বাঁশখালী জনপদ সত্যপ্রকাশে আপোষহীন

বিজ্ঞাপন দিয়ে সাথে থাকুন

test

মাঠ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে বাঁশখালীর লবণচাষীরা

বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে লবণমাঠ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে লবণ চাষীরা।
শিব্বির আহমদ রানা: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ লোকের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ লবণচাষের সাথে জড়িত। শীতের মৌসুমে বাঁশখালীর উপকূলে চলছে লবণ উৎপাদনের ধুম। এখানকার লবণচাষীরা দিনের পুরোটাই সময় ব্যয় করছেন লবণ উৎপাদনে। ভোরে সূর্য উঠার সাথে সাথে লবণচাষীরা মাঠ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় দিচ্ছে। সকাল থেকেই সন্ধ্যাবধি বিরতীনভাবে মাঠে কাজ করে চাষীরা। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চিংড়ির ঘের গুঠিয়ে লবণের ব্যাপক উৎপাদনের লক্ষ্যে লবণ চাষীরা মাঠেই ব্যস্ত সময় পার করছে। বিগত দিনে উপকূলের অনেক জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকলেও বর্তমানে লবণ চাষীরা লবণ উৎপাদনে প্রায় জমি চাষ করছে। 

পুরোদমে মাঠ প্রস্তুতির কাজ চলছে বাঁশখালীর লবণমাঠ গুলোতে। গত অর্থ বছরে লবণের ব্যাপকহারে দাম পাওয়ায় চাষীদের এবারও লবণ উৎপাদন করতে  উৎসাহ বেড়ে গেছে। ফলে চাষীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে লবণমাঠ তৈরীর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তারা মজুদকৃত লবণ বিক্রির পাশাপাশি লবণমাঠ তৈরীরও কাজ করে যাচ্ছে নিরলস পরিশ্রমে।

বিগত দিনের উৎপাদিত লবণগুলো মজুদদাররা পাইকারি হারে ৬ থেকে ৭ টাকা কেজি মুল্যের জায়গায় এখন খুচরা বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকার উপরে বিক্রি করছে। পাইকারী বাজারও বেশ চড়া। এই দাম বাড়ার ঘটনায় চাষীদের মুখে দেখা দিয়েছে হাসি। ভাল দাম পাওয়ায় লবণ চাষীরা এখন খুবই আনন্দিত। চাষীদের মজুদকৃত লবণ বিক্রির ধুম পড়েছে সর্বত্রে। বর্তমানে লবণ চাষীরা প্রতিমণ লবণ পাইকারি দরে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছে এমনটি জানান সংশ্লীষ্ট চাষীরা।

উপকূলীয় অঞ্চল গুলোর মধ্যে দেশের কক্সবাজার এবং খুলনার পর চট্টগ্রামের একমাত্র বাঁশখালীতেই লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। বাঁশখালীতে পুইছড়ি, ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, চাম্বলের ডিপুটিঘোনা, শীলকুপের পশ্চিম মনকিচর, সরল, মিনজির তলা, কাথরিয়া, খানখানাবাদ (আংশিক) এলাকায় লবণের ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও এখানকার প্রায় কয়েক হাজার লবণ চাষী লবণ উৎপাদনের কাজে মাঠে নেমেছেন। এখানকার চাষীরা মোটামুটি পর্যায়ে লবণের দাম পেলেও এবং চাহিদা কম থাকায় বেশ কিছু লবণ ব্যবসায়ী লবণ মজুদ করে রাখে। সম্প্রতি সময়ে এই লবণের দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীদের মজুদকৃত লবণ বিক্রির ধুম পড়ে গেছে তাদের মাঝে।

এ ব্যাপারে পূর্ব বড়ঘোনা এলাকার লবণ ব্যবসায়ী বদি আলম জানান, পূর্বের চেয়ে হঠাৎ করে লবণের দাম মণপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা তাদের মজুদকৃত লবণ চড়া দামে বিক্রি করছে। সামনে এই দাম স্থায়ী নাও পেতে পারে এই আশংকায় চাষীরা তাদের মজুদকৃত লবণ তড়িগড়ি করে বিক্রি করে দিচ্ছে। তাছাড়া প্রান্তিক চাষীদের মাথায় থাকে নানা ঝামেলা। জমির মালিকের কাছে জমির লাগিয়দ পরিশোধের বিষয়টিও তাদের মাথায় রেখে কাজ করতে হয়। তাদের প্রতিজনের কাছে ৩ থেকে ৪ কানি পরিমাণ জমি লবণ চাষের আওয়তায় থাকে। আর এই লবণ মাঠকেই পুঁজি করে চলে তাদের সংসার।
পূর্ব বড়ঘোনা এলাকার লবণ ব্যবসায়ী বদি আলম লবণমাঠ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ছবি

ছনুয়া এলাকার লবণচাষী ইয়াছিন, মোজাফ্ফর, ছৈয়দ নুর, কালাম জানান, আবহাওয়ার প্রতিকূল পরিবেশ যদি বিরাজমান না থাকে তবে আমরা বিগত সময়ের চেয়ে আশানুরুপ লবণ উৎপাদন করতে পারবো। যদি শেষ পর্যন্ত এই দাম অব্যাহত থাকে তাহলে বাঁশখালীর উপকূলীয় কয়েক সহস্রাধিক লবণ চাষী তাদের পরিশ্রমের সুফল পাবে এই আশা রাখছে।

সংশ্লীষ্ট লবণচাষীদের অনেকে বলেন, সরকার যদি বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় উৎপাদিত এসব লবণ দেশের সর্বত্র রপ্তানিতে সহযোগিতা করেন তাহলে  এখানকার লবণ চাষীরা আরো বেশী উপকৃত হবে এবং কাংঙ্খিত মানের দাম পাবে। তারা এই লবণ শিল্প রক্ষা এবং মানসম্মত লবণ উৎপাদনে সরকারকে আরো বেশী মনযোগী হওয়ার আহবান জানান।

বাঁশখালীজনপদ২৪.কম/রানা

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.