বাঁশখালী জনপদ সত্যপ্রকাশে আপোষহীন

বিজ্ঞাপন দিয়ে সাথে থাকুন

test

এক বিশ্বস্ত কুকুর "বাঁহাদুর"

লোকমুখে নাম তাঁর বাহাদুর। বলছি এক বিস্ময়কর বিশ্বাসী কুকুরের কথা। প্রবাদ আছে,"মানুষের চাইতেও কুকুর বেশি বিশ্বস্থ"। অর্থাৎ আপনি মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকলেও কুকুরকে বিশ্বাস করে ঠকবেন না! অবশ্য এ কথা বলার অসংখ্য যৌক্তিক কারনও আছে বটে। উদাহরণস্বরুপ বলা যেতে পারে, আপনার-আমার আশেপাশে এমন অনেক আপন মানুষ আছে, যাদের আপনি আমি সবসময় আপন ভাবি, খাওয়াই-পরাই ইত্যাদি। ঠিক সেই মানুষগুলোই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থের জন্য বেঈমানী কিংবা আপনার-আমার ক্ষতি করতে পিছপা হয় না।

তবে এ ক্ষেত্রে কুকুরকে ব্যতিক্রম চরিত্র বলা চলে। ধরেন, আপনি  একটা কুকুরকে দু-তিন দিন খেতে দিলে আপনি হয়ে যাবেন তার কাছে তার মনিব, তার আপন, তার পৃথিবী আরও কত কী! ওই কুকুর আপনার সাথে প্রায় ঘুরতে চাইবে, আপনার আশেপাশেই থাকতে চাইবে, আপনার আদর-ভালোবাসা চাইবে, আপনার বাড়ি নিজ ইচ্ছায় পাহারা দিবে ইত্যাদি-ইত্যাদি।

আমার এ লেখার প্রসঙ্গই হলো 'বাঁহাদুর' নামক এক কুকুরকেই ঘিরে। রংগিয়াঘোনা এলাকার খুবই পরিচিত মুখ সে। ভালোবেসে সবাই তাঁকে ডাকে (বাঁহাদুর)। এ এলাকার প্রায় সব জায়গাতেই তাঁর বিচরণ, হবে না-ই বা কেন..? সেই-ই তো এ রংগিয়াঘোনা এলাকার অত্যন্ত বিশ্বস্ত প্রহরী। আমাদের এলাকায় অত্যধিক কুকুর থাকা সত্ত্বেও বাঁহাদূর নামক কুকুরটি কীভাবে এতটা জনপ্রিয়, সবার মধ্যমণি আর বিশ্বস্ত হলো সে অনুভূতি প্রকাশ করা-ই আর তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করাই আমার মূল উদ্দেশ্য।

আমি বছর দেড়-এক আগে থেকেই দেখে আসছি, বাহাদূর তার ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত সাবলীল শরীরের অধিকারী। তাঁকে দেখলেই যে কারোর-ই আচমকা ভালো লেগে যায়। রংগিয়াঘোনার আশেপাশে আর রুস্তম মাঝির বাড়িতেই তাঁর সদা বিচরণ। রংগিয়াঘোনা মাদ্রাসার পাশে প্রায় সকল দোকানির পরম যত্নে হেলেদূলে বড় হয়েছে আজকের তথাকথিত বাঁহাদুর নামক এ কুকুরটি। আজিজ সওদাগর, আব্দুল আলী সওদাগর, রাফি সওদাগর এবং নাছির সওদাগররা তাঁকে বিনাদ্বিধায় খেতে দেয়, খেতে দেয় বন-কলা, কেউ দেয় রুটি-পরোটা, কেউ দেয় হালুয়া-পোয়াগোলা, কেউ দেয় সিংগারা-ছমুছা, কেউ দেয় বিস্কুট-মুড়ি ইত্যাদি। অধিকাংশ দোকানের কাস্টমার তো আবার বাঁহাদুরের সাবলীল শরীর, আচরণপ্রকৃতি,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বিশ্বস্ততা দেখে দোকান থেকে নানা জিনিস কিনে খেতে দেয় আর আনন্দ উপভোগ করে।

তাছাড়া রুস্তম মাঝির বাড়িতে ঢুকলেই প্রায় সব গৃহস্থ তাঁকে ভাত খেতে দেয়। বিশেষ করে রাফির মা নামক এক ভদ্রমহিলা বাহাদূরকে প্রতিনিয়ত ভাতের পাশাপাশি বাড়তি বিরিয়ানি থেকে শুরু করে গৃহস্থের প্রায় সকল খাবার খেতে দেয়। মোট কথা বাঁহাদুর সবার কাছেই বেশ আদর পায়। এলাকার প্রায় সবাই-ই তো তাকে দেখামাত্রই একবার হলেও বলে ওঠে....বাঁহাদুর.....

