সম্প্রসারণ কাজে নয় ছয়, বাঁধা বৈদ্যুতিক খুঁটি ও অবৈধ স্থাপনা ধুলির শহর বাঁশখালী! মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মানুষ
সম্প্রসারণ কাজে নয় ছয়, বাঁধা বৈদ্যুতিক খুঁটি ও অবৈধ স্থাপনা ধুলির শহর বাঁশখালী! মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মানুষ
জোবাইর চৌধুরী: চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিকল্প রুট বাঁশখালী পিএবি সড়ক সম্প্রসারণ কাজে ধীরগতির দরুন ধুলির শহরে পরিণত হয়েছে পুরো বাঁশখালী উপজেলার প্রধান সড়ক। নিত্যদিনের ধুলিতে জনজীবনে নেমে এসেছে নাভিশ্বাস। তাছাড়া পুরো উপজেলার সড়ক নিকটাবর্তী বসবাসকারী শিশু থেকে শুরু করে সকল শ্রেনীর মানুষের মাঝে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছেন। তাছাড়া সড়কের সম্প্রসারণ কাজ প্রকল্পে নয় ছয়েরও অভিযোগ এনেছে এলাকাবাসী।
এদিকে ১৮ ফুট পুরাতন এই আঞ্চলিক মহাসড়ককে ২৪ ফুটে উন্নীতকরণে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও অবৈধ স্থাপনা। এদিকে সড়কের সম্প্রসারণ কাজের গতি না থাকায় পুরো উপজেলার বাজার পয়েন্ট ও সড়কের উভয় পার্শ্বে দোকানীদের ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে বলে বিভিন্ন বাজার পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়। ধুলির শহরে পরিণত হওয়ায় দোকানীদের ব্যক্তিগত খরচে সড়কে যার যার মত করে পানি ছিড়িয়ে ধুলি বাঁচার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। পুরো প্রধান সড়ক জুড়ে ধুলিযুক্ত হয়ে সাধারণ পথচারীসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরাও অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
রবিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে মুঠোফোনে সড়ক সম্প্রসারণ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতির সত্যতা স্বীকার করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, অবৈধ স্থাপনা, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বনবিভাগের সড়ক সংযুক্ত গাছ কাটার প্রক্রিয়াসহ একাধিক বিষয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় কাজে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তবে অবৈধ স্থাপনা বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নেওয়া, গাছ কাটাসহ বিভিন্ন বাঁধা শীঘ্রই সমাধান পূর্বক কাজের গতি বাড়ানো হবে। তাছাড়া এসব প্রক্রিয়া সম্পন্নের পথে রয়েছে বলেও তিনি জানান। ধুলিযুক্ত প্রধান সড়কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন, ২টি পানির লরি ট্রাক সকাল বিকাল ২ বার করে সড়কে পানি ছিটাতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। কাজের অনিয়ম ও নয় ছয় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছুটা সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে এ বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।
স্থানীয় ও সওজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২৭ কোটি ১ লক্ষ টাকা বাঁশখালীর পিএবি সড়ক সম্প্রসারণ কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয় রানা বিল্ডার্স, হাছান বিল্ডার্স ও ছালেহ আহমদ বিল্ডার্স নামে ৩টি যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। কাজ শুরুর ৫৪০ দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার নিয়ম থাকলেও পিএবি সড়ক সম্প্রসারণ কাজ এখনও ৩০%ও করেনি এই যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সমস্যাকে পুঁজি করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলো কাজের গুণগত মান নিম্নমানের ও ধীরগতিতে চালাচ্ছেন বলে এলাকার সাধারণ মানুষের অভিযোগ। তাছাড়া পিএবি সড়ক জুড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে ১৮ ফিটের সড়ককে ২৪ ফিটে উন্নীতকরণ সম্ভব নয় বলে প্রধান সড়কের পাশে স্থিত সংশ্লিষ্ট বাজার পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়। তাছাড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি না সরিয়ে মেগাডম এর কাজ সম্পন্ন দেখিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ২৪ফিট সড়ক উন্নীতকরণসহ উভয় পার্শ্বের ৩ ফিট সোল্ডার থাকার নিয়ম থাকলেও পুরো সড়ক জুড়ে এই নিয়ম মানা হয়নি। যার ফলে নয় ছয়ে কাজ চলছে কাজের মত।
এদিকে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা জানান, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ মদদে স্থানীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর নিরলস প্রচেষ্টায় অবহেলিত বাঁশখালীকে উন্নয়নের দৌড়গড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। তারই ফলশ্রুতিতে বাঁশখালীর পিএবি সড়কে সড়ক সম্প্রসারণ কাজ শুরু করেছে যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলার দরুন কাজের মান তদারকিতে দায়িত্বে থাকেন সওজ কর্তৃপক্ষের কর্তারা। আদৌ কাজের মান নির্ণয়ে সঠিক তদারকি হচ্ছে কিনা তা জানতে চাইলে অনেকে জানান কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে খুবই ধীরগতিতে চলছে। তাছাড়া বিভিন্ন সমস্যার সমাধান না করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ চালিয়ে যাওয়ায় অনেকটাই গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার পুরো সড়ক জুড়ে পরিদর্শন করে দেখা যায় ধুলিযুক্ত পরিবেশে পরিণত হয়েছে। এই ধুলি মানব জীবনে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মারাত্মক বলে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের অভিমত। এহেন যখন সড়ক সম্প্রসারণের কাজের অবস্থা তখন কাজের গুণগত মান সঠিক নির্ণয়ে সওজ কর্তৃপক্ষসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উর্ধ্বতন মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
এদিকে সড়ক জুড়ে ধুলিযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে বাঁশখালী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার তৌহিদুল আনোয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, যেসব মানুষ ধুলির আওতায় চলাচল করবে তাদের ভবিষ্যতে মারাত্মক শ্বাসকষ্ঠ ভুগার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিভিন্ন অনিয়ম ও পরিবেশ হুমকির মুখের বিষয়ে জানতে একাধিকবার যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে বার বার যোগাযোগ করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
![]() |
এক্সক্লুসিভ রিপোর্টার: জোবাইর চৌধুরী |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন