বাঁশখালী জনপদ সত্যপ্রকাশে আপোষহীন

বিজ্ঞাপন দিয়ে সাথে থাকুন

test

কালজয়ী কথাসাহিত্যহিক ও গণমানুষের নেতা ছিলেন অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন

শুরুতেই বলে রাখছি, শৈশব থেকে অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন আহমদ স্যারের কর্ম ও জীবন সম্পর্কে জেনে আসলেও দূর্ভাগ্যে তাঁকে দেখার সুযোগ হয়নি। তাঁর মহাপ্রয়াণকালে আমি সবেমাত্র দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। শৈশব, কৈশোর ও অধ্যবধি এ মহান ব্যক্তি সম্পর্কে অনেক গৌরবগাঁথা ইতিহাস লোকমুখে শুনে আসতেছি। ছাত্রজীবন কিংবা চাকুরির ইন্টারভিউতে ঘটনাক্রমে বাঁশখালীর প্রার্থী হওয়াতে আমি বাঁশখালীর দুই নক্ষত্র ড. আব্দুল করিম স্যার (উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও সাবেক ভি.সি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)  এবং অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন স্যার (বিশিষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও রম্য লেখক) সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মূখীন হয়েছি। ফলে এ দুই দিকপাল সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ বেড়েই চলছে। আরো সৌভাগ্য যে, ড. আব্দুল করিম স্যারের হাতে গড়া বিদ্যানিকেতনে আমি শিক্ষকতা পেশায় কর্মরত আছি। যার সুবাদে আসহাবউদ্দিন স্যারের সুযোগ্য দৌহিত্র পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক বশির  উদ্দিন আহমেদ কনক স্যারের কাছ থেকেও জ্ঞানতাপস আসহাব উদ্দিন আহমদ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানতে পেরেছি। বাঁশখালীর এ খ্যাতিমান রাজনীতিক, রম্য লেখক, সমাজহিতৈষী, দেশপ্রেমিকের কর্ম ও জীবন সম্পর্কে দু'কলম লেখার সাহস করছি।

জন্ম পরিচয়ঃ অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯১৪ সালে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানার ঐতিহ্যবাহী সাধনপুর গ্রামে এক সামর্থ্যবান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মুন্সী সফর আলী চৌধুরী একজন সমাজসেবক ও বিদ্যানুরাগী ছিলেন। মা নাসিমা খাতুন ছিলেন একজন ধার্মিক ও সম্ভ্রান্ত মহিলা।

শিক্ষাজীবনঃ আসহাবউদ্দিন ১৯৩২ সালে বানীগ্রাম সাধনপুর হাই স্কুলে থেকে কৃর্তিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৩৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ২০ টাকা বৃত্তি লাভ করে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৩৬ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৯ সালে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে  স্নাতকত্তোর ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবনঃ শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়েই তিনি কর্মজীবনের সূচনা করেন। চট্টগ্রাম কলেজেই তাঁর প্রথম অধ্যাপনা। পরে ইন্টারমিডিয়েট ইসলামিয়া কলেজ (হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ), কুমিল্লা নবাব ফয়েজুন্নেসা কলেজ, ফেনী কলেজে ইংরেজি সাহিত্য বিষয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি। ১৯৫২-১৯৫৩ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যাপনা করেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও ভাষা সৈনিকঃ অধ্যপনার পাশাপাশি এ সময় তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তিনি কুমিল্লার ছাত্রসমাজের অগ্রভাগে থেকে আন্দোলনে অংশ নেয়। একই সময় তিনি ছিলেন বেসরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র, 'দি টিচার' এর সম্পাদক। তিনি মূলত ভাষা আন্দোলনে বাংলায় অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও রাজনীতির বিকাশ ঘটায়। পাকিস্তানে ধর্মভিক্তিক রাজনীতির ভিত্তি দূর্বল হয়ে পড়ে। কোন সম্প্রদায়িকতাই একটি জাতির ঐক্যের একমাত্র প্রতীক নয় সেটা  বুঝা গেছে ভাষা আন্দোলনে।  ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক রক্ষণশীলতার প্রাচীরে যখন দেশ জর্জরিত তখনই অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন রাজনীতিতে সক্রিয়ে হয়ে উঠেন। তিনি মাক্সবাদী চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। শৈশব থেকে তিনি দেখেছেন কৃষক -শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের দূর্দশা। জমিদার, মহাজন, সুদখোর, জোতদারের অত্যচার নিপীড়ন, নির্যাতন ও দমনের বাস্তবচিত্র। পক্ষান্তরে, পাকিস্তানের ছয় বছরের লাঞ্চনা-বঞ্চনার ইতিহাস আরো করুণ। মুসলিম লীগের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, অগণতান্ত্রিক মনোভাব, বৈষম্যমূলক মনোভাব, নির্যাতনমূলক নীতি এবং পূর্ববাংলা প্রাদেশিক আইন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে সরকারের টালবাহনা জনগণকে অতিষ্ঠ করে তুলে। এমনি সময় ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলে সেখানে যোগ দেন অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন। '৫৪ যুক্তফ্রন্ট নিবার্চনে, নির্বাচনী ইশতেহার ২১ দফাকে সামনে রেখে বাঁশখালী থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন। সারা বাংলার মতো বাঁশখালীতেও ভোট বিপ্লব হয়ে তিনি প্রাদেশিক সদস্য নির্বাচিত হন।

