বাঁশখালীর জলকদরের বুকে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। |
শিব্বির আহমদ রানা:::::
পূর্ব দিকে বিশাল পাহাড় আর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় অঞ্চল। বাঁশখালীর বুক ছিঁড়ে উত্তর দক্ষিণ লম্বালম্বি বয়ে যায় আঞ্চলিক প্রধান সড়ক। সড়কের পূর্বাংশের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে ঐতিহ্যের বাঁশখালী জলকদর খাল। এ জলকদর খাল বাঁশখালীকে ইকোনমিক জোনে রুপ দিয়েছে। ঐতিহ্যের এ জলকদর খাল প্রভাবশালী ও ভূমিদস্য সিন্ডিকেট চক্র অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। আরেক দিকে ভাঙ্গণের খেলায় দিন দিন ভরাট হয়ে যাওয়ায় সংকুচিত হয়েছে। জলকদর দখল ও গতিপথে বাধা সৃষ্টি করার ফলে বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে পানির স্বাভাবিক চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায় বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যায় কৃষকের ফসলি জমি, মাছের ঘের ও উপকূলবর্তী জনসাধারণের বসতঘর।
এই জলকদর খাল অতীতে বাঁশখালীর জন মানুষের জীবন জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হতো। বাঁশখালী থেকে ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে কাওকে চট্টগ্রাম যেতে হলে নিশি যাপন করে অপেক্ষা করতে হতো বাংলাবাজার ঘাট থেকে শুরু করে চৌধুরী ঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে। জোয়ার ভাটার সময় নির্ধারণ করে গভীর রাত থেকে কাক ডাকা ভোর পর্যন্ত কোলাহল মুখর থাকতো জলকদর খালের বাংলাবাজার, সরল, বশির উল্লাহ মিয়াজীর হাট ও চৌধুরী ঘাট। সে সময়ে এমনকি ধান, চাউল, লবণ, মাছ, শাক-সবজি, মাটির তৈসজপত্র ও মাতামহুরী থেকে দীর্ঘ চালায় চালায় বাঁশের বাণিজ্যে মুখর থাকতো জলকদরখাল। কিন্তু সেই ঐতিহ্যবাহী জলকদরখাল কালের বিবর্তনে হারিয়েছে তার রূপ, যৌবন, পদচিহ্ন। এখন জলকদর খালকে অনেকটা মৃত বল্লেই চলে। সময়ের বিবর্তনে যোগাযোগ ব্যবস্থা যতই উন্নত হোক না কেন নদী মার্তৃক বাংলাদেশে বাণিজ্যের প্রসারের জন্য নদীর ঐতিহ্য অস্বীকার করার জো নেই।
ভাঙ্গণের খেলায় বেঁড়ীবাঁধ ভেঙে বিলীনের পথে বাঁশখালীর জলকদর খাল। |
এদিকে জলকদরকে ঘিরে বর্তমানে শেখেরখীল ফাঁড়িরমুখ, বাংলাবাজার ঘাট, জালিয়াখালী নতুনবাজার ঘাট বিশাল ইকোনমিক জোনে পরিণত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরে জেলেরা এসব ঘাটে ভীড় জমায়। এখানে জলকদর খালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অর্থনৈতিক মহাযজ্ঞ। কোটি কোটি টাকার জলযান এসব ঘাটে ভীড়ে। জেলেপল্লীর জীবন জীবীকার সাথে এ জলকদর জড়িত। ঐতিহ্যের এ জলকদর খালটি আজ বিলীনের পথে। একদিকে প্রভাবশালী মহল ও সিন্ডিকেট ভূমিদস্যুদের পেটে জলকদরের বৃহত্তম অংশ। অপরদিকে নদী ভাঙ্গণের কবলে ও নড়বড়ে বেঁড়ীবাঁধের ফলে জলকদর হারিয়েছে পদচিহ্ন।
এসব জনভোগান্তি লাঘবের লক্ষ্যে খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও সীমানা নির্ধারণের জন্য বিগত ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ছয় জন সার্ভেয়ার নিয়োগ দেয়া হয়। বাঁশখালী উপজেলা ভূমি অফিস ছয়জন সার্ভেয়ারের সঙ্গে একজন ডিজিটাল সার্ভেয়ার নিয়োগ দেয়। প্রায় এক বছরের চেষ্টায় খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ সফলতার সঙ্গে সমাপ্ত করে গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সার্ভে রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করে বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন।
বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, 'নির্ভুল সীমানা নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে অবৈধ দখল সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে উপজেলা প্রশাসন জলকদর খালের সীমানা নির্ধারণের কাজটি ম্যানুয়ালি না করে ডিজিটাল সার্ভের মাধ্যমে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতকৃত সার্ভে রিপোর্ট বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।'
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তার বলেন, 'গতবছর বাঁশখালীতে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যে সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতায় অসংখ্য চ্যালেঞ্জ ও বাধা মোকাবেলা করে জলকদর খালের সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। খানখানাবাদ ও সাধনপুরের সংযোগস্থল ঈশ্বর বাবুর হাট থেকে কুতুবখালী চ্যানেল পর্যন্ত বয়ে চলা খাল থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনা ছিল বাঁশখালীর আপামর জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি। আমরা সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মোতাবেক চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় ডিজিটাল সার্ভের মাধ্যমে জলকদর খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন করে সিএস ও বিএস নকশা/ম্যাপ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।'
বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'রঅনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।
banshkhalijanaphad24@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন