উপকূলবাসী অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)’র সঠিক তদারকির অভাবে গেল দুই বছরের মাথায় ২০২৪ সালে এসে নব নির্মিত বেড়িবাঁধের প্রায় ২৬ স্থানে ফাটল ও ধস দেখা দিয়েছে। জলোচ্ছ্বাস ছাড়াই সমুদ্রের স্বাভাবিক ঢেউয়ে ভেঙে গেছে সিসি ব্লক। কোথাও কোথাও বেড়ীবাঁধের প্রায় অংশ সমতলে বিলীনের পথে। উপকূলবাসীর দাবি আসন্ন বর্ষার আগে বেড়িবাঁধ সংস্কার না করলে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাবে। সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় বিপর্যয়ের আশংকা করছে বাঁশখালী উপকূলের অধীবাসীরা। এ বিষয় জানতে চাইলে পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছেন, আগামী বর্ষার আগে বরাদ্দ পাবার সুযোগ নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, বাঁশখালী উপকূলবাসীর জীবন রক্ষায় ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার নব নির্মিত স্থায়ী বেড়িবাঁধ জলোচ্ছ্বাস ছাড়াই ভাঙছে আর ভাঙছে। খানখানাবাদ উপকূলের কদম রসুল গ্রামে বেড়িবাঁধ জোয়ার-ভাটার স্রোতে প্রতিদিনই ভাংগনের খেলায় এখন বিশালকার রূপ নিচ্ছে। কোথাও আবার বাঁধ ধসে গেছে ভয়ানকভাবে। একই দৃশ্য খানখানাবাদের প্রেমাশিয়া, খানখানাবাদ গ্রাম, পুকুরিয়ার তেইচ্ছিপাড়া, সাধনপুরের রাতা খোর্দ, গন্ডামারার বড়ঘোনায়, শেখেরখীলের ফাঁড়ি মূখের অদূরে, ছনুয়ার ছোট ছনুয়া। উল্লেখিত স্থানগুলোর অন্তত ২৬ স্থানে নব নির্মিত বেড়িবাঁধে সিসি ব্লকে ধ্বস দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রীতে নির্মিত সিসি ব্লকের সিমেন্ট উঠে গিয়ে সিসি ব্লক ভেঙে গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের নামে লুটপাটের কারণে অল্প সময়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধে ফাটল ধরেছে এবং ভাঙছে। যার ফলে কোটি টাকার বেড়ীবাঁধ এখনো অধরা, স্বপ্নের মতোই।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ২০১৫ সালে বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হলে কাজ শেষ হয় ২০২২ সালে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে দুর্নীতি করেছেন এ বাঁধ নির্মাণে। বেড়িবাঁধ রক্ষায় ঢালু বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত ঘাস ও গাছ লাগানোর কথা থাকলেও তা লাগানো হয়নি। ব্লক নির্মাণে নিম্নমানে পাথর, ইট, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার করায় কাজ বুঝিয়ে দেয়ার আগেই অধিকাংশ সিসি ব্লক ভেঙে গেছে। বিস্তীর্ণ বেড়িবাঁধ জুড়ে ভাঙা সিসি ব্লক দৃশ্যমান ও নিম্নমানের বেড়িবাঁধ দৃশ্যমান হলেও পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোন নজর নেই।
অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে উপকূলবাসীর স্বপ্নের বেড়ীবাঁধ, তবে স্বপ্ন স্বপ্নের মতোই অধরাই থেকে গেল। অতিবৃষ্টি কিংবা বর্ষার ঢলে, সমুদ্রের জোয়ারের ঢেউয়ে বিলীন হয়ে যেতে বসেছে বাঁধের অধিকাংশ পয়েন্ট। এখনো বাঁশখালী উপকুলের নিম্নাঞ্চলেরর মানুষ দূর্যোগকালীন সময়ে আতংকে থাকে। এ উপজেলার মানুষ এখনো প্রতি বর্ষায় নির্ঘুম রাত কাটান।
প্রজন্ম চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী চৌধুরী জসিমুল হক বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে জীবন এবং সম্পদ বাঁচাতে সমন্বিত উপকূল সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম এবং গাছপালার বনায়ন গড়ে তুলতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ এবং নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে উপকূলবাসীকে বাঁচাতে টেকসই বেড়ীবাঁধের কোন বিকল্প নেই।
পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম পাল বলেন, বাঁশখালী উপকূলের বেড়িবাঁধের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। বেড়ীবাঁধের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে তা আগামী বর্ষার আগে পাবার সম্ভাবনা নেই। তবে দুর্যোগ ঠেকাতে তারা সার্বক্ষণিক বাঁশখালীকে নজরে রেখেছেন।
বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'রঅনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।
banshkhalijanaphad24@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন