বাঁশখালী জনপদ সত্যপ্রকাশে আপোষহীন

বিজ্ঞাপন দিয়ে সাথে থাকুন

test

"কণ্ঠরোধ অ্যাক্ট অ্যাকশান"|| জসিম উদ্দিন মনছুরি

জসিম উদ্দিন মনছুরি::::

জঙ্গিতে ভরে যাচ্ছে দেশটা। জঙ্গিদের উৎপাত যে হারে বেড়েছে, তাতে অদূরে দেশ জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এত দমনের পরেও যদি জঙ্গিরা বাড়বাড়ন্ত হয়, তাহলে তো দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। যাদেরকে জঙ্গি বলা হচ্ছে ওরা কিন্তু সংঘবদ্ধ, সুশৃঙ্খল সাংগঠনিক কাঠামোতে বেড়ে ওঠা শিষ্ট মানুষ। তারা আল্লাহঅলাও। তাদের দমিয়ে রাখা অত সহজ নয়। জঙ্গি জঙ্গি খেলে তথাপি তাদের রুখে দিতে হবে। এ নিয়ে রুদ্ধশ্বাস বৈঠক চলছে।

সিভিল সোসাইটি : ওদের সভা-সমাবেশ এবং প্রকাশ্য বিচরণ নিষিদ্ধ করে দেয়া হোক। দেখবেন দমে যাবে। 

কর্ত্রী : ঠিকই তো। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে একজনকে বন্দি করলে হাজারজন জন্ম নিচ্ছে। কোন নেশায় আর কিসের মোহে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আবার প্রজাপতি হয়ে ফিরে আসছে তারা, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। এটা কোন জাতের সংগঠনরে বাবা! যতই দমন-পীড়ন করছি তত তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মানুষের একটা বদস্বভাব হচ্ছে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি টান, মোহ। 

সিভিল সোসাইটি : তাদের সব প্রকাশনা ব্যান্ড করে দেন। কোনো লাইব্রেরিতে তাদের বইপুস্তক যেন না থাকে। তাদের সব ধরনের প্রকাশনা পুড়িয়ে ফেলা হোক।

কর্ত্রী : তাহলে সিদ্ধান্তে আসি, ইসলামি বইগুলোকে জঙ্গি বইয়ের তকমা লাগিয়ে দেই আর সমস্ত মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা করি। যার কাছে এই  বই পাওয়া যাবে তাকে অ্যারেস্ট করে গারদে ভরার ফরমান জারি করে দিই। তোমরাও যথাযথ পদক্ষেপ নাও। এই জঙ্গি দলের উত্থান বাড়তে দিলে ভবিষ্যতে আমাদের মসনদ হারানোর শঙ্কা আছে। 

সিভিল সোসাইটি : ঠিক বলেছেন ম্যাডাম। তবে আমাদের বাপ-দাদার ধর্মও এখন মানুষ আর খায় না। এসব কিচ্ছা কাহিনিতে মানুষের মন ভরে না; এ আমরা বুঝি। তবু উপায় নেই, ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে নিষ্ঠুর হতে হবে। নিঠুর না হলে আমাদের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ দাড়িয়ে যাবে। তখন সামাল দেয়া কঠিন হবে।

কর্ত্রী : আমাদের গোয়েন্দা বিভাগকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তোমরা তো আছো। সবাই মিলে জঙ্গিদের প্রতিহত করবো, ইনশাআল্লাহ। 

এভাবেই হলো কথিত ধর্মীয় উগ্রবাদীদের নিশ্চিহ্ন করার প্ল্যান। থানায় থানায় ফরমান জারি হয়ে গেলো। যেখানে দাড়ি টুপিওয়ালাদের দেখা যাবে তাদেরকে ধরে আনতে হবে। জেলে ভরতে হবে। মোল্লাদের নারী কেলেঙ্কারিতে ফাঁসাতে হবে। চরিত্র হনন করতে হবে। সবখানে একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যাতে ভয়ে নতুন করে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করতে না পারে। ভুলে গেলে চলবে না, এদেশের মানুষ ধর্মকে ভালোবাসে। ধর্মে আঘাত করা যাবে না। একটি দলকে আমাদের ব্যানারে নিয়ে আসতে হবে। উনারা শুধু আমাদের গুণগান গাইবে। বিনিময়ে তাদেরকে মসজিদ, মক্তব, মাদরাসায় চাকরি দেয়া হবে।