বাংলার ছাত্রসমাজ, প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও তরুণ  সম্মোহনি নেতাদের কারণে মুসলিম লীগের চরম ভরাডুবি হয়। আওয়ামী মুসলিম লীগের জয়জয়কার হয়। হক-হোসেন-ভাসানী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কাজ করার সুযোগ হয় তাঁর। পরে ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামীলীগ (ন্যাপ) গঠিত হলে তিনি সেখানে যোগ দিয়ে সাধারণ সম্পাদক হন। মাওলানা ভাসানীর ন্যাপ গঠনে তাঁর যথেষ্ঠ ভূমিকা ছিলো। বিপ্লবী ও প্রগতিশীল রাজনীতি করার কারণে এক বছর তাঁকে জেলে থাকতে হয়। সামরিকজান্তা আইয়ূব সরকার তাঁর রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেন। ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তাঁকে আত্মগোপনে থাকতে হয়। তাঁকে ধরে দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা পুরুষ্কার ঘোষণা করা হয়। এ সময় তিনি কৃষকের বাড়িতে বাড়িতে থেকে, সাধারণের বেশধরে অতিকষ্টে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার করেন। ১৯৬৬ সালে আদর্শিক কারণে কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত হয়ে গেলে তিনি চীনাপন্থীদের সাথে ছিলেন। ১৯৬৭ সালে তিনি চট্টগ্রামের জেলা সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে তিনি সাম্যবাদী দলের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ চাষী কল্যান সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন।

দক্ষ সংগঠকঃ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনি অন্যতম সংগঠক। তিনি বাঁশখালী প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলেন। তাঁর চিন্তা চেতনায় ছিলো বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক মুক্তিলাভ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তাঁকে বিভিন্ন সময় আত্মগোপন থাকতে হয়। ১৯৮০ সালে তিনি গণচীন সফর করেন।

লেখক ও গবেষকঃ অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন শুধু একজন সুদক্ষ রাজনীতিক ব্যক্তিত্বই ছিলেন না, তিনি একজন প্রথিতযশা লেখকও ছিলেন। তাঁর ক্ষুরধার  লেখনিতে ফুটে উঠেছে কৃষক-শ্রমিক তথা শোষিত মানুষের দূর্দশা, সমাজ পরিবর্তন, প্রগতিশীল চিন্তাধারা, সাম্য, স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক মনোভাব, বিপ্লব, রম্যতা, ব্যাঙ্গতা, অপরাজনীতির জবাব, সংস্কার, মুক্তচিন্তার মনোভাব, ব্যর্থ রাজনীতির পরিণাম, অর্থনৈতিক মুক্তির উপায়, অপশাসন, স্পষ্টবাদিতা, প্রতিবাদী কন্ঠস্বর, প্রতিবাদিতা ও রসাত্মক সাহিত্যে প্রভৃতি বিষয়। তাঁর লেখা প্রথম বইয়ের নাম 'বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর।'

