advertisment

advertisment
বিজ্ঞাপন দিন

ব্রেকিং নিউজ

ইচ্ছে ডানা এবং বাল্য বিয়ে!

কিছুদিন থেকে ইউনিসেফ বাংলাদেশে বাল্য বিয়ে বন্ধ করার জন্য এবং মেয়েদের উচ্ছ্বল কৈশোরকে অবাধে কাটানোর একটা প্লাটফরম তৈরীর লক্ষ্যে ইচ্ছে ডানা নামক একটা নাটক প্রচার করছে। বেশ কয়েকটা পর্বে ভাগ করে প্রচারিত এই নাটকে মেয়েদের অনুপ্রাণিত করা হয়েছে কিভাবে পরিবার ও সমাজের বাঁধা ডিঙ্গিয়ে খেলার মাঠ থেকে শুরু করে সব জায়াগায় তার ইচ্ছের নিরঙ্কুশ প্রতিফলন ঘটানো যায়। ইউনিসেফের এই উদ্যোগের সফলতা-নিষ্ফলতা কিংবা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে সরাসরি কোন মন্তব্য আমি করছিনা, তবে কিছু প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই মনে উকি দেয়...।
বাল্য বিয়ে বন্ধ করার এই মহাসমারোহ প্রচারণা থেকে মেয়েদের মনে "বিয়েভীতি" কিংবা "বিয়ের প্রতি অনাগ্রহ" এমন কিছুটাই কি বেশী প্রভাব ফেলছেনা? ফেললে সেটার দায়ভার কতটুকু নিতে পারবে ওরা?

কোটেশন মার্কে দেয়া শব্দ দুটোর ব্যাখ্যা করছি, তার আগে একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি? আমাদের সাথে পড়ুয়া এক মেয়ে। মাস্টার্সে যেহেতু পড়ছে, সেহেতু বাল্য বিয়ের রেঞ্জ থেকে যে বের হয়েছে সে ব্যাপারে আশাকরি কারো দ্বিমত থাকবেনা। সম্প্রতি ওর বাবা-মার একটা দুশ্চিন্তার বিষয়ে আমাদের সাথে সে শেয়ার করতে গিয়ে বলে যে ওর বিয়ে দেয়া নিয়ে ওনারা খুব টেনশনে আছেন, কিন্তু ওনাদেরকে দুশ্চিন্তা মুক্ত করার জন্য সে কিছুই করতে পারছেনা। তার কারন হিসবে কয়েকটা ফ্যাক্টর উঠে এসেছে ওর আলোচনায়
.যেসব প্রস্তাব আসছে, তাদের সবার বয়সই অনেক বেশী...অথচ ২৭-৩০ বছরের কাউকে সে পছন্দ করতে পারছেনা কিন্তু তার নিজের বয়স এখন ২৬ চলছে! 
.বিয়ের ব্যাপারে একটা ভীতি কাজ করে সেটা হল বিয়ে মানেই ও মনে করে একটা পরাধীন জীবন! 
.বয় ফ্রেন্ডের চেয়ে বিয়েটা বেশী আগ্রহের হতে যাবে কেন?

হুম...এসব সমস্যা কি কোন "ইচ্ছে ডানায়" প্রতিফলিত হবে? কিংবা তার প্রতিকার?

"ইচ্ছে ডানায় খুব হৃদয় বিদারক করে দেখানো যায় যে, কিশোরী মেয়েটারও খুব ইচ্ছে করে ফুটবল নিয়ে মাঠে খেলতে, উচ্ছ্বল আনন্দে ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরে বেড়াতে...কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে যে তার আরো অনেক কিছুই ইচ্ছে করে সেসব কি "ইচ্ছে ডানায়" উঠে আসে? ইউনিসেফের ওসব নজরে আসেনা বলেই স্কুল ছাত্রের ব্যাগে পাওয়া যায় বিশেষ ব্যাবহারের বেলুন, হুড ফেলানো রিক্সাগুলো কিংবা পার্কগুলোর দিকে চোখ মেলেই তাকানো যায়না কিশোর-কিশোরীদের নির্লজ্জতায় কিংবা তাশফিয়া আমিনরা লাশ হয়ে পড়ে থাকে সাগরের পাড়ে।"