শুরু হয় দমন-পীড়ন। ইসলামি বই এমনকি কুরআন-হাদিসের বইও যার কাছে পাওয়া যাচ্ছে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এসবকে গুরুত্ব দিয়ে পত্রিকায় বড় বড় অক্ষরে ছাপা হচ্ছে- এগুলো নাকি জেহাদি বই। শিরোনাম করছে জেহাদি বইসহ জঙ্গি দলের অমুক তমুক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অমুক জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। নাশকতার জন্য তারা গোপনে সঙ্ঘবদ্ধভাবে একত্রিত হয়েছিলো। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও জেহাদি বই পাওয়া গেছে। 

এভাবে চলছে দেশের রাজনীতির হালচাল। রাজনীতি মানে সোজাকথায় দমননীতি। বিচ্ছিন্ন কিছু কিছু সত্যিকারের জঙ্গি যে নেই, তা নয়। তবে তারা বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন আর সংখ্যায় নগন্য। তাদের অধিকাংশ অনেক আগেই গ্রেফতার হয়েছে। তাদের উগ্রবাদিতা ও ধর্মান্ধতার কারণে গ্রেফতার ও শাস্তি জনগণের কাঙ্ক্ষিত ছিলো। জঙ্গি দমনের নামে এখন যা হচ্ছে তাতে জনগণ মনে করে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীকে ঘায়েল করা হচ্ছে। এটা কর্তৃপক্ষ না বললেও জনগণের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে জনগণকে নিয়ে খেলে থাকে। ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে জনগণ রুষ্ট হলেও প্রতিবাদ করার হিম্মত কারোরই নেই। ইতোপূর্বে যারাই সাহস দেখিয়েছে তাদেরকে জেলে যেতে হয়েছে। হতে হয়েছে গুমের শিকার। ফলে তাদের অস্তিত্ব নিঃস্ব হয়ে গেছে। বৃষ্টি আসলে যেমন সব ভিজে যায়, তদ্রুপ আন্দোলন আসলে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যায় না। অলিতেগলিতে এমনকি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সর্বত্রই আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। এটাই নাকি বাস্তবতা।

কর্তৃপক্ষের অন্যায়ের প্রতিবাদে ধর্মভিত্তিক একটি দল প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। সমাবেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ শামিল হয়। কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। দাড়ি টুপিওয়ালা জঙ্গিদের পক্ষে এত লোকের সমাগমে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। ধর্মভিত্তিক দলটি আলোচনায় বসতে তাদের আমন্ত্রণ জানালে কর্তৃপক্ষ কানেই তোলেনি। তাদের এ কর্মসূচি ছিলো মূলত দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারও। তারা ঘোষণা দিয়ে বসে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়ছে না।

আবারও ডাকা হয় সিভিল সোসাইটিকে। গোপনীয়তা রক্ষা করে মিটিং আহ্বান করা হয়। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় গভীর রাতে ব্রাশ ফায়ার করে মোল্লাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে। সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে আজ্ঞাবহ রক্ষীবাহিনী। গভীর রাতে ব্রাশ ফায়ারের আওয়াজ পাওয়া যায়। মুহুর্মুহু গুলিতে দলায় দলায় পড়ছে লাশ। কেউ কেউ পালানোর চেষ্টা করছে। সবদিকে পথ রুদ্ধ । যাওয়ার কোনো পথ নেই, মাঝখানে দেয়াল হয়ে আছে লাশের স্তূপ। যারা প্রাণে বেঁচেছিলো তারা কোনোমতে পালাতে সক্ষম হয়। লাশগুলো বিভিন্ন স্থানে রাতের অন্ধকারে গণকবর কিংবা ছোট ছোট করে কেটে সাগরে ফেলে দেয়া হয়। এই বীভৎস ঘটনার পর কেউ সাহসী হয় না রাস্তায় নামতে। বিরোধী মত দমনের সফলতায় সিভিল সোসাইটি কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানায়। জনরোষ বাড়তে থাকে। জনপ্রিয়তা তলানিতে নামছে কর্তৃপক্ষের। তাতে কি, মেন্ডেট নিলেই তো দরকার জনপ্রিয়তা। একবার যখন ক্ষমতায় এসেছি, ক্ষমতা থেকে তাড়াবে কে? কর্তৃপক্ষের মেজাজ ফুরফুরে। এখন আর আন্দোলন হয় না। প্রতিবাদ চলে না। আল্লাহর নামে স্লোগান হয় না। একদম কবরের মতো অবস্থা তাদের। মানুষ আছে কিন্তু মুখে কথা নেই। তারা ভাবছে এদেশে তাদের সমকক্ষ আর কোনো দল নাই। একে একে এদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলে নিচ্ছে তারা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃপক্ষের কব্জায় নিয়ে আসা হয়। সিভিল সোসাইটি ও কর্তৃপক্ষ মিলে প্রতিষ্ঠানগুলো ভাগাভাগি করে নেয়। চাকরিচ্যুত করা হয় হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। কর্তৃপক্ষের বিকৃত মানসিকতায় ইসলাম নাই হবার পথে। এভাবে করে তারা এখানে সেকুলারিজমের জমজমাট হাট বসিয়েছে। এখন তারা অনেকটা নির্ভার। জঙ্গি জঙ্গি খেলে দেশ থেকে ধর্মীয় অনুষঙ্গ ঝেটিয়ে করেছে বিদায়। তৎস্থলে ধর্মহীন এক বর্বর জাতির আস্ফালন দেখেছে জাতি। তাদের বর্বরতায় সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা টুঁশব্দও করার রা ছিলো না। যাদের অন্তরে আল্লাহপ্রেম তাদেরকে দমন করার কোনো অস্ত্র আজও অনাবিষ্কৃত। চূড়ান্ত বিজয় সত্যেরই হয়। হলোও তাই। অকল্পনীয় এক বিজয়।

মুহূত্বে পাল্টে যেতে থাকে চিত্র। আল্লাহ বিজয় দিলে রুখে দেবার সাধ্য কার! এ বিজয় যেন আসমান থেকে আসছে। আবাবিলের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে থাকে তারা। নারায়ে তাকবির স্লোগানে জমায়েত হতে থাকে লক্ষ লক্ষ বিপ্লবী। শুরু হয় আন্দোলন। আন্দোলনের তীব্রতায় জ্ঞানশূন্য হয়ে যাবার জোগাড় তাদের। আবারও কল করা হয় সিভিল সোসাইটিকে। এবার মরণকামড় দিতে হবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। ক্ষমতা বেহাত হতে দেয়া যাবে না। ছাত্র-জনতা মরণপণ লড়াই করে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে আনার সিদ্ধান্তে অনড়। তারা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায় সমুখে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সামনের দিকে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। তাই তো জনতা সামনের দিকে  আগাবেই। বিপ্লবীরা এগিয়ে যেতে থাকে মহাবিপ্লবে, নিশ্চিত মরণকে মেনে। তাদের সাথে যোগ হয় লক্ষ লক্ষ আমজনতা। কতৃপক্ষের জঙ্গি খেলায় জঙ্গিদেরই জয় হয়। জয় হয় ধর্মের। জয় হয় মানবতার। এতদিন তারা যাদেরকে জঙ্গি বলে আসছিলো জনগণ তাদেরকে ধর্মসহিষ্ণু বীর হিসেবে গ্রহণ করে। টেনে নেয় বুকের মাঝে। বিজয়ী বিপ্লবীরা গাণিতিকসূত্রে কুড়ি আর চারের যোগফলে পরিণত হয়।

জসিম উদ্দিন মনছুরি

কবি ও কথাসাহিত্যিক




বাঁশখালীজনপদ২৪.কম'অনলাইনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র,  রেখাচিত্র,  ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। যদি কপি করতে হয় তাহলে অনুমতি নিতে হবে অথবা কন্টেন্টের নিচে ক্রেডিট দিয়ে দিতে হবে।

বাঁশখালীজনপদ২৪.কম' বাঁশখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ-সম্ভার, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্যশিল্প নিয়ে শেকড় থেকে শিকড়ের অনুসন্ধানে সবসময় সচেতন। বাঁশখালীকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। তাই, আমাদের সাথে থাকুন। সব খবর সবসময় সবার আগে পেতে ফেইসবুক পেইজ-এ লাইক দিন।

আপনার মেইল পাঠাতে:

banshkhalijanaphad24@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.