুই আর হথা উন্যছ না। শুদ্ধ মফিজ ভয় পেয়ে যায়। তার যা বেতন তা দিয়ে ছালেহার মত খাদক মহিলাকে সামলানো অনেক কষ্টের। 

শুদ্ধ মফিজ : তোমারে লই যাইলই আঁর ঘর বাড়ি হনে চাইবো? 

ছালেহা : তোর ঘর বাড়ির কেতা কিলাই। হানখির পোয়া। এহন বাইর হও। তখন সুবহে সাদিকের আযানের অপেক্ষায় মুয়াজ্জিন। শুদ্ধ মফিজেরও মাথায় রাগ উঠে। অশুদ্ধ ভাষা মুখদিয়ে অজান্তে বেরিয়ে আসে। মাগী তোরে তিন তালাক। 

ছালেহা : তোরেও তিন তালাক। 

শুদ্ধ মফিজ রাগে ক্ষোভে উদ্দেশ্যহীন গন্তব্য বেরিরে পড়ে। এর পর অনেক খোঁজাখোঁজির পরও শুদ্ধ মফিজকে আর পাওয়া যায়নি। তার মত অবিকল একটা লোককে নাকি একহাতসম লম্বা দাড়ি, কোকড়ানো চুলে তাসবী হাতে শাহ বাবা কেবলার মাজারে ইল্লাল্লাহ ইল্লাল্লাহ জিকির করতে দেখা গেছে। পৃথিবীর কোন দিকে তার ভূক্ষেপ নেই। এক নিবিষ্ট মনে। গভীর ধ্যানে,,,৷

-লেখক: কবি ও কলামিষ্ট

জসীম উদ্দিন মনছুরি



বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র,  রেখাচিত্র,  ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।

বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।

আপনার মেইল পাঠাতে:

banshkhalijanaphad24@gmail

কোন মন্তব্য নেই