আমার আলোচনা থেকে হয়ত এমনটা মনে হতে পারে যে আমি বাল্য বিয়েকে সমর্থন করছি। কিন্তু না। এবং ইউনিসেফের উদ্যোগকেও যে দোষারোপ করছি তাওনা। শুধু এটাই বলতে চাচ্ছি যে, "ইচ্ছে ডানা" তৈরীর চেয়েও জরুরী কিছু কাজ পড়ে আছে ইউনিসেফের জন্য। ইচ্ছে ডনার সুফল বয়ে আনার মত পরিবেশটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধের মত করেই প্রাপ্তবয়ষ্কদের বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হবে। আচ্ছা, ব্যাপারটা কি এমন যে, বিয়ে হলেই আর মেয়েরা পড়াশোনা করতে পারবেনা? মেয়েদের সামনে এগিয়ে যাবার প্রতিবন্ধক হিসেবে, পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবার প্রতিবন্ধক হিসেবে বিয়েটাকেই কেন একমাত্র দায়ী করা হবে? বিয়ের পরেও যাতে মেয়েরা পড়াশোনা করে স্বাবলম্বী হতে পারে, উচ্চ শিক্ষত হতে পারে সে বিষয়ে আলাদা কোন ফ্যাসিলিটি, কিংবা উৎসাহ যোগানোর ব্যাবস্থা কি ইউনিসেফ কিংবা সরকার নিয়েছে? আর নিচ্ছেনা বলেই মেয়েটা উচ্চ শিক্ষার জন্য নিজেকে বিয়ে থেকে বিরত রাখছে আর তার ইচ্ছেগুলো ডনা মেলছে পার্কের কোনায় কোনায় নোংরা যায়গাগুলোতে কিংবা নিষিদ্ধ হোটেলগুলোতে। এসব কিছু করতে গিয়ে পদে পদে বাস্তবতার হাতে মেয়েটির স্বপ্ন লুট হয়, একটু সুখের জন্য এর ওর কাছে নিজের পবিত্রতাকে বর্গা দেয় আর শেষ-মেষ হয়ে পড়ে বিয়ে বিমুখ। এসব কি শুধুই বলার খাতিরে বলা? মোটেই না...সভ্য সমাজের ঠোটের চামড়ায় আটকে পড়ে এসব কথা পুরোপুরি বেরুতে না পারলেও এসব গুঞ্জন আমরা হরহামেশাই শুনতে পাই।

সেদিন শাটলে করে ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলাম। মুখোমুখি সিটে বসা তিনটা মেয়ে। ওদের একজনের বাসা থেকে ফোন এসেছে। বাসার কাজের মেয়েকে ফোন দিয়ে বলে দিচ্ছে ওর অসুস্থ বাচ্চাটাকে কখন কি ওষুধ খাওয়াতে হবে। একটা টেনশন নিয়েই সে পরীক্ষার হলে যাচ্ছে, ঐদিন ওর পরীক্ষা ছিল বলে। আমাদের বিশ্ববদ্যালয়ে এইতো সেদিন অবিবাহিত কাপলদের জন্য ফ্রী রিক্সা রাইড দেয়ার জন্য "রবি" কোটি কোটি টাকা খরচ করতে একপায়ে খাড়া হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এমন কোন উদ্যোগ কি নেয়া যেতনা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল ছাত্রীরা বিবাহিত এবং বাচ্চার মা তাদের জন্য এবং বাচ্চার জন্য এমন কিছু আলাদা ফ্যাসিলিটি নিশ্চিত করা, যাতে  তার বাচ্চাটা কাজের মেয়ের কাছে রেখে আসতে না হয়? আমাদের পরিবেশ হয়ত সেটাকে হাস্যকর বানাবে, কিন্তু সেটা অনেক বেশী প্রয়োজন ছিল। অথচ বিশ্ববদ্যালয় পড়ুয়া কোন মেয়েই কিন্তু বাল্য বিয়ের আওতায় পড়েনা।

বাল্য বিয়ে সমাজের জন্য অবশ্যই  ক্ষতিকর, তারচেয়েও বেশী ক্ষতিকর বিয়ে বিমুখতা এবং এবং অবাধ নোংরামি। তাই দুটোর মধ্যে ব্যালেন্স করেই সমাজকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। তবেইনা ইচ্ছেরা ডানা মেলবা মুক্ত আকাশে, আর প্রতিটা মানব সত্ত্বা খুঁজে পাবে তার আসল সত্ত্বাকে...।











লেখক:
মুহাম্মদ ইমরানুল কবির
ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং(ইইই), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
চেয়ারম্যান, স্বপ্নকুঁড়ি।
ই-মেইল: emranapece@gamil.com

কোন মন্তব্য নেই