বাঁহাদুর দিনের বেশিক্ষণ সময় রংগিয়াঘোনা মাদ্রাসার পার্শ্বে সিকদার দোকানের মোড়ে সদা উপস্থিত। এ এলাকার প্রায় সকল শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সবাই-ই তাকে আদর করে ক্ষেপায়! সকলেই চলন্ত গাড়ি দেখলেই বাঁহাদুর কে উদ্দেশ্যে করে বলে_বাঁহাদুর নেহ্-নেহ্, তৎক্ষনাৎ সে ঘেঁউ-ঘেঁউ করে গাড়ির পিছনে দৌড় দেয়।সে-যে ঘেঁউ-ঘেঁউ করবে তার সীমানাও খুব অল্প, বেশিদূর যায় না,পরক্ষণেই আবার ফিরে আসে।

পড়ন্ত বিকালে সবাই যখন রুস্তম মাঝির বাড়ির ভালোবাসার সেঁতুতে বসে গল্প করে, তখনও সবার আশেপাশে বাঁহাদুর সঙ্গী হিসেবে বিরাজ করে। ওর সাথে দূষ্টুমি করেই সবাই সময় কাটায়। আমি (লেখক) নিজেও বাড়িতে কখনো একা একা বোরিং ফিল হলে বাঁহাদুর কে খুঁজে নিই, চলন্ত গাড়ি দেখলেই বলে ওঠি_বাঁহাদুর...নেহ্, নেহ্ তৎকালীন ওই সময়টা খুবই উপভোগ করি!প্রায় সবাইকে  বলতে শোনা যায়_কুকুরের লেজ নাকি সোজা হয়না, আমি নিজেই একটা লাঠি দিয়ে বাঁহাদুরের লেজ সোজা করার চেষ্টা করেছিলাম! আসলেই হ্যাঁ, কুকুরের লেজ সোজা হয় না!

রাতের বেলা বাঁহাদুর আমাদের এলাকাকে অত্যন্ত সজ্জন হিসেবে পাহারা দেয়, নিশীরাতে তাঁর গর্জন শোনা যায় বহুবার। বাঁহাদুর আছে বলেই কিন্তু আমরা শান্তিতে চোর-চামড়ার উপদ্রব কে তোয়াক্কা না করেই ঘুমাতে পারি। অধিকাংশ সময় শেষ দুপুরে বাঁহাদুরকে রুস্তম মাঝির বাড়িতেই ঘুমাতে দেখা যায়। বিকালে সে সময় কাটায় এলাকার প্রায় শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সবার সাথেই...! সে যেন খুবই আপন। বাঁহাদুরের নানা কর্মকাণ্ড সবাইকে অনুপ্রাণিত করে।

তাঁর নানা কর্মকাণ্ড, সবাইকে আনন্দ দিয়ে, বিশ্বস্থতার প্রমাণ দিয়ে বাঁহাদূর হয়ে উঠেছে সকলের আস্থার, ভরসার মধ্যমণি। তার প্রকট সাহসিকতা, শরীরের সাবলীল গঠন, বিচক্ষণতা ও বিশ্বাসী বলেই সবাই তার নাম বাঁহাদুর রেখেছে।

শেষবেলায় কথা হলো- পৃথিবীর সবকিছু একদিন চিরতরে ঘুমাবে, হয়তো তথাকথিত বাঁহাদুর নামক কুকুরটিও একদিন চিরনিদ্রায় যাবে, বেঁচে থাকবে তার উল্লেখিত সকল কর্মকাণ্ড। তখন যদি কেও কোনো কুকুরের প্রসঙ্গ আনে, আমরা রংগিয়াঘোনা বাসীরা হয়তো তখন বলবো আমাদের বাঁহাদুর নামক একটা বিশ্বস্ত কুকুর ছিলো। যে-কিনা প্রায় সকলের সাথেই মিশতো, আনন্দ করতো, সবার সাথে দৌড়াদৌড়ি করতো, চলন্ত গাড়িকে উদেশ্য করে কেউ নেহ্-নেহ্ বললেই দৌড় দিতো, ফ্রেশ খাবার ছাড়া খেতো না, অযাচিত আচরণ করতো না, রাত্রিবেলা আমার এলাকা পাহারা দিতো, সকলেই তাকে বাঁহাদুর ডাকতাম ইত্যাদি-ইত্যাদি।

এ বাঁহাদুর-ই যেন শত শত সাধারণ কুকুরের ভিন্ন প্রতিচ্ছবি। 


লেখক: মোহাম্মদ জাইদ

শিক্ষার্থী: বাঁশখালী সরকারি বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়।




বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র,  রেখাচিত্র,  ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।

বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।

আপনার মেইল পাঠাতে:

banshkhalijanaphad24@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.