advertisment

advertisment
বিজ্ঞাপন দিন

ব্রেকিং নিউজ

আমার চোখে দেখা ভয়াল ২৯ এপ্রিল, যা এখনো ভুলতে পারিনি!

২৯শে এপ্রিল ১৯৯১ সাল তখন আমি প্রথম শ্রেণী পড়া শেষ করেছি মাত্র। ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের আগের তেমন একটি কথা আমার মনে নেই। ঐদিনটি ছিল সম্ভবত সোমবার। এর কয়েকদিন আগে থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে এর সাথে সাথে সিগন্যাল দেওয়া শুরু হল আমরা রেডিওতে সিগন্যালের খবর শুনছি। এর আগে কখনও ঘূর্ণিঝড়ের সিগন্যালের খবর শুনেছি কিনা আমার মনে নেই। আমার বড় আপাদের (বড় বোন) থেকে শুনলাম তুফান আসবে। তুফান কি এটা বুঝার মত তেমন একটা বয়স আমার হয়নি। আবার এই দিকে আমার আব্বা ও আম্মা শহরে ছিল তাই আমাদের ভয় লাগছিল। তুফান আসার খবর শুনে আব্বা ও আম্মা আগের দিন শহর থেকে বাড়ীতে চলে আসল। আমাদের ভয়ও কিছুটা দূর হল।

কিন্তু আব্বার মুখ থেকে তুফানের ভয়াবহতার কথা শুনে আবার ভয় লাগা শুরু হল কারণ আমাদের বাড়ি বঙ্গোপসাগরের পৌনে এক কিলোমিটারের মধ্যে ছিলো তাই অর্থাৎ কাটখালী নৌবন্দরের পৌনে এক কিলোমিটার পূর্বে এবং জল কদর খালের পাশে। আমার আব্বা রেড়িওর খবর শুনার পর পাড়ার আশে-পাশের লোকজনকে বলতে শুরু করল আজ রাতে তুফান আসবে তোমরা আমাদের বাড়ীতে চলে আসবে কারণ তখন আমাদের গ্রামে (আমাদের গ্রাম হচ্ছে বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনায়) কোন আশ্রয় কেন্দ্র ছিলনা এবং দুই তলা বিশিষ্ট কোন দালান ছিলনা শুধু মাত্র আমাদের গ্রামে (পূর্ব বড়ঘোনায়) দুই তলা বিশিষ্ট চারটি দালান ছিল তিনটি আমাদের বাড়ী ও একটি আমার ফুফার বাড়ি। তিনটি বাড়ির মধ্যে আমাদের দক্ষিণ বাড়িটি আমাদের ইউনিয়নের প্রথম ডুপ্লেক্স আরসিসি বিল্ডিং নির্মাণ সন ১৯৬০ সালে এবং উত্তর বাড়িটির নির্মাণ সন ১৯৭৩ সালে। বাড়ীগুলোর দু'টি আমার দাদা মরহুম মখলেছুর রহমান চৌধুরী নির্মাণ করেছেন এবং বর্তমানে আমাদের মধ্যম বাড়িটি আমার বাবা রশিদ আহমদ চৌধুরী ১৯৮৫ সালে নির্মাণ করেন।

আমার আব্বা ও চাচারা যখন ২৮ এপ্রিল ১৯৯১ সালে আমাদের গ্রামের লোকজনকে তুফান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের বাড়ীতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আসতে বলল তখন গ্রামের লোকজন বলল- আমরা অনেকেই ১৯৬০ ইংরাজির তুফান দেখেছি তখন হাটু পরিমাণ পানি হয়েছিল এবারও ঐ পানি খাল বিল ও পুকুর ভরতে চলে যাবে। এই বিশ্বাসে লোকজন কেউ তুফানের ভয়ে আমাদের ও আমার চাচাদের বাড়ীতে আশ্রয় নিতে আসলনা। দিন শেষে সন্ধ্যা আসল তখন ঝড় বাতাসের গতিবেগ ও আক্রমণ বেড়েগেল আর একটু রাত হতে না হতে পানি আসা শুরু হল। আমরা রাতের খাবার খেয়ে দ্রুত বাড়ীর দুই তলায় উঠে পড়লাম এবং বাড়ীর সব দরজা জানালা শক্তভাবে বন্ধ করে দিলাম। পানি বাড়তে থাকল এক সময় আমাদের বাড়ীর নিচতলা ছাদের উচ্চতা সমান পানি হল। আমাদের বাড়ীর দ্বিতীয় তলার পূর্ব পাশে একটি গ্লাসের জানালা ছিল আমরা সবাই ঐজানালা দিয়ে বাহিরের সব দেখতে পাচ্ছিলাম।

ঝড় বাতাসের প্রচণ্ড ঝাপটায় ঘর বাড়ী গাছ একের পর এক ধ্বংস হতে লাগল, চারিদিকে সমুদ্রের মত পরিণত হল। বিশাল বিশাল ঢেউ আঘাত হানতে শুরু করল এবং ঘর বাড়ী নিমিষে ধ্বংস হতে লাগল একসময় মধ্যরাতে আমাদের বাড়ীর পূর্ব বারান্দার ছাদে একবোট (মাছ ধরার বড় নৌকা বা ট্রলার) এসে আটকে গেল, এটি একে পর এক আমাদের বাড়ীর বারান্দার ছাদে আঘাত করতে লাগল তখন আমরা ভয়ে ও আতংকে সময় পার করছি ও মহান আল্লাহ পাককে ডাকছি ঐ ট্রলারের ধাক্কায় সম্পূর্ণ বাড়ী তরতর করে কাঁপতে লাগল এক সময় ট্রলারটি ভেঙ্গে টুকরু টুকরু হয়ে গেল তখন আমাদের ভয়ও কিছুটা দূর হল। ওই ট্রলারের বারবার আঘাতের কারণে তখন আমাদের বাড়ির পূর্ব পাশের বারান্দার একটি দেওয়ালও ভেঙ্গে যায়।

এক সময় ভোর যখন শুরু হতে লাগল তখন মানুষ পানিতে ভেসে ভেসে আসতে লাগল, আমার বাবা হাত ধরে ও লাঠি দিয়ে লোকজনকে বাড়ীর ছাদে তুলতে লাগল, ওহ্ মানুষের কি কান্না আর আহাজারি, স্বজন হারানোর বেদনায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে আসল। এক সময় মানুষ আসতে আসতে সম্পূর্ণ বাড়ী ভর্তি হয়ে গেল। যখন সকালবেলায় পানি কমে যায় তখন বাহিরে গিয়ে দেখলাম ঘর বাড়ী গাছ গাছালি সবকিছু ধ্বংস হয়েগেছে, চারিদিকে মানুষের লাশ আর লাশ ভাসছে পানিতে। স্বজনদের আহাজারি আহ কি ভয়ংকর ও মর্মান্তিক দৃশ্য। এখনো চোখের মধ্যে ভাসে যা কখনও ভুলার নয়। অনেক পরিবারে সবাই মারা গেছে আবার অনেক পরিবারের শুধু একজন বেঁচে আছে। আসুন আজকের দিনে আমরা ঐসব নিহত মানুষের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন-আমিন।


     ইঞ্জিনিয়ার শাহ নেওয়াজ চৌধুরী

(পূর্ব বড়ঘোনা, গন্ডামারা, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম)




বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র,  রেখাচিত্র,  ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।

বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।

আপনার মেইল পাঠাতে:

banshkhalijanaphad24@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই