বাঁশখালী জনপদ সত্যপ্রকাশে আপোষহীন

বিজ্ঞাপন দিয়ে সাথে থাকুন

test

"||কঙ্কাল||" -গল্প

জসিম মনছুরি::::

মিটিং শেষ  হলো। দাদা বললেন ,শুধু ক্ষমতা লাভ করলে হয় না। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে কোন না কোন পথ অবলম্বন করতে হয়। ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকা এত সহজ নয়। কর্মপরিকল্পনা স্থির হল। যারা অস্ত্রকে ভয় পায় না তাদেরকে রুদ্ধ করা ছাড়া ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হয় না। অনেকক্ষণ মিটিং চললো। মিটিং শেষে যে যার মত চলে গেল।  কি সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা স্পষ্ট করে জানা যায়নি। নিশ্চিন্তে বলা যায় জঘন্য কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরদিন ভোর রাতে আজমকে সাদা পোশাকের লোকজন এসে কিছু জিজ্ঞাসিত বিষয় আছে বলে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল তার হদিস পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য অনেক স্থানে যোগাযোগ করেও তার হদিস পাওয়া যায়নি। এমনকি  বিভিন্ন থানায় গিয়েও খোঁজা হয় কিন্তু কোন লাভ হয়নি। অনেকদিন হলো তার নিখোঁজ হওয়ার। পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছিল, কোন কাজে আসেনি। কয়েকদিন যেতে না যাতে আরমান আলিকেও একই কায়দায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরিবারের সদস্যরাও বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে তার কোন হদিস পায়নি। কয়েকদিন পর শোনা গেল ইলিয়াসকে নাকি একই কায়দায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এভাবে শুরু হয় আকস্মিক তুলে নেয়া। তাদেরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। এভাবে শত শত লোককে নিয়ে যাওয়া হয় তারা আর ফিরে আসে না। খোঁজখবর কম নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তারা পরিবারকে কেবল আশ্বস্ত করে মাত্র। আমরা বিষয়টা দেখছি; কিভাবে তাদের উদ্ধার করা যায় । এটুকু বলেই তাদের দায়িত্ব যেন শেষ। দেশময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যারা যাচ্ছে তারা আর ফিরে আসে না। তাদের ভাগ্যে কি হয়েছে তাও জানার কোন উপায় নেই। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে গেল। কি হচ্ছে এসব ? কে কি ভাবলো  তাতে কর্তৃপক্ষের কিছুই যায় আসে না। তারা কেনইবা নিয়মিত গুম হচ্ছে? কেউ তার হিসেব দিতে পারে না। তবে জলজ্যান্ত মানুষগুলো নিমিষেই পর্দার অন্তরালে চলে যাচ্ছে। যারাই সত্য কথা বলে জনসমক্ষে  তাদের আর হদিস পাওয়া যায় না। আজ দেখতে দেখতে প্রায় দেড়যুগ চলে গেছে এর মাঝে যারা হারিয়ে গেছে তারা কেউ ফিরে আসেনি। আফার মহা খুশি। তার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার মত এমন লোক বুঝি পৃথিবীতে আর নাই। ধারণা মিথ্যে নয়। কেউ  সত্য বলার সাহসী হয় না। দুঃসাহস দেখাতে গিয়ে কেউ অন্তরালে  চলে যেতে চায় না। জীবনের মায়া বলে কথা। জীবন কে না ভালোবাসে? পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে সবাই চায়। মানুষ জন্মগতভাবেই লোভী। যারাই পৃথিবীতে আসে তারা আর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে পারে না। এই হলো মানুষের স্বভাব। যাওয়ার কেউ চিন্তা করে না। আফারও চিন্তা করে নাই তাকে ক্ষমতা থেকে  চলে যেতে হবে। সভা সমাবেশ ও অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সভা সমাবেশ মানে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ। কেউ প্রতিবাদ প্রতিরোধ করোক সেটা আফার কখনো চায়নি। তার সমকক্ষ এই পৃথিবীতে কেউ আছে বলে আর মনে হয় না।  ফেরাউনি কায়দায় মসনদ টিকিয়ে রাখতে সে বদ্ধপরিকর। আফারের রক্তেও ফেরাউনের কিঞ্চিত রক্ত মিশেছিল হয়তো। তা না হলে শ্মশান ভূমিতে কেউ রাজত্ব করতে চায় না। রক্তের হোলি খেলায় আফার নিত্যানন্দ।  ছোটখাটো আন্দোলন যে হচ্ছে না তা নয়। আন্দোলন হওয়ার পর শোনা যায় পেয়াদার গুলিতে শত শত লোক প্রাণ হারিয়েছে কিংবা হাজার হাজার লোক নিখোঁজ রয়েছে। লেলিন মার্কস কিংবা চেগুয়েবেরা পৃথিবীতে সাহস দেখিয়েছেন যেই  দু:সাহসের বিনিময়ে রক্তের বন্যায়  তারা স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছেন। জনমনে আতঙ্কের ঘোর এখনো কাটেনি। সবার ভাবনা এতগুলো মানুষ যায় আর ফিরে আসে না কেন? এরা কোথায় যায়? পৃথিবী থেকে চলে গেছে নাকি লোকের অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে। কিন্তু তাদেরকে কেনইবা লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এসব ভাবার সময় বা কোথায়? হয়তো মনে মনে ভাবছে না তা নয়। মনে মনে ভাবা আর প্রকাশ্যে বলা তো এক নয়। কে কিভাবে নিলো সে ভাবনার সময় আফারের কই ? সবাই যেখানে নিরব হয়ে আছেন সেখানে আফারের কি দোষ। ঈশ্বর তো আর এমনে এমনে দেয় না। চেয়ে নিতে হয়। অর্জন করে নিতে হয়। এসব জানা থাকলেও এমন কোনো সন্তান আফারের রাজ্যে জন্ম হয় নাই। যার বিপ্লবে অফারের মসনদ ভেঙ্গে তছনছ করে দিবে। কিন্তু ঈশ্বরের শাস্তি বলে কথা। বিধি ছাড় দেন ছেড়ে দেন না কখনো। আফারের সাহস আরো বেড়ে গেছে। ইদানিং অফারের কথাবার্তার লাগামহীনতা চাওর হচ্ছে। অহংকারের অতিমাত্রা  সুস্পষ্ট।