প্রকাশিত গ্রন্থঃ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৭টি। এসব গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর (১৯৪৯), জান ও মান (১৯৫০), ধার (১৯৫৪), বন্দে ভোটারম (১৯৬১), ইন্দ্রাদির সমীপেষু সের এক আনা (১৯৬৮), হাতে পাঁচ আঙ্গুল (১৯৭০), লেখক ও পাচক (১৯৭১), দাঁড়ি সমাচার (১৯৭১), বিপ্লব বনাম অতি বিপ্লব (১৯৭৪), ভাতের বাংলা কাপড়ের বাংলা (১৯৭৪), বাঁশ সমাচার (১৯৭৪), দ্বিপদ বনাম চতুষ্পদ (১৯৭৫), পথ চলিতে, মীর ঐতিহ্য, ইন্দরা গান্ধীর বিচার চাই (১৯৭৫), উদ্ধার (১৯৭৮), আমার সাহিত্যে জীবন (১৯৮০), ডেইনজারা সিগন্যাল (১৯৮০), ঘুষ (১৯৮৬), উজান স্রোতে জীবনের ভেলা (১৯৯০), দাম শাসন দেশ শাসন (১৯৯১), ভূমিহীন কৃষক কড়িহীন লেখক (১৯৯২), আসহাবউদ্দিন আহমদের সেরা রম্য রচনা সংগ্রহ (১৯৯৪), শিশু তোতা পাখি নয়, নতুন বোতলে পুরাতন মদ ইত্যাদি।

অধ্যাপক আহসাবউদ্দিনের প্রতিটি লেখার মর্মার্থ ব্যাপক, বিস্তৃত ও গভীর। তাঁর সমসাময়িক রাজনীতি ও সমাজবাস্তবতা লেখায় প্রভাব পড়েছে আবুল ফজল, কাজী মোতাহের চৌধুরী, সুফিয়া কামাল, আহমদ ছফা, আহমদ শরীফ প্রমূখ লেখক ও বুদ্ধিজীবীর লেখায়।

শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারকঃ রাজনীতি ও লেখালেখির পাশাপাশি তিনি সমাজসেবা,সমাজসংস্কার, শিক্ষাবিস্তার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিমার্ণ ও সহযোগিতায় এক বিরল দৃষ্টান্ত রেখে যান। তাঁর একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়- বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ, পশ্চিম বাঁশখালী হাই স্কুল, সাধনপুর পল্লী উন্নয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সাতকানিয়া কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম আইন কলেজসহ বহু প্রতিষ্ঠান।

কৃতিত্বের স্বীকৃতি ও পদক অর্জনঃ এ গুণী ব্যক্তি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছে নানা পুরস্কার, সম্মাননা ও সংবর্ধনা। বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- একুশে পদ (২০০৫,মরনোত্তর), বৌদ্ধ একাডেমি পদক, অনুপম পদক, চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ পদক, আইনজীবী সমিতি পদক, বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পদক, চট্টগ্রামসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননা লাভ করেন।

মাটির মানুষঃ অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন আহমদ একজন মুক্তচিন্তা ও উদারপন্থী এবং গণমানুষের নেতা। অতি সৎ, নির্লোভ, নিরাহংকারী, পরোপকারী, সাধামাটা, সহজ সরল মানুষটি অতি ভালোবাসতেন মা, মাটি ও মানুষকে। সদা বলতেন, বইকে ভালোবাসুন, দেশকে ভালোবাসুন, প্রকৃতিকে ভালোবাসুন, মানুষকে ভালোবাসুন, দেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে ভালোবাসুন।

প্রয়াণ (মৃত্যু): আজ ২৮ মে এ মহানসাধকের ২৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৪ সালের এ দিনে ঢাকার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাঁশখালীর এ প্রাণপুরুষ। তাঁর অন্তিম ইচ্ছে অনুযায়ী বাঁশখালী কলেজের সবুজ আঙ্গিনায় মসজিদের পাশে রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার নিচে চিরশায়িত আছেন বাঁশখালীর এ কৃতদার। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসা জানাচ্ছি।





::::লেখা সম্পাদনা::::
মো. নেজাম উদ্দিন সাগর
প্রভাষক- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,
পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় ডিগ্রি কলেজ।
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।







বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র,  রেখাচিত্র,  ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।

বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।

আপনার মেইল পাঠাতে:

banshkhalijanaphad24@gmail.com


কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.