নামরুদ যখন সীমা অতিক্রম করেছিল, তার সমকক্ষ কেউ নাই বলে ঘোষণা করল। তখন ঈশ্বর তার অস্তিত্ব জানান দিতে শুধুমাত্র একটি লেংটা মশা পাঠান।  মশার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে নামরুদ সিংহাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এই হল ঈশ্বরের খেলা। ঈশ্বর আছে থাকবেন চিরন্তন সত্য। ঈশ্বর দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেয় না। কথায় আছে মন বুঝে ধন দেন। যাদের মনে কালিমা লেপন করে আছে সেই কালিমার বহিঃপ্রকাশ না ঘটা পর্যন্ত ঈশ্বর সুযোগ দিয়ে থাকেন। সেই সুযোগ গ্রহণ করে কেউ অহংকারী হয় কেউ বিনয়ী  হয়। কেউবা আবার নিজের উপর আর কোন ক্ষমতা নাই বলে অতিমাত্রায় অহংকারী হয়।
আফারের কথায় স্পষ্ট সে জনগণের জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন। নিজের জন্য তিনি কিছুই করতেছেন না। কেউ  অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি সরাসরি বলে দেন আপনজন হারানোর বেদনা আমার চেয়ে আর কেউ বেশি বুঝেনা। আপনজন হারানোর বেদনা কত কষ্টের তা আমি বুঝি। এই সান্ত্বনাটুকু দিয়ে হারিয়ে যাওয়া পরিবারকে তিনি শান্ত করার চেষ্টা করেন। সান্ত্বনায় হারিয়ে যাওয়া পরিবার শান্ত হতে পারে না। অশান্তির আগুনে জ্বলতে জ্বলতে এক সময় দাবানলে পরিণত হয়। সেই দাবানল বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। তখন ফায়ার সার্ভিসের সামান্য জলে আগুন নিভানো সম্ভব হয় না। দাবি-দাওয়া কম উত্থাপিত হয়নি। কিছু পূরণ করছেন আফার আর কিছুই বা পূরণ করেননি যেগুলো মৌলিক সেগুলো পূরণ না করে অপশনালগুলো আফার মেনে নিয়ে  জনগণকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। নিজে আখেরগুছিয়ে ক্ষমতা ও সম্পদের পাহাড় রচনা করছেন। এত এত সমস্যার উদ্ভব হয়েছে গণনাহীন। চামচারা আফারকে সব সময় প্রটোকল দিয়ে থাকে। আফারকে দাঁড় করিয়ে চামচারা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়। জনগণের সব অধিকারটুকু যখন কেড়ে নেওয়া হয় তখন অধিকারের জন্য কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে যায়। শুরু হয় বিপ্লব। যখন কেউ পারে নাই তখন তরুণরা বিপ্লবী হয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে এগিয়ে যায়। বিপ্লবের অতিমাত্রায় আফাররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। নতুন সূর্য উদয় হয়। স্বাধীনতার সূর্য সার্বভৌমত্বের সূর্য। আফারের মসনদ ভেঙে পড়ে। বিদ্রোহের দাবানলে শুরু হয় দানব নিধনের উৎসব। খুঁজে পাওয়া যায় জীবন্ত শত শত কবর যেখানে জীবন্ত মানুষগুলোকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। একে একে ফিরে আসতে শুরু করে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলি। যারা সুঠাম দেহের অধিকারী ছিল তারা আজ  কঙ্কাল হয়ে ফিরে আসে। নতুন জীবনের নতুন গানে। আবার স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকার। আজম আলী বিভৎস জীবন্ত ঘরের বর্ণনা দিচ্ছিলেন : শতশত লোক কার বর্ণনা শুনছেন কিভাবে তাদেরকে নির্যাতন করা হয়েছিল। চোখ বন্ধ করে রাখা হয়েছিল খাবার দেওয়া হতো না। হাতবন্দী করে রাখা হয়েছিল। বীভৎস বর্ণনা শুনে জনগণ কান্নায় ভেঙে পড়ে। তবু আশার আলো দেখতে পায় জনগণ। একে একে ফিরে আসতে শুরু করে জীবন্ত কঙ্কালগুলো। যেন সারা পৃথিবী কঙ্কালের এক মিছিল। যে মিছিলের নেতৃত্বে দিচ্ছিলেন আজম আলী আরমান আলি। ইতিহাসের জীবন্ত কবর গুলোকে জনতার জন্য উন্মোমুক্ত করে দেয়া হয়। যেখানে অভিশাপ হয়ে আছে আফারের পাপাচারি আত্মা ও পাপিষ্ঠ বাসনার নরকুণ্ড।

  (জসিম মনছুরি)

কবি ও কথাসাহিত্যিক





বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র,  রেখাচিত্র,  ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।

বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।

আপনার মেইল পাঠাতে:

banshkhalijanaphad24@gmail.com


কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.